শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

মানবতার কল্যাণে ধর্মের আহ্বান

ফকির ইলিয়াস
একটা গভীর আঁধারের দিকেই নিমজ্জিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এই আঁধার থেকে পরিত্রাণ দরকার। ধর্মের নামে নানারকম অপতৎপরতা চালিয়ে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত রয়েছে। আমরা খবরে জেনেছি, বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে ব্লগ-ফেসবুকে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আমরা কয়েক মাস আগেই দেখেছি, চট্টগ্রামের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা করা হয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কেন এই হামলা? কারা এই হামলা করছে? ধর্ম তো কখনো লুটপাটের স্বাধীনতা দেয়নি। তাহলে এক ধর্মাবলম্বীদের আক্রমণ কেন অন্য ধর্মের মানুষের ওপর? আমরা জানি মানসিক শান্তি বলতে মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে অর্জিত শান্তিকে বুঝায়। অগাধ জ্ঞান এবং নিজেকে জানার মাধ্যমে মতভেদ দূর ও চাপ প্রয়োগের মুখোমুখি হয়ে তা অর্জন করতে হয়। অনেকেই শান্তিতে থাকাকে সুস্থ ও সভ্য মানুষের প্রতিচ্ছবি এবং চাপ ও দুশ্চিন্তার বিপরীত হিসেবে মনে করে থাকেন। সচরাচর মানসিক শান্তিকে পরম সুখ ও সুখী জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে গণ্য করা হয়।

চাপের প্রভাব, বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে মানসিক শান্তি তৈরি হয়। কিছু কিছু সমাজে মানসিক শান্তিকে সচেতনতা অথবা শিক্ষার প্রতীকরূপে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সাধনা, প্রার্থনা, মন্ত্র, বা যোগ ব্যায়ামের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই এ শান্তি অর্জন করা সম্ভব। অনেক আধ্যাত্মিক অনুশীলনে নিজেকে জানা যায়। সনাতন ধারায় সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মে মানসিক শান্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। শান্তির পক্ষে আমরা অনেক মহামানবের বাণী স্মরণ করতে পারি। এখানে কিছু বাণী প্রণিধানযোগ্য।

“জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”-স্বামী বিবেকানন্দ। “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই”-চ-ীদাস। “মানুষ আপন টাকা পর, যতো পারিস মানুষ ধর”-শ্রী শ্রী ঠাকুর অনকুলচন্দ্র। ওপরের বাক্য তিনটি হিন্দু ধর্মের তিনজন মহামানবের। হিন্দু ধর্মের অসংখ্য মহামানব এরকম হাজার হাজার বাণী দিয়ে গেছেন। যা কোনো বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য নয় বরং সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে। হিন্দুরা সত্যই বিশ্বাস করেন, প্রত্যেক জীবের মধ্যে ঈশ্বর আছেন আর তাই তারা যখন কারো সঙ্গে পরিচিত হয় তাকে মাথা নিচু করে নমস্কার জানায় কারণ প্রত্যেকের ভেতরে থাকা ঈশ্বরকে তারা শ্রদ্ধা করে। হিন্দু ধর্মের উদারতার একটি বড় প্রমাণ হিন্দুরা কখনই বলে না, তাদের ধর্ম অন্য ধর্ম থেকে শ্রেষ্ঠ। কারণ তারা বিশ্বাস করে “আপনাকে যে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়”। হিন্দুরা প্রত্যেক মানুষকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করেন বলেই কোনো হিন্দু মহামানব কখনই অন্য ধর্মের কোনো মানুষকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের জন্য প্রভাবিত করেনি বা এই রকম প্রলোভন দেখায়নি যে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলে তার জন্য স্বর্গ নিশ্চিত।

এবার আসা যাক ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে। আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করি। সমাজই আমাদের জীবনের প্রথম বিচরণ ক্ষেত্র। ইসলাম ধর্ম, সমাজ গঠনে ব্যক্তির সৎ আচরণ, সৎ চরিত্র, সৎ স্বভাব এবং নম্রতা, কোমলতা ও সৌজন্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। জীবনের প্রকৃত বিকাশ সমাজ সংগঠনের মাধ্যমেই প্রথম প্রকাশিত হয়। ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণ যতো উন্নত হবে, সামাজিক মর্যাদাও ততো বেশি প্রকাশিত হবে। সামাজিক জীবনে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেছেন : মানুষের সঙ্গে সৎ স্বভাব ও আচরণের সঙ্গে কথাবার্তা ও আলাপ করো। তিনি আরো বলেছেন, আল্লাহপাক আমাকে মানুষের সৎ স্বভাব, প্রকৃতি এবং আচরণের সৌন্দর্যরাশিকে পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ‘লাকাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহি উস্ওয়াতুন হাসানাতু।’ অর্থাৎ আল্লাহর রাসুলেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। নবী করিম (সাঃ)-এর পূর্ণ জীবনটাই ছিল উত্তম আদর্শের প্রতীক। সমাজ জীবনে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সামাজিক সম্পর্ক উন্নততর হবে এবং সমাজ জীবনে নেমে আসবে অপার শান্তি ও কল্যাণ। শুধু তাই নয়, পার্থিব ও পারলৌকিক জীবন হবে সৌন্দর্যম-িত। মূলত ব্যক্তিচরিত্রই সমাজ কল্যাণের প্রথম সোপান। মানব চরিত্র সুষ্ঠু ও সত্যনিষ্ঠভাবে সমাজে বিকশিত হলে সমাজ হবে কল্যাণকামী। এবার আমরা শুনতে পারি গৌতম বুদ্ধের কিছু বাণী। তিনি বলেছেন, প্রথমত মন থেকে সকল ভ্রান্তি দূর করতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে নিত্য ও অনিত্য বস্তুর মধ্যে প্রভেদ।

দ্বিতীয়ত সংকল্প- সংসারের পার্থিব বন্ধন থেকে মুক্ত হবার আকাক্সক্ষা। যা কিছু পরম জ্ঞান তাকে উপলব্ধি করার জন্য থাকবে গভীর আত্মসংযমের পথ ধরে এগিয়ে চলা। তৃতীয়ত সম্যক বা সত্য বাক্য। কোনো মানুষের সঙ্গেই মিথ্যা না বলা হয়। কাউকে গালিগালাজ বা খারাপ কথা বলা উচিত নয়। অন্য মানুষের সঙ্গে যখন কথা বলবে, তা যেন হয় সত্য, পবিত্র আর করুণার পূর্ণ। চতুর্থত সৎ আচরণ- সকল মানুষের উচিত ভোগবিলাস ত্যাগ করে সৎ জীবনযাপন করা। সমস্ত কাজের মধ্যেই যেন থাকে সংযম আর শৃঙ্খলা। এছাড়া অন্য মানুষের প্রতি আচরণে থাকবে দয়া-ভালোবাসা। পঞ্চমত সম্যক জীবিকা- অর্থাৎ সৎভাবে অর্থ উপার্জন করতে হবে এবং জীবন ধারণের প্রয়োজনে এমন পথ অবলম্বন করতে হবে যাতে রক্ষা পাবে পবিত্রতা ও সততা। ষষ্ঠত সৎ চেষ্টা- মন থেকে সকল রকম অশুভ ও অসৎ চিন্তা দূর করতে হবে। যদি কেউ আগের পাঁচটি পথ অনুসরণ করে তবে তার কর্ম ও চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই সংযত হয়ে চলবে। সপ্তম সম্যক ব্যায়াম অর্থাৎ সৎ চিন্তা- মানুষ এই সময় কেবল সৎ ও পবিত্র চিন্তা-ভাবনার দ্বারা মনকে পূর্ণ করে রাখবে। অষ্টম এই স্তরে এসে মানুষ পরম শান্তি লাভ করবে। তার মন এক গভীর প্রশান্তির স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

বাঙালির সমাজ অনেক ধর্মের সংমিশ্রণে পরিচালিত। এসব ধর্মের স্বাধীনতা, অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নীতিনির্ধারণ ও নৈতিকতার পক্ষের কিছু কথা এখানে বলা দরকার। জগতে যদি ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত-এর অস্তিত্ব আগে স্বীকার করা না হয় তাহলে সব কিছুই মিথ্যা। মানবসমাজ আগে ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত চিনতে শিখেছে এবং পরবর্তীতে ধর্ম এসে তা স্বীকার করে নিয়েছে। সমাজের প্রচলিত উচিত-অনুচিতের কিছু ধ্যান-ধারণা প্রায় সকল ধর্মই মেনে নিয়েছে। কেননা তা ছিল তৎকালীন সমাজের দাবি। সমাজবিমুখ কোনো ধর্ম পৃথিবীতে দেখা যায় না। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেছে যে, চুরি করা অনুচিত এবং তা মন্দ কাজ। তারপরও চোর আছে এ সমাজে। কিন্তু কোনো ধর্মই চুরি করাকে বৈধ বলে স্বীকার করেনি। অনুরূপভাবে মিথ্যা কথা বলাটা সমাজের চোখে যেমন অপরাধ তেমনি ধর্মের চোখেও পুণ্যের কাজ নয়। অর্থাৎ আসল কথা হলো, নৈতিকতার যতোটুকু সার্বজনীনতা রয়েছে ধর্মেরও আছে তার পরিপূরক হিসেবে। নৈতিকতার কিছু মানদ- সবখানে প্রায় এক হলেও ধর্মে-ধর্মে প্রভেদ রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ এক দেশে এক মাটিতে বাস করেও মুসলমানদের জন্য কিছু পশু খাদ্য হিসেবে খাওয়া হালাল বা পাপ কাজ না হলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সেই পশু ভক্ষণ করা মহাপাপের কাজ। কিন্তু সত্য কথা বলা, চুরি না করা উভয় ধর্মেরই কথা। এখানে কোনো মতপার্থক্য নেই। অর্থাৎ ধর্ম আগমনের বহু পূর্বে নৈতিকতার, মানবতার আবির্ভাব। ভালো-মন্দের ধারণা প্রকারান্তরে পাল্টে পাপ-পুণ্যে পর্যবসিত হয়েছে। মানবতা ও নৈতিকতা ধর্মের পূর্বগামী।

এখন আইন নিয়ে কিছু বলা যাক। আইনের জন্ম বা প্রচলন নিঃসন্দেহে ধর্ম ও নৈতিকতার পরে হয়েছে। মানুষ যখন রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছে তখনই রাষ্ট্রের অনুগামী হিসেবে আইনের জন্মলাভ ঘটেছে। মানুষ যখন পরির্পূণ সমাজিক জীবন-যাপন করতে শুরু করেছে এবং সমাজের বেশিরভাগ মানুষ বা ক্ষমতাধর মানুষরা সমাজ বা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে বিধিবিধান বা নিয়ম-কানুন সৃষ্টি করেছেÑ তাই আইন। আইন কোনো সমাজ বা নির্দিষ্ট স্থানের নিয়ম-কানুন বা বিধিবিধান। স্থানভেদে এর অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আইন মানুষকে এ জগতেই শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজ বা রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে এর নীতি হলো বল প্রয়োগ। রাষ্ট্র তার কিছু কায়দা-কানুন দ্বারা জনসাধারণকে বেআইনি কাজ থেকে বিরত রাখে সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে। আইন অমান্য করলে তাকে বিচারের আওতায় এনে বেআইনি কাজের জন্য শাস্তি দেয়া হয়।

মানব কল্যাণের জন্য যে তিনটি উপাদানÑ আইন, ধর্ম ও মানবতা রয়েছে তার প্রত্যেকটিই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অপরিহার্য। আইন, ধর্ম ও মানবতাÑ এই তিনটি উপাদানই মানুষের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে কোনটি প্রয়োজনীয় আর কোনটি অবশ্যই পালনীয় আর কোনটি বা অল্প-প্রয়োজনীয় তা নির্ধারণ করবে এক একজন ব্যক্তি-মানুষ। তবে আইন পালন করা সকল ব্যক্তি-মানুষের জন্য ব্যাধ্যতামূলক সকল গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাষ্ট্রে। এখানে আইন লঙ্ঘনকারীকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো খুব জরুরি বিষয়। এবং আইনকে সমর্থন করাও প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।

দুই. একজন শিল্পীও তার নান্দনিক সৃষ্টিতে বিশ্বাস করেন। তাও তার এক ধরনের উপাসনা। ধর্ম বলতে আধুনিককালে মানবসমাজে আমরা যে ধরনের বিশ্বাসকে বুঝি, প্রাগৈতিহাসিক মানবসমাজে তার অস্তিত্ব না থাকার কারণে শিল্পকলার সৃষ্টি স্বাভাবিক কারণেই সেসময় আশা করা যায় না। কিন্তু প্রাচীন মিসরীয় সমাজের প্রতিটি অংশেই ছিল ধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব। সেখানে পুরোহিতদের সহায়তায় শাসক বা ফারাওরা ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং দেবতার মতোই পুজনীয়। মিসরীয়রা মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী ছিল, তাই তারা পুনর্জীবনের জন্য মৃতদেহ সংরক্ষণ করতোÑ যা মমি নামে পরিচিত। একই উদ্দেশ্যে ফারাওদের সমাধি বা পিরামিডের দেয়ালগাত্রে তারা এঁকে রাখতো তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও ধর্মগাঁথা। প্রাচীন মিসরীয় সমাজে ধর্মের প্রভাব এতোই ব্যাপক ছিল যে তাদের শিল্পকলা প্রতিটি আঙ্গিক থেকেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের শৃঙ্খলে। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন মিসরীয় চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য ইত্যাদির কথা বলা যায়।

এটি সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান যে প্রাচীন মিসরীয় সমাজের সকল কিছুই ধর্মকে ঘিরে আবর্তিত হতো, তাই সে সময়ের মিসরীয় শিল্পকলা ছিল ধর্মের অনুজাত অনুষঙ্গ বিশেষ। মেসোপটেমীয়দের জীবনেও ধর্মের ছিল বিশিষ্ট স্থান। তবে তাদের ধর্মবোধ ছিল মূলত ইহলৌকিক জীবনের উন্নতি সাধনের নিমিত্তে। অনুমান করা হয় মৃত্যু-পরবর্তী জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলÑ মৃত্যুর পরে আত্মা কিছুকাল পরকালে অবস্থান করে চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। তাই তাদের সমাজে ধর্মীয় আচারাদি ছিল জাগতিক উন্নয়ন কামনা কেন্দ্রিক। পুরোহিতদের কড়া ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পরিচালিত হতো প্রাচীন মেসোপটেমীয় সমাজ। আর শাসকরাই হতেন সেখানে প্রধান পুরোহিত। ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত মেসোপটেমীয় সমাজের শিল্পকলাও তাই ধর্ম কেন্দ্রিক ছিল। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে তাদের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শনসমূহ। কিংবা প্রার্থনারত বিভিন্ন ভঙ্গীর সম্রাটের মূর্তি, যেমন গুডিয়া। মেসোপটেমীয় সমাজের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে যেহেতু খুব বেশি ধারণা পাওয়া যায় না, তাই তাদের প্রথমদিকের ভাস্কর্যে ব্যবহৃত বৃহদাকৃতি চোখ কোনো ধর্মজাত নাকি সম্মোহন জাতীয় কোনো প্রকার জাদু বিশ্বাসজাত তা বলা দুষ্কর। তবে মেসোপটেমীয় সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাসজাত বিপদ থেকে রক্ষাকারী বৃষ বা ষাঁড়ের উপস্থিতি অসংখ্য শিল্পকর্মে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিলক্ষিত হয়। যা হতে ধারণা করা যায় মেসোপটেমীয় শিল্পকলায় ধর্মের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তবে এটিও প্রতীয়মান হয় যে তাদের সমাজ বা শিল্পকলা মিসরীয়দের মতো ততোটা কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত ছিল না। ফলে সেখানে অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ শিল্পের উপস্থিতিও পরিলক্ষিত হয়।

মানুষ নিজেকে ভালোবেসেছে। আর ভালোবেসেই ধর্ম ও শান্তির আরাধনা করেছে যুগে যুগে। এর ধরন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য এক। একজন বাউল সাধক ফকির আরকুম শাহ তাঁর মরমি গানে বলেছেন, ‘সকল মহাজন যাইতা একই আড়তদারের ঘরে/ প্রাণনাথ আমি কিলা যাই প্রেমের বাজারে’। এই যে আকুতি, তা সার্বজনীন। আর তাই মানুষ ধর্মে ধর্মে মানবতাকেই প্রাধান্য দিয়েছে সব কিছুর আগে।

ফকির ইলিয়াস : কবি, সাংবাদিক।
ভোরের কাগজ : শনিবার, ১৬ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন