সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতের কাছে প্রত্যাশা ছিল 'ইসলামী মঞ্চ'

১৮ দলীয় জোটের নেতারা হতাশ 
কালের কণ্ঠ, নিজস্ব প্রতিবেদক
হেফাজতে ইসলাম মতিঝিল শাপলা চত্বরে 'ইসলামী মঞ্চ' তৈরি করে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে_এমনটাই চেয়েছিল ১৮ দলীয় জোট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলাম তেমন কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে এবং মঞ্চে অবস্থান না করে কেবল এক দিন হরতাল ডেকে ফিরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নেতাদের একটি অংশ। একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, হেফাজতের নেতাদের প্রতি আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের পরামর্শ ছিল, তাঁরা যেন মতিঝিলে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কিন্তু বিরোধী দলের এই পরামর্শের কথা সরকার নানা সূত্রে আগেই টের পেয়ে লংমার্চে বাধা দিয়েছে। ঢাকায় আসার পথে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তা সত্ত্বেও গত শনিবার তাদের মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হয়। মহাসমাবেশ থেকে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত নেতারা মনে করছেন, তা আদায়ের লক্ষ্যে হরতালসহ লাগাতার কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়নি হেফাজতে ইসলাম। তাঁরা এতে অনেকটাই নিরাশ হয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের পর শনিবার রাতেই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও পরে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে হেফাজতের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ায় হেফাজতকে নিয়ে অনেক নেতা সমালোচনা করেন। সেখানে কেউ কেউ মহাসমাবেশকে সফল বললেও কর্মসূচিকে দুর্বল হিসেবে অভিহিত করেন বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
হেফাজতের কর্মসূচির মধ্যে সারা দেশে আজ সোমবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছাড়া রয়েছে ১৩ দফা দাবিতে ১১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ জেলা শহরে সমাবেশ। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু হেফাজতের এই কর্মসূচিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিএনপি-জামায়াতসহ জোটের কতিপয় নেতা।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন নেতা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সম্পর্কও নেই। কিন্তু তারা যে হরতাল দিয়েছে তাতে সমর্থন জানিয়েছে ১৮ দলীয় জোট।
হেফাজতকে বিএনপি ও জামায়াত শাপলা চত্বরে স্থায়ী ইসলামী মঞ্চ তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছিল কি না জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, 'এমন খবর আমার কাছে নেই। কারা পরামর্শ দিয়েছে তাও জানা নেই। তবে প্রথম দিকে শুনেছিলাম, লংমার্চ করে ঢাকায় এসে হেফাজত স্থায়ীভাবে অবস্থান নিতে পারে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার কারণেই হয়তো সরকার হেফাজতের নেতা-কর্মীদের লংমার্চ করে ঢাকায় আসতে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শনিবার হেফাজতে ইসলামের এত বড় শোডাউন দেখে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। খাবার-দাবার দিয়েও সহযোগিতা করা হয়। অনেকে মনে করেছিলেন সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে ঘরে ফিরবে না হেফাজত। কিন্তু তারা যা ভেবেছিলেন তেমনটি হয়নি। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হেফাজতের মঞ্চ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করার পর থেকে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী হতাশা ব্যক্ত করে। বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এক দিনের হরতালে সরকারের কিছু আসবে-যাবে না।' অনেকে সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আঁতাতেরও অভিযোগ আনেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাদের কর্মসূচির প্রতি বিএনপিসহ জোটের সমর্থন রয়েছে। হেফাজত একটি ইসলামী সংগঠন। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই।'
১০ এপ্রিল সমাবেশ কেন স্থগিত করা হয়েছে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, 'সরকারের আচরণে আগেই বোঝা গেছে দলের শীর্ষ নেতাদের হয়তো মুক্তি দেবে না সরকার। সেটাই সত্য হয়েছে। এ কারণেই সমাবেশ স্থগিত করে দুই দিনের হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। এই কর্মসূচির সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই কর্মসূচিতে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে মনে হয় না। আরো কঠোর কর্মসূচির জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ঢাকা মহানগরীর জামায়াতের এক নেতা বলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম হেফাজতে ইসলাম আরো কঠোর কর্মসূচি দেবে। তারা মতিঝিলে অবস্থান করবে_এমন কিছু কথাও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন তারা পিছপা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।' জামায়াতের এই নেতা আরো বলেন, 'ইসলামের স্বার্থে হেফাজতকে সমর্থন দিয়েছি। সারা দেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতা-কর্মী লংমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে অংশ নিয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হেফাজতকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের শামসুল ইসলাম এমপি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর পরও কঠোর কর্মসূচি হলো না।'
জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের আমির মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা হেফাজতের কর্মসূচির সঙ্গে একমত। জোটের কেউ কেউ একমত নাও হতে পারেন। হেফাজতে ইসলাম যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করেছে, তাতে প্রমাণিত হয়েছে, আলেম-ওলামারা কখনো বিশৃঙ্খলা করেন না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় হেফাজতকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু তা কখনো হবে না।'
এদিকে এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ও সংঘর্ষ নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন