বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

আতঙ্কের জনপদ রাজশাহী । আড়াই মাসে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ৩২টি সংঘর্ষ

প্রথমআলো | আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী | তারিখ: ২০-০৩-২০১৩
সকাল সাড়ে ছয়টা। রাজশাহী নগরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে অলকার মোড়ের দিকে আসছিলেন একজন মোটরসাইকেল আরোহী। পেছনে ছোট বোন। তার কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। এমন সময় গুলির শব্দ। দিশেহারা হয়ে পড়লেন চালক। কোন দিকে পালাবেন? একজন রিকশাওয়ালা বললেন, বাজারের দিকে গোলাগুলি হচ্ছে। চালক দ্রুত মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে নগরের বেলদার পাড়ার দিকে ছুটলেন। একটু পরে ওই দিক থেকেও গুলির শব্দ আসতে লাগল। পরে তিনি কোন দিকে গেলেন, জানা যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার নগরের অলকার মোড় এলাকার দৃশ্য ছিল এটি।
শুধু গতকালই নয়, রাজশাহী নগরজুড়ে এখন প্রায় প্রতিদিনই এই দৃশ্য দেখা যায়। কি সকাল, কি সন্ধ্যা—যখন তখন পুলিশের এপিসি (আরমার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে, হামলাকারীরা ফোটাচ্ছে হাতবোমা ও ককটেল। আড়াই মাস ধরে এভাবেই চলছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশও আতঙ্কিত। নগরে রাতের বেলা সাইকেল টহল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ১০ জনের কমে পুলিশকে কোথাও বের হওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এক হিসাবে দেখা গেছে, জানুয়ারির গোড়া থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী নগরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ছোট-বড় ৩২টি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়া অলিগলিতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া তো আছেই। এর মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের তাড়া খেয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছেন এক যুবক। নগরের বাইরে আড়াই মাসে নিহত হয়েছে তিনজন।

এসব সংঘর্ষে পুলিশের মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার আবুল হাসনাতই এ পর্যন্ত চারবার আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল সকালেও নগরের বিনোদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের ছোড়া হাতবোমার আঘাতে তিনি আহত হন। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এভাবে অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আর জামায়াত-শিবিরের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা তো অজানা।

একের পর এক সংঘর্ষ আর প্রাণহানিতে জনমানুষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পরপরই ভুতুড়ে নগরে পরিণত হয় রাজশাহী। বেচাকেনা কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাইরে বের হন না। চায়ের দোকনাগুলোতে আগের মতো আড্ডা নেই।

অলকার মোড়ের চায়ের দোকানদার কাশিনাথ বলেন, সন্ধ্যার পর মানুষ আর দোকানের সামনে দাঁড়াচ্ছে না। আগে এক থেকে দেড় মণ দুধের চা বিক্রি হতো। এখন ২০ কেজি দুধই খাটানো যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে নগরের ছাত্রাবাসগুলোও প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্র জানান, তিনি যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির রংমিস্ত্রিকেও পুলিশ শিবির বলে আটক করেছে। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নগরের রামচন্দ্রপুর এলাকার কলেজশিক্ষক সামছুল হক বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে মন উচাটন করে। প্রায় দিনই শহরের অলিগলিতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। কখন বাচ্চারা এর মধ্যে পড়ে যায় কে জানে?’

যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে এই পরিস্থিতি পুলিশের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জনগণকেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন