সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

নষ্ট রাজনীতির কী নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ

৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় প্রকাশের পর শাহবাগ চত্বরে তরুণ প্রজন্ম জমায়েত হয়ে ফাঁসির দাবি তুলে। তারপর থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। রাতদিন শাহবাগে থেকে সাধারণ জনগণ, ছাত্র, তরুণ প্রজন্ম নাচে-গানে, কবিতায়-নাটকে এক অবিস্মরণীয় অহিংস আন্দোলনের ইতিহাস গড়ে। এক দাবি ফাঁসির সাথে যোগ দেয় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও কালক্রমে। কিভাবে সাধারণ জনগণ-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা শাহবাগে জড়ো হয়েছিল তা এ দেশের সকল জনগণ টিভি মিডিয়াতে দেখার সুযোগ পেয়েছে। শাহবাগের পথ ধরে সকল জেলা শহরেও গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠে। সব জায়গাতেই হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যোগ দেয়। একে একে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রজন্ম চত্বরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।
সরকার এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই প্রজন্ম চত্বরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলনের শুরুতে প্রজন্ম চত্বরের সাথে একটি ‘কিন্তু’ যোগ করে সমর্থন জানিয়েছিল। এরপর কিছুদিন তারা অনেকটাই নীরব থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। এরপর বেগম জিয়া গেলেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে। এর মধ্যে সাঈদীর রায় প্রকাশ হলো এবং রায়ে ফাঁসির আদেশ প্রদান করলেন ট্রাইব্যুনাল। রায় প্রকাশের পর থেকেই জামায়াত-শিবির সারা দেশে সন্ত্রাস শুরু করে। জামায়াত-শিবিরের সমর্থনপুষ্ট কিছু অঞ্চলে তারা তা-বের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তারা রাস্তায় বের হয়ে আসে, গাড়ি-ভাংচুর করে, সরকারি অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ বাধা দিতে এলে তারা পুলিশকে আক্রমণ করে, পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে আহত করে। তারা পুলিশ ফাঁড়ি ও থানা আক্রমণ করে এবং নির্দয়ভাবে পুলিশকে হত্যা ও আহত করে। জঙ্গিদের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে, রাবার বুলেট ছুঁড়ে। বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি কর্মীবাহিনী। এক পর্যায়ে জঙ্গি জামায়াত-শিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে আক্রমণ করে অনেক মন্দির এবং ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়। রাজধানীর সঙ্গে কয়েকটি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা হয় কয়েকদিন ধরে। রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়, ট্রেনের বগি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যবাহী যান বাইরে বের করার সাহস হারিয়ে ফেলে। সহিংসতার ভয়াবহতার কারণে আক্রান্ত হিন্দু সম্প্র্রদায়কে পুলিশ সাহায্য করার জন্য ছুটে যেতেও সাহস পায়নি। পুলিশ হামলাকারীদের এমনভাবে ভয় পায় যে, কোনো সহিংসতা মোকাবিলা করার মানসিক শক্তিও অনেক ক্ষেত্রে হারিয়ে ফেলে। একটি ঘটনা পাঠকদের অবগতির জন্য এখানে তুলে ধরছি। কয়েকটি টিভি চ্যানেলে একটি ফুটেজ ছিল, যাতে দেখা গিয়েছে জামায়াতের ডাকা হরতালের দিন বগুড়ার একটি স্থানে ৪ জন পুলিশ একটি মাইক্রোবাসে যাচ্ছিল। হঠাৎ মাইক্রোবাসটির সামনে আসে হামলাকারীর ৩ জন সদস্য। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, হামলাকারীরা ছিল ৩ জন আর সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যা ছিল ৪। তারপরও অবাক হয়ে দেখেছিলাম, মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত নেমে মাইক্রোবাসকে ফেলে রেখে ৪ পুলিশ সদস্যই পিছন দিকে দৌঁড়ে পালালো। হামলাকারী জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার ভয়াবহতা এবং আতঙ্ক এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে, পুলিশ তাদের দেখলেই মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়ে।

জামাত বাংলাদেশে একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হয়েও সহিংসতা করছে জঙ্গিদের মতো; জামাত রাষ্ট্রের সঙ্গে একরকম যুদ্ধ করছে কেননা রাষ্ট্রের অন্যতম রক্ষাবাহিনী পুলিশকে তারা যেখানে যেভাবে পাচ্ছে আক্রমণ করছে, সুযোগ পেলেই হত্যা করছে; জামাত বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, তাদের কথামতো যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত আসামীদের ছেড়ে না দিলে গৃহযুদ্ধ করবে। এমন একটি সহিংস রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।

পাশাপাশি জামাত-শিবির প্রপাগান্ডার আশ্রয় নেয়। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের ব্লগারদের ইসলাম বিরোধী বলে প্রমাণ করতে তারা বিভিন্ন অপকীর্তি চালায়। একসময় ব্লগার রাজীবের বিরুদ্ধে বিশেষ কায়দায় মিথ্যা প্রপাগান্ডার সহযোগী হিসাবে মাহমুদুর রহমানের পত্রিকা ‘আমার দেশ’ এসব মিথ্যা প্রচারণা ছাপিয়ে দেয়। তারপর ইসলামের শত্রু হিসাবে আখ্যায়িত করে ব্লগার রাজীবকে হত্যা করে নর্থ-সাউথের কয়েকজন ইসলামপন্থী ছাত্র। পরিস্থিতি যখন খুবই উদ্বেগজনক তখনই দেশে ফেরেন বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়া। এসেই তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সম্পূর্ণ দোষ পুলিশ এবং সরকারকে দিলেন। পুলিশ পাখির মতো সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে যা তিনি আখ্যায়িত করলেন গণহত্যা বলে। তিনি মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে এসে পুলিশের মোকাবিলা করার আহ্বান জানালেন। জামাত-শিবিরের জঙ্গি কার্যকলাপের কোনো সমালোচনা তিনি করলেন না। জামাত কর্তৃক হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দিরে আক্রমণের কথাও তিনি স্বীকার করলেন না। বেগম খালেদা জিয়ার এই একপেশে বিবৃতি অস্থির পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। পরদিন থেকে জামাত-শিবির এবং সমমনাদের তা-ব ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেল। হাজার হাজার জঙ্গি জামাত-শিবির এবং সমমনা হিংস্র কর্মীবাহিনী আক্রমণ করলো পুলিশ সদস্য, পুলিশের ফাঁড়ি, থানা, সরকারি অফিস, ইউএনও অফিস, পর্যটন কেন্দ্র এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি ও মন্দির নতুন করে। অশান্ত পরিস্থিতির ফলাফলে ৯ জন পুলিশসহ ৬০ জন লোক মৃত্যুবরণ করে। জামাত-শিবির হত্যা করে ব্লগার রাজীবকে। আরও হত্যা করে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক জগৎজ্যোতি তালুকদার, বগুড়ার শিবগঞ্জের পর্যটন মোটেলের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম এবং সাতক্ষীরার প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে। হিন্দু বাড়িতে আগুন এবং উপরে উল্লেখিত হত্যাগুলোসহ পুলিশকে হত্যা সরাসরিভাবে জামাত-শিবিরের কর্মীবাহিনী অথবা তাদের সহযোগীরা করেছে তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে টিভি চ্যানেলের ফুটেজে এবং পত্রিকার পাতায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কখনও শত শত আবার কখনও হাজার হাজার জামাত-শিবির কর্মী একযোগে আক্রমণ করে এবং হত্যাগুলো করে। মামুনের শ্বশুরের বক্তব্য অনুযায়ী ৪-৫ হাজার লোক আল্লার নামে ধ্বনি তুলে মামুনের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। মামুনের স্ত্রী বলেন, তারা তার চোখের সামনেই ঘরের দেয়াল থেকে ইট খুলে নিয়ে সেই ইট দিয়ে মামুনের মাথা থেতলে দিয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুল ইসলাম তার স্ত্রীকে মৃত্যুর পূর্বেই ফোনে জানিয়েছিলেন, তিনি কিভাবে এবং কাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, ব্লগার রাজীবের হত্যাকারীদের পুলিশ শনাক্ত করেছে। প্রমাণিত হয়নি এখনও এমন কয়েকটা হত্যাও জামাত-শিবিরের কাজ বলেই এদেশের মানুষ বিশ্বাস করছে। গোলাম আজমের বিরুদ্ধে সাক্ষী সুরকার-গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ মিরাজ হত্যাও জামাত-শিবিরের কাজ বলেই সকলে মনে করে। এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নিকটবর্তী অঞ্চলে বোমা মারার কাজটিও জামায়াত-শিবিরের কাজ বলেই সকলের ধারণা। যেহেতু গণজাগরণ মঞ্চ তাদের আন্দোলন পরিচালনা করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থে, তাই জামায়াত-শিবির মরণ কামড় দেবে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে সেটা সকলেরই ধারণার মধ্যে আছে।

এতোক্ষণ যেসব ঘটনার উল্লেখ করলাম, তা সুস্পষ্ট এ দেশের মানুষের কাছে। ঘটনার সত্যতা নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দের অবকাশ নেই সাধারণ মানুষের কাছে। কিন্তু দুঃখের সাথেই লক্ষ্য করছি শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে, মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল নিয়ে এবং জামাত-শিবিরের সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ন্যাক্কারজনকভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। প্রেসনোট, সংবাদ সম্মেলন এবং টকশোর মাধ্যমে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী সাহেব এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা দিব্বি বলে যাচ্ছেন যে, পুলিশ গুলি করছে সাধারণ মানুষের উপর, সরকার তাদের লোক দিয়ে সহিংসতা করছে, হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে আগুন দিচ্ছে। তাদের ভাষায়, জামাত-শিবির নয় বরং সরকারের পেটুয়া বাহিনী এই সকল সহিংসতা ছড়াচ্ছে। এমনকি ৭১ টেলিভিশনে একটি সোজা প্রশ্ন করা হয়েছিল জনাব রিজভী এবং প্রাক্তন বিএনপি নেতা জনাব নাজমুল হুদাকে। প্রশ্নটি ছিল যে, তারা মনে করেন কিনা যে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামাত ও বর্তমান মামলায় অভিযুক্তরা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন? উত্তরে দু’জনেই বললেন, যেহেতু তারা ট্রাইব্যুনালের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেননি তাই তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। জামাতের ১৯৭১-এর নৃশংসতা যেমন তাদের মনে নেই তেমনি জামাত-শিবিরের বর্তমান কোনো সহিংসতাও বিএনপির চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে, শাহবাগের গণজাগরণের প্রশ্নে তারা বলছেন, এই তরুণরা সরকারের লোক এবং সরকারের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছে। বিএনপি তাদেরকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে। বিএনপি মনে করে জামাত শিবির কোন হিন্দুর বাড়ি-ঘর বা মন্দিরে আক্রমণ করেনি, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা গাড়ি-দোকান ভাংচুর করেনি। বিএনপি পরিচালিত ১৮ দলের শরিক দলগুলোও বিএনপির সাথে জামাত-শিবিরের পক্ষে চলে যায়। কারো চোখেই জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতা ধরা পড়ে না। হায়রে স্বার্থবাদী নোংরা রাজনীতি!

বিএনপি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে জামাত-শিবিরকে ত্যাগ করে শাহবাগের গণজাগরণের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল জামাত ১৯৭১-এ যেসব অন্যায় করেছিল, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা নেতাকর্মীরা সেগুলো হজম করে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, তাদের দলকে মুক্তিযোদ্ধাদের দল বলছেন। সারাদেশের মানুষ যেখানে জামাত-শিবিরের সীমাহীন সহিংসতা দেখে ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে বিএনপি জামায়াতের কোন সহিংসতা দেখতে পাচ্ছে না। এটা কি কোনো রাজনৈতিক নীতি হতে পারে? জামাত-শিবির যেখানে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চোরাগুপ্তা হামলা করছে সাধারণ মানুষের উপর, সাধারণ মানুষের গাড়ির উপর, পুলিশের উপর, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরের উপর সেখানে বিএনপিসহ ১৮ দলের কেউ একবার তাদের কাজের সমালোচনা করছে না। জামাত-শিবিরের হামলার ভয়ে যেখানে সাধারণ মানুষের অনেকেই ঘুমহীন রাত্রি কাটাচ্ছে, সেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এ কোন রাজনীতি করছে? স্বাধীনতার বিপক্ষে যে শক্তি ১৯৭১-এ যেসব ঘৃণ্য কাজ করেছিল, আজ আবার ২০১৩-তে এসেও তারা হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগ সমানতালে করে যাচ্ছে। আর তাদের এই কাজের সমালোচনা তো দূরের কথা বরং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে বিএনপি। রাজনীতিতে যদি ন্যূনতম সততা না থাকে, ন্যূনতম নীতি না থাকে, মানুষের প্রতি ন্যূনতম ভালবাসা না থাকে তবে সেই রাজনীতি একটি দেশের কী উপকারে লাগতে পারে? সকলের চোখের সামনে কালো বোর্ড ঝুলে থাকার পরও যদি কোনো রাজনৈতিক দল তাকে সাদা বোর্ড বলে, তবে তারা কিভাবে জনগণের রাজনৈতিক দল হতে পারে?

বিএনপি দেশের সকল স্থানে পাবলিক সেফটি কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা করেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস দমন কমিটি করতে উদ্যোগী হয়েছে। দেশকে আরো সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দেওয়ার এটা কি অন্য একটি পদক্ষেপ? সন্ত্রাস রোধ নয়, বরং সন্ত্রাস ধরে রাখার এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- ক্রমান্বয়ে ক্রমবর্ধমান আকারে চালিয়ে যাচ্ছে যে জামাত তাদের কি আর রাজনৈতিক দল বলার সুযোগ আছে? হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে, মানুষ হত্যা করে, বোমা ফাটিয়ে, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে আগুন দিয়ে, পুলিশের উপর উপর্যুপরি আক্রমণ করে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করছে জামাত। রাজনীতির কোন সংজ্ঞায় জামায়াতের কর্মকা-কে রাজনৈতিক কর্মকা- বলা যাবে তা কি কেউ বলতে পারেন? তারপরও জামাত টিকে আছে বাংলাদেশে। সরকার জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কোনো ব্যবস্থা করছে না, বিএনপি জামাত-শিবিরকে সাহায্য করে যাচ্ছে। রাজনীতি এমন একটি নীতিহীন অবস্থায় যেতে পারে তা কি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পেরেছিলেন? না, তারা তা বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারলে তারা তা মেনে নিতে পারতেন না তখন। আজকের প্রজন্ম চত্বরের মুক্তিযোদ্ধা তরুণ প্রজন্ম কি সবকিছু বুঝে ২০১৩-তে এসে এমনটা মেনে নিতে পারবে?

মেজর সুধীর সাহা (অব.) : কলামিস্ট।
ভোরের কাগজ : সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন