সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

জাতীয় পতাকা নিয়ে আজ হরতাল বিরোধী মিছিল

প্রজন্ম চত্বরে ॥ অবস্থানের ৬২ দিনে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথিত হেফাজতে ইসলামের হরতালে আজ সারাদেশে পতাকা মিছিল করবে গণজাগরণ মঞ্চ। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে বেলা ১১টায় হরতালবিরোধী মিছিল যাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এদিকে হরতাল প্রতিহত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রজন্মযোদ্ধারা। শনিবার হেফাজতে ইসলামের নামে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রজন্ম চত্বরে হামলার চেষ্টার ঘটনায় রবিবারও শাহবাগে এসেছিলেন প্রতিবাদী জনতা। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সকলেই। পাশাপাশি এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রজন্মযোদ্ধারা।
১৩ দফা দাবিতে শনিবার লংমার্চ শেষে শাপলা চত্বরে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে হেফাজতে ইসলাম। লংমার্চে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয় বিএনপি-জামায়াতসহ এরশাদের নেতৃত্বাধীন দল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। এরশাদ নিজেই কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। হরতাল আহ্বানের পর পরই শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে তা প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়। হরতালকারীদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন সর্বস্তরের মানুষ।
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, এই হরতালের সঙ্গে জনগণের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ জনস্বার্থবিরোধী হরতাল ডেকেছে হেফাজত। তাদের মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষাসহ তালেবানী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম চিন্তা বা ইচ্ছা পোষণ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তাই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তাদের প্রতিহত করতে হবে। সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।
জাগরণ মঞ্চের আজকের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পতাকা নিয়ে হরতালবিরোধী মিছিল। বেলা ১১টায় প্রজন্ম চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। এদিন দেশের সকল গণজাগরণ মঞ্চসহ সর্বস্তরের মানুষকে হরতালের প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা হাতে একত্রিত হয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যাদের সামর্থ্য থাকবে তাদের বাড়ি বাড়ি পতাকা উত্তোলন করতে আহ্বান জানিয়েছে প্রজন্ম সেনারা।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে আগামীকাল ৯ এপ্রিল দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকবে।
১০ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ৬ দফা দাবিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। একই দাবিতে দেশের সকল জেলায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুই ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। দেশের সকল গণজাগরণ মঞ্চসহ যেসব জেলায় মঞ্চ হয়নি সেখানে স্বাধীনতাকামী জনতার প্রতি কর্মসূচী বাস্তবায়নে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রজন্ম চত্বর থেকে। এছাড়া আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বিকেল তিনটায় প্রজন্ম চত্বরে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল সংগঠন, কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে মহাসমাবেশে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। এই দিন প্রজন্ম চত্বরে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠন অনুষ্ঠিত হবে।
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে নির্ধারিত কোন কর্মসূচী না থাকলেও বিকেল থেকে শাহবাগে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। সকলের মুখে মুখে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল-হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের জাগরণ মঞ্চ দখলের ব্যর্থ চেষ্টার বিষয়টি। কেউ বলেছেন, ’৭১-এর মতোই দেশপ্রেমিক জনতা বিরোধীদের প্রতিহত করেছে। জানান দিয়েছে এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর কোন ঠাঁই নেই। যে কোন মূল্যে তাদের প্রতিহত করবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সর্বস্তরের মানুষ। মঞ্চকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা রোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্দোলনকারীরা শাহবাগের মূল রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে সকাল থেকেই। কাঁটাবন, মৎস্য ভবন, রূপসী বাংলা পয়েন্টে তুলে নেয়া হয়েছে পুলিশের ব্যারিকেড। সকাল থেকে শাহবাগের তিন পাশের রাস্তা দিয়ে শুরু হয় যানবাহন চলাচল। প্রজন্ম চত্বরের মূল মঞ্চে আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে দেখা গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন