বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

লংমার্চে জামায়াত থেকে শত কোটি টাকা নিয়েছে হেফাজত

জনকণ্ঠ, স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে প্রায় এক শ’ কোটি টাকা নিয়ে হেফাজতে ইসলাম লংমার্চ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সুন্নী পীর-মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ। আলোচিত এ লংমার্চকে ঘিরে জামায়াত-বিএনপির সংশ্লিষ্টতাসহ নানা প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সুন্নী পীর-মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ জামায়াতের কাছ থেকে শত কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ তুলল। সংগঠনটি একই সঙ্গে বলেছে, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ১৮ দলীয় জোটের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে তারা অরাজনৈতিক সংগঠন না। তারা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ আন্দোলন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সমন্বয়ক হাফেজ মাওলানা আব্দুস সাত্তার হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যারা এতদিন মওদুদীবাদের ভক্ত জামায়াত-শিবিরকে মুরতাদ বলত, তারাই ইসলাম ও দেশের শত্রু জামায়াত-শিবিরের কাছে থেকে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লংমার্চ করেছে। শান্তিপূর্ণ হরতালের নামে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। নাস্তিক সম্প্রদায় আর হেফাজত নেতারা একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। তাদের উদ্দেশ্য ইসলাম হেফাজত না জামায়াত হেফাজত তাও আজ জাতির সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওহাবী ও মওদুদীবাদীরা কোরান ও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে থাকে। সুতরাং নাস্তিক, ওহাবী ও মওদুদীর অনুসারী জামায়াত-শিবির একই অপরাধে অপরাধী। মওদুদীবাদীর অনুসারীরা নাস্তিক এবং যারা ইসলামের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ কার্যক্রম করছে তাদের আয়ের উৎস কী এবং কারা তাদের মদত যোগায় তা খতিয়ে দেখা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতীব জরুরী। সংবাদ সম্মেলনে সুন্নী পীর-মাশায়েখ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ড. খাজা বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বানচাল করা। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ১৮ দলীয় জোটের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে তারা অরাজনৈতিক সংগঠন নয়। তারা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ আন্দোলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে নাস্তিক ব্লগার ও মওদুদীবাদী ধর্মীয় রাজনীতির ছদ্মাবরণে নাস্তিক রাজনীতিবিদদের চিহ্নিত করে বিচার, সর্বোচ্চ শাস্তি এবং সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করাসহ সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করা হয়। এর আগে গত ৬ মার্চের লংমার্চের পরই নানাভাবে ফাঁস হয়ে যায় হেফাজত ও জামায়াত নেতাদের যোগসাজশের খবর। ‘আমাদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই’-জনতার আক্রমণ থেকে বাঁচতে বারবার এমন দাবি করলেও ফাঁস হয়ে গেছে হেফাজতে ইসলাম নামধারী সংগঠনের আসল চেহারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে জেগে ওঠা আন্দোলনের বিরুদ্ধে হঠাৎ ধর্মীয় জিকির তুলে দাঁড়িয়ে যাওয়া হেফাজত নেতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সরকার উৎখাত ও লংমার্চের ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত গোপন টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে এ তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। যেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার হোতাদের অন্যতম ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল নাশকতার পরিকল্পনা করেছেন হেফাজত নেতারা। টেলিফোন আলাপে আছেন হেফাজত হোফজতের উপদেষ্টা মাইনউদ্দিন রুহী, মুফতী ফয়জুল্লাহ। সাধারণ মুসল্লিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় হেফাজত আমিরকে ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলন চালানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে হেফাজত নেতাদের গোপন টেলিফোন আলাপের তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। ফেসবুক বাংলালিংক্স পেজ ও ইউটিউব বাংলালিংক্স পেজে এ সংক্রান্ত রেকর্ড আপলোড করা হয়েছে। () ও ( এ ছাড়া ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, লংমার্চে প্রায় শতকোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়েছে জামায়াতপন্থী উগ্রবাদী দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। পুলিশের নজরদারি থাকলেও একটি পত্রিকা অফিসে বৈঠক করে টাকা ভাগাভাগি হয় বলেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়, হেফাজতের ব্যানারে এ আন্দোলনে পুরো টাকার মধ্যে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা যাচ্ছে হেফাজত নেতাদের হাতে। বাকি টাকা ১৮ দলের অংশীদার উগ্রবাদী ৯টি দলের নেতাদের কাছে। টাকার যোগান দেয় দলগতভাবে জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে জেলে আটক এক বিএনপি ও এক জামায়াত নেতার পরিবার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন