রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

শয়তানরা চোখ রাঙায়, সরকার তামাশা করে

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
হেফাজতে ইসলামের হুমকির পর পুলিশের নিষেধাজ্ঞায় চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে না পারা গণজাগরণ মঞ্চ ঢাকায় ওই সংগঠনটিকে সমাবেশ করতে দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে।

মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশের পর শনিবার গণজাগরণ মঞ্চে এক সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, “শয়তানরা চোখ রাঙায়, যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন চারপাশে; “আমাদের আন্দোলনকে নানাভাবে প্রতিহত আর প্রশ্নবিদ্ধ করতে শ্বাপদেরা ফণা তুলে আছে; আর এদিকে সরকার বসে তামাশা দেখছেন।”


হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিরোধে দেশব্যাপী রাজপথ-নৌপথ-রেলপথ অবরোধ শেষে সন্ধ্যার পর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তব্য শুরুর আগে গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের একদলকর্মীর সঙ্গে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়।

জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে বেঁধে দেয়া সময়ে সরকারের সাড়া না পেয়ে গত ২৬ মার্চের সমাবেশেও সরকারের সমালোচনা করেন ইমরান। 

তিনি শনিবারের সমাবেশে বলেন, “রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আক্রমণ করছে জামায়াত-শিবির, থেঁতলে দিয়েছে আমার পুলিশ ভাইয়ের মাথা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চলছে বিভৎস আক্রমণ, আর রাষ্ট্র যেন শীতনিদ্রায় আচ্ছন্ন!

“এই যখন হয় সামগ্রিক পরিস্থিতি, তখন আমরা বলতে বাধ্য হই- আর কত নৃশংস আঘাত এলে রাষ্ট্রের মনে হবে, এইসব অপশক্তিকে নিষিদ্ধ করা উচিত?”

তিনি বলেন, মতিঝিলে হেফাজতের যে সমাবেশ হয়েছে, তা আদতে জামায়াতে ইসলাম ও তাদের দোসরদের সমাবেশ।

হেফাজতের ১৩ দফা দেখার পরও তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়ার সমালোচনা করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।

গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টি তুলে সরকারের প্রতি তার প্রশ্ন- “যখন সারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ১৩ দফা নিয়ে জঘন্য একটি দল সমাবেশ করে, তখন কোথায় থাকে প্রশাসনের বক্তব্য? কোথায় থাকে ১৪৪ ধারা?”

হেফাজতের সমাবেশে সেলিম উল্লাহ নামে এক নেতা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকেও কটাক্ষ করেছেন, বলেন ইমরান।

হেফাজতকে ‘প্রশ্রয়’ দেয়া হচ্ছে দাবি করে এর পরিণতি শুভ হবে নো বলে সরকারকে সতর্ক করেন তিনি।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ইমরান বলেন, “আমাদের পথ অনেক দীর্ঘ। আমাদেরকে বহুদূর যেতে হবে। আপনারা সচেতন থাকুন। সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিরোধ করুন।”

আগামী পহেলা বৈশাখের সমাবেশসহ ঘোষিত কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন তিনি।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, “এদেশের ইসলাম ছিল সুফীবাদের। এই মৌলবাদীরা সেই ইসলামকে মৌলবাদের ইসলামে পরিণত করেছে। তারা এদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়।”

তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে যখন ভাষার অধিকার রক্ষায় যারা সক্রিয়ভাবে নেমেছিল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে নেমেছিল, তাদেরও ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল।

অপপ্রচারে কান না দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান এই শিক্ষক।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক হেফাজতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনারা ইসলামকে হেফাজত করছেন, না কি জামায়াতকে হেফাজত করছেন?”

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা বলেন, “আমরা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দাবি করেছিলাম। আমাদের দাবিতে সরকার কর্ণপাত করেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে, সরকার তাদের পক্ষ নিয়েছে।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন বলেন, “কে ওয়েবসাইটে কী লিখল, তার সঙ্গে শাহবাগের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই আন্দোলনের একটাই দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি। এটা কেবল ব্লগারদের দাবি নয়, এটা সাধারণ জনগণের দাবি।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন