শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩

শহীদ রুমী স্কোয়াডের সঙ্গে অনশনে আরও ২৫ জন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে শহীদ রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসেছে আরও ২৫টি সংগঠন। শুক্রবার রাত ১২টায় শুরু হয়েছে সংগঠনগুলোর ২৫ প্রতিনিধির এ প্রতীকী অনশন, চলবে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত। এছাড়া শনিবার দেশের সকল স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কালোব্যাজ ধারণ করে এক ঘন্টার জন্য প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে শহীদ রুমী স্কোয়াডের পক্ষ থেকে।

এদিকে মূল কর্মসূচি আমরণ অনশনকারী ১৯ জনের মধ্যে মানিক সূত্রধরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহীদ রুমী স্কোয়াডের মুখপাত্র সেঁজুতি শোণিমা নদী বাংলানিউজকে জানান, অনশনরতদের মধ্যে আলিফ প্রধান এবং মানিক সূত্রধরের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শুক্রবার ডাক্তাররা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। আলিফ সুস্থ হয়ে উঠলেও রাতে মানিক সূত্রধরের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে শুরু হওয়া শহীদ রুমী স্কোয়াডের এ আমরণ অনশন কর্মসূচি এ পর্যন্ত পার করেছে ৭৬ ঘণ্টা। শুরুতে সাত তরুণ আমরণ অনশনে বসলেও পরে আরও ১২ জন এতে যোগ দেন। বর্তমানে ১৯ জন আমরণ অনশন করে যাচ্ছেন।

ওই ১৯ জনের পাশাপাশি শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে অংশ নিচ্ছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্কোয়াড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অধিকার মঞ্চ, সাংস্কৃতিক সংগঠন বোধন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, সামহোয়্যার ইন ব্লগ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পাঠচক্র, জাগরুক গণপাঠাগার, বঙ্গবন্ধু চেতনা পরিষদ, বিপ্লবীদের কথা, সেক্টর ১৩, ফাঁসির মঞ্চ, তারুণ্য তের, রাস্তা, জেনারেশন এফ, দেশ মৃত্তিকা, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, গণসংহতি আন্দোলন, রাগমা, আমরা, মাতৃভূমি সামাজিক সংগঠন, হৃদয়ে সীতাকুণ্ড, বটতলা নাট্যদল, ব্ল্যাক স্কোয়াড, প্রজন্মের দায়ভারসহ ২৫টি সংগঠনের ২৫ জন প্রতিনিধি।
shahbag-badal
এছাড়াও এ দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খুলনা শিববাড়ি মোড়েও ৩৬ ঘন্টার প্রতীকী অনশনে বসেছেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েন তিন শিক্ষার্থী।

শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিরা অংশ নেবেন বলে ‍জানিয়েছেন সেঁজুতি শোণিমা নদী। তিনি বাংলানিউজকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন, এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে অংশ নেবেন তারা। সুদূর মস্কো থেকে জিনিয়া আহমেদ চৈতীও শুরু করেছেন আমরণ অনশন, শহীদ রুমী স্কোয়াডের সঙ্গে সংহতি জানিয়েই।

এছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে সিলেট গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে সংহতির কথা।

নদী বলেন, শনিবার দেশের সকল স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কালোব্যাজ ধারণ করে এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাদের পাশাপাশি গণঅনশনে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা, বু্দ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সকল মানুষকে অংশ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে শহীদ রুমী স্কোয়াড।

যারা এ প্রতীকী অনশনে অংশ নেবেন, তাদের সবাইকে অনশনের ছবি শহীদ রুমী স্কোয়ডের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার আহ্বানও জানানো হয়।

শুক্রবার গভীর রাতে প্রতীকী অনশনরত রাজনৈতিক সংগঠন দেশ মৃত্তিকা, স্বদেশ বোধের পাঠশালার কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রহমান রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমাদের এ প্রাণের দাবির পক্ষে আমাদের অবস্থান অনড়। দাবি আদায়ে অহিংস উপায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কঠোর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি আমরণ অনশনকেই। আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে তাই আমরা আজ বলতে চাই, বিজয়, নাহলে মৃত্যু- একমাত্র এ পথেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। আর তাই অহিংস উপায়েই দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়ে আজ আমরা রাজপথে। আশা আছে বিজয়ের। তবে মৃত্যুর ভয়ে এখন আর ভীত নই, আমরা কেউ।’’

এদিকে শুক্রবার রাত আটটায় অনশনকারীদের সঙ্গে সপরিবারে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। অনশনবারীদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান তিনি। শুক্রবার শহীদ শাফী ইমাম রুমীর ৬২তম জন্মদিন উপলক্ষে স্কোয়াডের আয়োজনে ৬২টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং তার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। 

ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) দুপুরে সিলেট থেকে না খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি আমি। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় শহীদ রুমী আমার সহপাঠী ছিল। তার স্মরণে আজকের তরুণরা তাদের দেশকে ভালোবেসে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এদের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। দেশ থেকে জামায়াত-শিবির নামের আবর্জনা দূর করতে হবে। সেই পরিষ্কার দেশের মাটিতে দেশপ্রেমের ফুলগাছ লাগাবে এরাই। আর তাই এদেরকে যে কোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে।’’

এর আগে সন্ধ্যা সাতটায় অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে আসেন গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর এবং ব্লগার অমি রহমান পিয়াল। তারাও প্রজন্ম’৭১ এবং মৃত্যুঞ্জয় স্কোয়াডের পক্ষ থেকে অনশনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
 shahbag-badal-1
শহীদ রুমী স্কোয়াডের দাবি, গণজাগরণ মঞ্চের ২১ ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ২৬ মার্চ পর্যন্ত যে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল, সরকার সেটি না মানায় ও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে। সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের পদক্ষেপ শুরু না করা পর্যন্ত অনশন চলবে।

প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’-এর সাত তরুণ আমরণ অনশন শুরু করেন। অনশনকারীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদাত হাসান নিলয়, মেহেদী হাসান শুভ্র, জয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ, ঢাকা কলেজের আনন্দ, রুবায়াৎ ও কর্মজীবী মানিক। বৃহস্পতিবার শহীদ রুমি স্কোয়াডের পক্ষ থেকে সংহতি সমাবেশের আহ্বানে পাওয়া যায় বিপুল সাড়া। আস্তে আস্তে আরও ১২ জন এসে যুক্ত হন আমরণ অনশনে।

সাংগঠনিক পর্যায়ে সারা দেশ থেকে ১১৬টি সংগঠনও একাত্মতা ঘোষণা করে এ দাবির সঙ্গে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই শাহবাগ চত্বরে কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণআন্দোলনের সূত্রপাত।

এরপর এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা। এক সময় এ আন্দোলন গণজোয়ারের সৃষ্টি করে। পরে শাহবাগ চত্বরের নাম হয়ে যায় গণজাগরণ চত্বর এবং গণজাগরণ মঞ্চ করে চলতে থাকে গণআন্দোলন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির সঙ্গে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিনামা ঘোষিত হয়।

গণআন্দোলনের ৫৪তম দিন শনিবার।

এদিকে এ গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে গণজোগরণ মঞ্চের সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংগঠন। শহীদ রুমী স্কোয়াডের জন্ম হয় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ভেতর থেকেই।

স্কোয়াডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমর্থন রয়েছে স্কোয়াডের। তাদের আমরণ অনশন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিগুলোর সম্পূরক। কোনোভাবেই এ কর্মসূচি গণজাগরণ মঞ্চের থেকে আলাদা কোনো প্ল্যাটফর্ম নয়। তবে গণজাগরণ মঞ্চের ভেতরে থেকেই তারা আমরণ অনশন করছেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে।

এদিকে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর রোববার জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে পেশ করা হবে। ওই দিন সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে।

এ কর্মসূচিসহ গণজাগরণ মঞ্চের সকল কর্মসুচিতেও সকল স্তরের মানুষের প্রতি যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে শহীদ রুমী স্কোয়াড।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন