জনকণ্ঠ
আলোর মিছিল, মৌন পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানো সহ নানা আয়োজনে একাত্তরের বীর শহীদদের স্মরণ করল
দেশ-বিদেশের মানুষ। গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে দেশের সব জেলা-উপজেলাসহ
বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। প্রজন্ম চত্বরে
আন্দোলনের ৪৯তম দিনে ২৫মার্চ কালরাত্রি স্মরণে আলোর মিছিলে শামিল হন হাজারো
জনতা। আলোয়-আলোয় জাগ্রত হয় প্রতিবাদের ভাষা। অন্ধকার দূর করার প্রত্যয়।
সকলের মুখে উচ্চারিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি।
শহীদদের স্মরণে সোমবার শাহবাগে রাতভর অবস্থান করে সর্বস্তরের মানুষ। জয় বাংলা সেøাগানে মুখরিত হয় প্রজন্ম চত্বর। প্রদর্শন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র। আজ বিকেলে প্রজন্ম চত্বরসহ দেশের সব গণজাগরণ মঞ্চে বিকেল চারটায় একযোগে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশের পর রাত ৮টায় প্রজন্ম চত্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বার্ষিকী স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উড়ানো হবে ৪২টি ফানুস।
২৫ মার্চ কালরাত্রির কর্মসূচী ॥ সোমবার সারাদেশের সব স্কুল-কলেজে ক্লাস চলাকালীন যে কোন সময় বাংলা বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বা কবিতা পাঠ এবং তার ওপর শিক্ষকবৃন্দকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। আন্দোলনকারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বেশিরভাগ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে দুপুরের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প কবিতা শোনানো হয় শিক্ষার্থীদের। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পৃথক আয়োজনে কর্মসূচী পালন করতে দেখা গেছে।
বিকেল ৫টা থেকে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক মিলিয়ে শতাধিক সংগঠন এতে অংশ নেয়। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলে কবিতা পাঠ, প্রতিবাদী গান, পথনাটকসহ রকমারি উপস্থাপনা। থেমে থেমে চলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, জামায়াত শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে সেøাগান। সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। ক্রান্তি, খেলাঘর, উদীচী, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশ নেয়।
সারাদেশে সন্ধ্যা সাতটায় ’৭১-এ পঁচিশে মার্চের নির্মম গণহত্যা স্মরণে মৌন পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করা হয়। প্রজন্ম চত্বরে সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন। এর মধ্যে দেশের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী পেশার লোকজন সংহতি প্রকাশ করেন। ঢাকার বাইরে যেখানে গণজাগরণ মঞ্চ আছে, সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শহীদ মিনারে মৌন পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করা হয়। যেসব এলাকায় গণজাগরণ মঞ্চ নেই, সেখানকার জনগণ নিজ নিজ এলাকার একটি নির্ধারিত স্থানে জড়ো হয়ে এবং সেখান থেকে মৌন পদযাত্রা নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হয়। রাত ১১টা ২৯ মিনিট থেকে রাত ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং সারাদেশে এবং দেশের বাইরে, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ‘ফিরে যাই একাত্তরে শিরোনামে একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করেন সব শ্রেণী পেশার লোকজন। রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে আলোর মিছিল নিয়ে জগন্নাথ হল গণকবরে যায় আন্দোলনকারীরা।
একাত্তরের পঁচিশে মার্চে গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাত ১১টা ৫৮ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে দুই মিনিট ‘নিষ্প্রদীপ মূহূর্ত’ পালন করে সবাই। গণহত্যার কাল রাত স্মরণে এই সময়ে মোমবাতি নিভিয়ে রাখা হয়। রাত ১২টার পর থেকে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে সকাল পর্যন্ত চলবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
ছাব্বিশে মার্চের কর্মসূচী ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আজ সকাল ৭টায় প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল থেকেই প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। বিকেল চারটায় মুক্তিযোদ্ধা জনতা মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশের পর রাত ৮টায় মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বার্ষিকী স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উড়ানো হবে ৪২টি ফানুস। মহান স্বাধীনতা দিবসে সারাদেশে ও গণজাগরণ মঞ্চ ও অন্যান্য স্থানে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, মহাসমাবেশের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। একাত্তরের বীর শহীদদের স্মরণ করতে ২৫ মার্চ রাতভর প্রজন্ম চত্বরে আমরা অবস্থান করব। আগামীকাল সকাল থেকে শুরু হবে ২৬ মার্চের কর্মসূচী। প্রজন্ম চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা জনতা মহাসমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, বীরাঙ্গনাসহ বিশিষ্টনরা বক্তব্য রাখবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন