মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৩

ঘুরেফিরে জামায়াতপন্থী নেতারাই হেফাজতে ইসলামের মঞ্চে

জনকণ্ঠ, স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমাদের সঙ্গে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই’ বার বার এমন দাবি করলেও সোমবার জামায়াত মদদপুষ্ট উগ্রবাদী নেতাদের নিয়েই সংবাদ সম্মেলন করল হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে জেগে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত হেফাজতে ইসলমের এ সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিচিতি নেতারাই। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা দেখাতে ব্যর্থ হয়ে হেফাজত নেতারা বলেছেন, আমাদের আন্দোলন পুরো শাহবাগের বিরুদ্ধে নয়, কতিপয় নাস্তিকের বিচার দাবিতে।
সোমবার রাজধানীর লালবাগে জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়ার মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হেফাজতের ঢাকা কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব। কিছু ধর্মভিত্তিক দল এবং শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত এ সংগঠনটির ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সংগঠনের কোন নেতা। জানা গেছে, সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করেন তাঁরা। স্মারকলিপি প্রদানের সময় হেফাজতে ইসলামের কোন্ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন তা জানা যায়নি। এদিকে হবিগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার শিকার ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতার সমর্থক কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ফয়জুল করীমের একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের ইসলামবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমামের ডাকা মহাসমাবেশে আসার পথে শিবির হামলা চালিয়েছিল এই মাদ্রাসা ছাত্রকে। সোমবার শোলাকিয়া ঈদগাহ ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ জানিয়েছেন, আহত কওমি মাদ্রাসার এই তরুণ জামায়াত-শিবিরের আকিদায় বিশ্বাসী নন। জামায়াত-শিবির করে না। কেবল আল্লাহ ও রসুলের বিধানকেই মুক্তির সোপান হিসেবে মানে। মওদুদীর বিধানের ওপর তার আস্থা নেই। এই কওমি তরুণের আজন্ম এই বিশ্বাসের কারণেই তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে একটি অমূল্য চোখ। যে চোখে আর কোন দিন দেখবে না ফয়জুল করীম। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা কেড়ে নিয়েছে কওমি মাদ্রাসার এই সাদা মনের মেধাবী ছাত্রটির চোখ। তিনি আরও জানান, কওমি মাদ্রাসার আজন্ম আকিদা ‘মওদুদী ফেৎনা বাতিল’ অন্য সব ওলামা-মাশায়েখের মতোই জানতেন এই মাদ্রাসার তরুণ। জামায়াতবিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতেই এসব আক্রমণ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। সংহতি পরিষদের কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে তিনি এই অভিযোগ করে বলেন, আক্রমণ আর আগ্রাসী হয়ে জামায়াতের মূল চরিত্রই মানুষের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। সহিংসতাই তাদের ধর্ম। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে সহিংসতাপরায়ণ রাজনীতি শুরু করেছে।

এদিকে জামায়াতের মদদপুষ্ট সংগঠন হেফাজতে ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে এবার দাবি তুলেছে, ধর্মের অবমাননা ও কুৎসা রোধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাসসহ ১২ দফা দাবি আদায় না হলে ৬ এপ্রিল কিছু ইসলামী দলের ডাকা ঢাকামুখী লংমার্চ কর্মসূচীর সঙ্গে যোগ দেবে তারাও। লংমার্চের পর আরও কঠিন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন হেফাজতের ঢাকা কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব। এ সময় উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের ঢাকা কমিটির আহ্বায়ক দাবিদার মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামী এক্যজোটের মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, খেলাফতে ইসলামীর আমির হাসানাত আমিনী, হেফাজতের সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রমুখ। এসব সংগঠনের প্রতিটির বিরুদ্ধেই রয়েছে জামায়াতের হয়ে কাজ করার অভিযোগ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন