রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

বড় নাশকতায় ওদের আনা হচ্ছে ॥ ৪ পাকি গ্রেফতার

০ জামায়াতের নির্দেশে ৪ পাকিস্তানী ও ১২ হুজি জঙ্গী বড় নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল
০ ব্যাংক ডাকাতি ও ভিআইপি হত্যা তাদের লক্ষ্য ছিল
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতির সময় রাজধানীতে ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদের (হুজি) সদস্য ৪ পাকিস্তানী নাগরিক ও ১২ বাংলাদেশী নাগরিকসহ ১৬ জঙ্গী সদস্য। জামায়াতের নির্দেশ পালন, জঙ্গী তৎপরতা ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের সময় গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন জামায়াতের রোকন ডা. ফরিদ, ২ জন পাকিস্তানী মহিলা ও ২ জন বাংলাদেশী মহিলা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ভারতীয় জাল রুপী, ১ লাখ ৩ হাজার বাংলাদেশী টাকা, ৪ হাজার পাকিস্তানী রূপী, ৪শ’ মার্কিন ডলার, ৪টি পাকিস্তানী পাসপোর্ট, ৮টি তাজা হাতবোমা, বোম তৈরির সরঞ্জাম, মোবাইল ফোনসহ নাশকতা চালানো ও জঙ্গী তৎপরতা সংক্রান্ত বই, কাগজপত্র। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর নিকুঞ্জ, কাঠালবাগান ও পুরনো ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর তাদের ডিবি অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিকেশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা ও স্পর্শকাতর স্থানে নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি গ্রহণের সময়ে ধরা পড়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দিয়েছেন ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভিআইপিদের ওপর হামলাসহ বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল হরকাত-উল জিহাদ। এ লক্ষ্যে হরকাত-উল জিহাদ আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জনের জন্য জাল টাকা ও রুপী তৈরি করছে। জাল টাকা ও রুপীর লাভের একটি অংশ জঙ্গী অর্থায়নে ব্যয় করা হবে। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের হরকাত-উল জিহাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দেশে বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা করছিল চক্রটি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, হরকাত-উল জিহাদ ইন বাংলাদেশ নামে জঙ্গী সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা ডা. ফরিদ। সে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পড়াশোনা করা অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রশিবিরের সভাপতি, পরে সিলেট মহানগর শিবিরের সভাপতি, সিলেট জামায়াতের আমির এবং মাগুরা জেলা জামায়াতের আমির ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রোকন। ডা. ফরিদ মাগুরায় দু’বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনি বলেন, ডা. ফরিদ দেশে নাশকতা সৃষ্টির জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আটক জামায়াত নেতা ফরিদ মিজান, মাহফুজ, তানভির এবং সোহেলকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে বাসা ভাড়া করে দেয়। ওই বাসা থেকে ডা. ফরিদের নির্দেশ মোতাবেক জঙ্গী তৎপরতা চালানোর জন্য অস্ত্র, বোমা সংগ্রহের চেষ্টার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যানে শারীরিক কসরত করত। এবং নিজেদের জিহাদের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করত।
ডিবি পুিলশ জানায়, ডা. ফরিদ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, দেশব্যাপী ক্যাডার সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল জনাকীর্ণ স্থান, ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের যাতায়াতের পথে বোমা হামলা করা। এ উদ্দেশ্যেই ডা. ফরিদ আফগান ফেরত মুজাহিদ ফরিদ উদ্দীন মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকে বাংলাদেশের হরকাত-উল মুজাহেদিনের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ফরিদ উদ্দীন মাসুদ ভারত ও পাকিস্তানের হরকাত-উল মুজাহেদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাল টাকার মাধ্যমে অর্থ জোগানোর জন্য পাকিস্তান থেকে এই জাল রুপী বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে পাচার করত। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে নতুন করে হরকাত-উল জিহাদ সংঘটিত হচ্ছে এই ধরনের খবরের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।
যা বলা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ॥ গত ২৯ মার্চ দুপুর ২.৩০টা থেকে ৩০ মার্চ ভোররাত ২.০০টা পর্যন্ত ডিসি ডিবি মোল্লা নজরুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার)-এর সার্বিক নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে এডিসি ডিবি মশিউর রহমান পিপিএম, সিনিয়র এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র এসি বাকীবিল্লাহ এবং এসি একেএম মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একাধিক টিম ঢাকা মহানগরীর কাঁঠালবাগান এলাকা, নিকুঞ্জ-২ এবং বংশাল থানাধীন বায়তুস সামীর আবাসিক হোটেলে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে মোট ৮টি হাতবোমা, ১ কোটি ২৯ লাখ ভারতীয় জাল রুপী, ৪টি পাকিস্তানী পাসপোর্ট, ৩টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ১৬টি মোবাইল সেট, ১২টি বিভিন্ন ধরনের বই, এক বস্তা বৈদ্যুতিক তার, তাতাল, ছকেট, সুইচ, নগদ ১ লাখ ৩০০০ হাজার টাকা, ৪০০০ পাকিস্তানী রুপী এবং ৪০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে ৪ জন পাকিস্তানী নাগরিক, একজন বাংলাদেশী চোখের ডাক্তারসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল ২৯ মার্চ. সন্ধ্যা অনুমান ৬.৪০টায় ধানম-ি থানাধীন কাঁঠালবাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি বাড়ির ৪র্থ তলায় অভিযান পরিচালনা করে ডা. ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ (৫৫), আফগান ফেরত মুজাহিদ ফরিদ উদ্দিন মাসুদ (৩৫), মোঃ মিজানুর রহমান (৩১) এবং মাহফুজুর রহমানকে (২৩) ৮টি হাতবোমা, ১২টি বিভিন্ন ধরনের বই, এক বস্তা বৈদ্যুতিক তার, তাতাল, ছকেট, সুইচ, ৫টি মোবাইল সেট এবং নগদ ১ লাখ ৩০০০ হাজার টাকাসহ গেফতার করা হয়। ডিএমপি’র বোম্ব ডিসপোজাল টিম হাতবোমাগুলো ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সংগ্রহ করে ডিবি অফিসে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক পরীক্ষায় সেগুলোকে দেশীয় বোমা হিসেবে শনাক্ত করে।
এক সময়ের জামায়াত নেতা ডা. ফরিদ জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করে আল্লাহর দল, হরকাত-উল জিহাদ এবং হরকাত-উল মুজাহেদ্বীনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানায়, সে মিজান, মাহফুজ, সজল এবং তানভীর সোহেলদের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে বাসা ভাড়া করে দেয় এবং বাসার ভাড়া সে পরিশোধ করে। এই বাসায় অবস্থান করে এই যুবকরা ভুয়া সাংবাদিকতা এবং শেয়ার ব্যবসার আড়ালে জঙ্গী তৎপরতা চালাতে থাকে। জঙ্গী তৎপরতা চালানোর জন্য তারা অস্ত্র, বোমা সংগ্রহের চেষ্টার পাশাপাশি চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফ্রি এক্সারসাইজ এবং কারাতে শিক্ষার পাশাপাশি নিজেদের জিহাদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে থাকে। ডা. ফরিদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই জঙ্গীদের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং বোমা সংগ্রহ করে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে অর্থ যোগাড় করা এবং উক্ত অর্থ দিয়ে দেশব্যাপী ক্যাডার সংগ্রহ এবং রসদ সংগ্রহ করে মজুদ করা। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের যাতায়াতের পথে, বক্তৃতারত অবস্থায় উন্মুক্ত স্থানে আক্রমণ করে হত্যা করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দেশে খেলাফতের রাজত্ব কায়েম করা।
এই উদ্দেশ্যে সে আফগান ফেরত বাংলাদেশী মুজাহিদ ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে অবস্থান করে হরকাত-উল জিহাদ ইন পাকিস্তানে যুক্ত হয় এবং ২০০১ সালে আফগানিস্থানে গিয়ে একে-৪৭ ও জি-৩ এবং চাইনীজ রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করে। গেফতারকৃত শিবিরের সাবেক ক্যাডার মিজানুর রহমান গাইবান্ধার মতিন মেহেদীর মাধ্যমে ‘আল্লাহর দলে’ যোগ দিয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করে। মতিন মেহেদী ধরা পড়ার পরে মিজান আবার পড়াশুনায় ফিরে এসে ২০০৬ সালে
এইচএসসি পাস করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেন এন্ড জেন্ডার বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি এমএলএম কোম্পানির দালালি শুরু করে। এরপর ২০১২ সালে ৫০/৬০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকাকালে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসের শেষ দিকে ডা. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে মিজানের পরিচয় হয়। পূর্বের শিবিরের রাজনীতি এবং আল্লাহর দলের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন খেলাফতি জঙ্গী তৎপরতা শুরু করার জন্য বেকার যুবক, ছাত্র এবং শিবিরের ক্যাডারদের একত্রিত করার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে। তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব পড়ে আফগান ফেরত বাংলাদেশী মুজাহিদ ফরিদ উদ্দিন মাসুদ এবং সিলেটী একজন কারাতে মাস্টারের ওপর। ডা. ফরিদ এবং তার সামরিক কমান্ডার ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ক্যাডারদের প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশ থেকে অস্ত্র-গুলি সংগ্রহের জন্য পাকিস্তান ফেরত জনৈক আঃ খালিদ আঃ মান্নানকে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাত অনুমান ৮.০০টার দিকে সজল এবং আঃ খালিদকে পল্টন এলাকা থেকে গেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আঃ খালিদ সম্পূর্ণ বিষয় স্বীকার করে জানায়, অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টার পাশাপাশি সে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় জাল রুপী বাংলাদেশে সরবরাহ করে থাকে। সে আরও জানায়, গোয়েন্দা দল দ্রুত খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-২ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করলে একাধিক নারী-পুরুষসহ লাখ লাখ ভারতীয় জাল রুপী পাওয়া যাবে। এডিসি মশিউর রহমান পিপিএম-এর নেতৃত্বে ডিবির দলটি তাৎক্ষণিক নিকুঞ্জ-২ এর নির্দিষ্ট বাসায় অভিযান পরিচালনা করে ৬৬ লাখ জাল ভারতীয় রুপী উদ্ধার করে এবং জাল রুপীর ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা, মোঃ মামুনুর রশীদ এবং তার স্ত্রী ডলি আক্তার, মোঃ আবুল বাশার, রেজাউল করিম এবং রোকসানা বেগমদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায়, তারা দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে বাংলাদেশে জাল রুপীর ব্যবসা করে আসছে। এ কাজে পাকিস্তানে বসবাসরত কিছু মাফিয়া পাকিস্তানী নারী ও পুরুষ ক্যারিয়ারদের মাধ্যমে বিভিন্ন এয়ার লাইন্স ব্যবহার করে জাল ভারতীয় রুপী ঢাকায় পৌঁছে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামি মামুন ও মোস্তফা আরও জানায়, বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী নাগরিক বংশাল থানাধীন বাইতুস সামীর আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের দল বায়তুস সামীর আবাসিক হোটেলে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ৪টি পাকিস্তানী পাসপোর্ট, ৪০০০ নগদ পাকিস্তানী রুপী, ৪০০ মার্কিন ডলার, ভারতীয় ৬৩ লাখ জাল রুপীসহ পাকিস্তানী নাগরিক সায়িদ উদ্দিন (৫০), মোহাম্মদ ফারহান (২৬), রুবিনা বেগম (৪৩) এবং নারগিস আক্তারকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়। পাসপোর্ট পরীক্ষা করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, পাকিস্তানী এ সকল নাগরিক ৬ থেকে ১২ বার বাংলাদেশে এসে কোটি কোটি ভারতীয় জাল রুপী সরবরাহ করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কলাবাগান, খিলক্ষেত এবং বংশাল থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত আছে এবং অপরাপর সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এর আগেও পাকিস্তানী জঙ্গী ধরা পড়েছে ॥ সম্প্রতি রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় ধরা পড়েছে পাকিস্তানী নাগরিক ও জঙ্গী। মাইক্রোবাসযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় এসে নাশকতা চালানোর সময়ে তাদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিযবুল মুজাহিদীনের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিম (৪৫) ও মোহাম্মদ সাফি ওরফে সামিউল্লাহ ওরফে মোস্তাক। মোহাম্মদ সাফি ওরফে মোস্তাক পাকিস্তানী নাগরিক। র‌্যাব গোয়েন্দা ইউনিট জানতে পারে লস্কর-ই তৈয়বার একজন সক্রিয় সদস্য বাংলাদেশ হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গমন করবে। প্রাপ্ত তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে লস্কর-ই তৈয়বার সক্রিয় সদস্য বাংলাদেশী নাগরিক গোলাম মোহাম্মদ ও মোস্তাককে গ্রেফতার করা হয়। গোলাম মোহাম্মদ মাত্র ১৪ বছর বয়সে কাজ করার উদ্দেশ্যে ভারতের কলকাতায় গমন করে এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে সে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিগত ২০০০ সালে লস্কর-ই তৈয়বার পক্ষে কাজ করার উদ্দেশ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তান গমন করে। পাকিস্তানে যাওয়ার পর সে জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সেখানে ৩ মাসব্যাপী জঙ্গী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৩ সালে সংগঠনের নির্দেশে সে ঢাকায় আগমন করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত ও লস্কর-ই তৈয়বার সক্রিয় সদস্য আব্দুল মাজেদ ওরফে মাজেদ ভাটের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর মাজেদ ভাটের নির্দেশে সে কলকাতায় গমন করে এবং সেখানে অবস্থান করে লস্কর-ই তৈয়বার কর্মকা-ের সমন¦য়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। পরবর্তীতে গত বছর মাজেদ ভাট গ্রেফতার হলে সংগঠনের নির্দেশে সে পুনরায় বাংলাদেশে ফেরত আসে। বাংলাদেশে আসার পর সে বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় অবস্থান করে লস্কর-ই তৈয়বার সমন¦য়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। লস্কর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা শাকিল শাহেদ পাকিস্তান থেকে মাজেদ ভাটের স্ত্রীর ভরণপোষণের টাকা তার মাধ্যমে পাঠানো হতো। গোলাম মোহাম¥দ একে-৪৭, স্নাইপার গান ও মর্টার চালনায় বিশেষ পারদর্শী। হিযবুল মুজাহিদীনের সদস্য ও পাকিস্তানী নাগরিক মোস্তাক ১৯৮০ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করে। সে ২০০১ সালে জঙ্গী সংগঠন হিযবুল মুজাহিদীনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানে গমন করে এবং লস্কর-ই তৈয়বার মোজাফ্ফরাবাদ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিন মাসব্যাপী জঙ্গী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণকালে সে প্রায় সকল ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। মোস্তাক হিযবুল মুজাহিদীনের হয়ে গত ৯ বছর ধরে কাজ করে আসছিল।
Source: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-03-31&ni=130656

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন