শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াতেরই ভিন্ন নাম হেফাজত

জনকণ্ঠ, স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সংশ্লিষ্টতাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে আলেম ওলামাদের ক্ষোভ বাড়ছে। হেফাজতের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনের অব্যাহত অভিযোগের পর শুক্রবারও একই অভিযোগ এনে অবিলম্বে লংমার্চ বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন দল, আলেম ওলামারা। পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে তারা বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে হেফাজতে জামায়াতে ইসলাম। খারেজী-ওহাবী-কওমীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এবার জামায়াতের টাকায় আন্দোলন করে যুদ্ধাপরাধীদের ওরা বাঁচাতে চায়। হেফাজতের নেতাদের উদ্দেশে তাঁরা বলেছেন, ‘আপনারা যদি আল্লাহ ও রাসুলের প্রকৃত প্রেমিক হয়ে থাকেন, তবে অবিলম্বে লংমার্চ বন্ধ করুন।

হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও জামায়াতের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইমাম ওলামা কল্যাণ পরিষদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আলহাজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিয়া (মুস্তাকিম হুজুর), সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুহাম্মদ রেজাউল হক আবদুল্লাহ, মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান, মুফতি মোঃ শহিদুল্লাহ, হাফেজ মওলানা আব্দুস সাত্তার, মুফতি মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, এ দেশের গণমানুষের প্রাণের দাবি জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। আর এই বিচার আইনী প্রক্রিয়ায় তার নিজস্ব গতিতে চলছে। ঠিক এই সময় জামায়াত-শিবির সারাদেশে তা-ব শুরু করে। তারা মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর নৃশংস হামলা, জাতীয় পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনার ভাঙচুরসহ ন্যক্কারজনক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এ অপশক্তি দেশ-জাতি-ধর্ম ও জনগণের দুশমন। এই দেশ সৃষ্টি হোক তারা এটা চায়নি। তারা আরও বলেন, এই দেশ শান্তিমতো চলুক তা তারা চায় না। এ সব নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এবং তাদের শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণে সারাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে নাস্তিকতাবাদ ঢুকিয়ে এই চেতনায় ঘুণ ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। নেতারা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি করে বলেন, জামায়াত-শিবিরের মওদুদী আকীদা-বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে নাস্তিকবাদের চাইতে কোন অংশে কম নয়। মহান আল্লাহকে ওরা জালেম বলেছে। মহানবী (সা) ও আম্বিয়ায়ে কেরামকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। সাহাবা ও অলি-আউলিয়াদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করেছে। ধর্মের অন্যান্য স্তম্ভ অবমাননা করেছে জামায়াতের প্রবর্তক মওদুদী। মওদুদীর শিক্ষাগুরুদের অন্যতম উপমহাদেশের নাস্তিক নেতা নিয়াজ ফতেহপুরীর সান্নিধ্যে এসব বিষয় ইসলামের নামে চালিয়ে দিয়েছে। জামায়াত-শিবির ওই মওদুদীর শিখ-ি হিসেবে এখনো এসব নাস্তিক মার্কা তত্ত্ব বিশ্বাস ও প্রচার করে প্রতিনিয়ত ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের মূলে কুঠার আঘাত করছে। এরা আবার দম্ভ ভরে ইসলামের নেতৃত্বের দাবিও করে থাকে।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ ইসলামী ফ্রন্ট বলেছে, হেফাজতে ইসলাম নামে যে সংগঠনটি ইসলামকে হেফাজতের নামে লংমার্চ কর্মসূচী পালন করছে তা ইসলাম সমর্থন করে না। ফ্রন্ট নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই লংমার্চে ভেতরে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করে নাশকতা চালাতে পারে। তারা এই কর্মসূচীকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচী বলে অভিহিত করেন। জামায়াতের টাকায় এসব কার্যক্রম হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা এই লংমার্চ প্রত্যাহারের দাবি জানান। এছাড়া লংমার্চ প্রত্যাহার করতে সবাইকে মাঠে থাকারও আহ্বান জানান তারা। হেফাজতে ইসলামের নামে আহমদ শফীরা আল্লাহ-রাসুলকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছে ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে নেতারা আরও বলেন, ‘একদিকে ব্লগাররা আল্লাহ-রাসুলকে নিয়ে কুৎসা রটিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মীয় গোঁড়ামি দেখিয়ে হেফাজতে ইসলামের আহমদ শফীরা আল্লাহ-রাসুল সম্পর্কে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হেফাজতে ইসলামের নামে হেফাজতে জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। তারা খারেজী-ওহাবী-কওমী বিভিন্ন সংগঠনের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আসছে। জামায়াতের পাশাপাশি নেজামে ইসলামীও একই রকম। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তান আমলে তারা (হেফাজতে ইসলামের নেতারা) নেজামে ইসলামী পার্টি করেছিল। পরবর্তী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি তারাও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। সেদিন মুফতি আহমদ শফীরা মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে রাজাকারের মতো একই কর্ম সম্পাদন করেছিল। হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে এর আগে একাত্তরে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সহায়তা করার অভিযোগ এনেছিল বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটও। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সাংগঠনিক সচিব মাওলানা আবদুল হাকিম, দফতর সচিব মোঃ হাবিবুর রহমানসহ সংগঠনের নেতারা।
দেশে অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের জন্য হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইমাম-ওলামা সমন্বয় ঐক্যপরিষদ। রাজধানীর পল্টনে ফটোজার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল হোসাইন। সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, সরকার দাবি করছে, তাদের কাছে তথ্য আছে হেফাজতের ইসলামের লংমার্চে জামায়াত-শিবির ঢুকে নাশকতা করতে পারে। এর পরও কেন তাদের কর্মসূচী করার অনুমতি দেয়া হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘সব কিছু জানার পরও যড়যন্ত্রকারীদের কেন গ্রেফতার করতে পারছেন না? ষড়যন্ত্রকারী যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিঠা কথা বাদ দিয়ে হেফাজতের নামে যারা নাশকতা করতে চায় এ সমস্ত বিশৃঙ্খলাকারীদের অবিলম্বে^ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। হেফাজতের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আল্লাহ ও রাসুলের প্রকৃত প্রেমিক হয়ে থাকেন, তবে অবিলম্বে লংমার্চ বন্ধ করুন। না হলে দেশের জনগণ বুঝে নেবে, হেফাজতে ইসলাম বিএনপি ও জামায়াতসহ ১৮ দল নিয়ন্ত্রিত। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এস এইচ এম আরিফ বিল্লাহ, নুর মোঃ আহাদ আলী, হারুনুর রশীদ প্রমুখ। হেফাজতকে জামায়াতের সংগঠন হিসাবে অভিহিত করে অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেদমতে ইসলামসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন