রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

হরতালে সহিংসতা | চোখ হারালেন মেডিকেল ছাত্র

প্রথম আলো, প্রণব বল, চট্টগ্রাম | তারিখ: ৩১-০৩-২০১৩
চোখ মেলে তাকিয়ে আছেন হবু চিকিৎসক সুজন চন্দ্র নাথ (২৩)। চোখের পাতা ও মণি নড়ছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। দৃষ্টির মতোই ফিকে হয়ে আসছে তাঁর স্বপ্ন।
১২ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকায় ককটেল কেড়ে নিয়েছে সুজনের ডান চোখের দৃষ্টি। অক্ষিগোলক নষ্ট হয়ে যাওয়া ডান চোখে ভবিষ্যতে দেখবেন কি না, চিকিৎসকেরা নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।

১২ মার্চ ১৮-দলীয় জোটের ডাকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। পরদিন ১৩ মার্চ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে প্রতিরোধে চট্টগ্রামে হরতাল ডেকেছিল হেফাজতে ইসলাম। অবশ্য ইমরান চট্টগ্রাম না যাওয়ায় পরে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়।
আহত হওয়ার পরদিন ঢাকায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি হন সুজন। সেখানে প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ডান চোখের অক্ষিগোলক নষ্ট হয়ে গেছে। অক্ষিগোলক প্রতিস্থাপন করতে হবে।’
চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার উত্তর হাজীসরাই গ্রামের রবীন্দ্র কুমার নাথের বড় ছেলে সুজন নগরের রুমঘাটায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। ১২ মার্চ সন্ধ্যার পর পলোগ্রাউন্ডের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার পথে চেরাগী পাহাড় মোড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন তিনি।
সুজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ, কোনো দিন রাজনীতি করিনি। এত সাধারণ হয়ে আমাকে কেন এই পরিস্থিতির শিকার হতে হলো।’ তিনি রাজনীতিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘ভবিষ্যতে আমার ভালো চোখটির নিশ্চয়তা কে দেবে?’
সুজন জানান, ওই দিন ককটেল বিস্ফোরণের পর দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। তিনি ও দুই বন্ধু অটোরিকশা থেকে নেমে দৌড় দেন। এ সময় একটি ককটেল সুজনের ঘাড়ে লেগে বিস্ফোরিত হয়। সুজনকে এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের শংকর নেত্রালয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেখানে অক্ষিগোলক পাওয়া সাপেক্ষে প্রতিস্থাপন করা যাবে। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। হরতালের কারণে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
সুজনের স্বপ্ন ছিল, এমবিবিএস কোর্স শেষ করে হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ হবেন। সেবা করবেন দেশের মানুষের। সেই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতে সুজনের ভালো বাঁ চোখ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা।
একই স্থানে গত বৃহস্পতিবার ককটেল বিস্ফোরণে ডান চোখে আঘাত পায় স্কুলছাত্রী অন্তু বড়ুয়া (১৪)। সে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গতকাল শনিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অন্তু ব্যথায় কাতরাচ্ছে। পাশে তার মা শিল্পী বড়ুয়া। অন্তুর চোখে অবশ্য বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তার মা শিল্পী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না। আমরাই কেন এর শিকার হলাম?’
কর্তব্যরত চিকিৎসক তানজিম জানান, অন্তুর চোখ এখন ভালো আছে। তার কর্নিয়ায় খুব একটা আঘাত লাগেনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন