রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ জীবন সায়াহ্নে তারামন
বিবি বীরপ্রতীক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ফাঁসির
রায় দ্রুত কার্যকর হোক তা তিনি দেখে যেতে চান। এতে মরেও শান্তি পাব। দেশের
তরুণ প্রজন্ম যেভাবে জেগে উঠেছে তাতে তিনি আশাবাদী। এই নতুন প্রজন্মই একদিন
রাজাকারমুক্ত সোনার বাংলা গড়বে।
বর্তমানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বীরপ্রতীক তারামন বিবি। টানাটানির সংসারে
চিকিৎসার খরচ ঠিকমত চালতে পারেন না তিনি। কিন্তু তারপরও কোন আক্ষেপ নেই
তাঁর। শুধু চাওয়া যে সব মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু, অসচ্ছল রয়েছেন সরকার যেন
তাঁদের দিকে সহায়তার হাত বাড়ান। তারামন বিবি এই প্রতিবেদকের কাছে তাঁর
বাজিপুরের বাড়িতে এসব কথা বলেন।
যুদ্ধে যে দু’জন নারী মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন তাঁর একজন কুড়িগ্রামের তারামন বিবি। দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৪ বছর পর ব্রহ্মপুত্র বিধৌত বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার শংকরমাধবপুর গ্রামে এক গবেষক তাঁর সন্ধান পান। চরম আর্থিক কষ্টে দিনমজুর স্বামীর সঙ্গে সংসার করছিলেন তিনি। সে সময় সারাদেশে তাকে নিয়ে হৈচৈ পড়েছিল। পরে বর্তমান সরকার কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা আরাজি পলাশবাড়ী গ্রামে ২৮ শতক জমির ওপর বাড়ি করে দেয়। সেখানে গড়ে উঠেছে একটি লাইব্র্রেরী। কুড়িগ্রাম শহরে বাড়ি থাকলেও তিনি প্রায়ই রাজীবপুরের বাড়িতে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধের ভাতায় চলছে সংসার। নিজে কষ্টে থাকলেও স্বাধীনতার ৪২ বছর পর স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় বীরপ্রতীক তারামন বিবির মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে মনে। তিনি মনে করেন দেশের সকল মানুষের ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তাসহ মৌলিক চাহিদা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
তারামন বিবি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫ বছর বয়সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ১১ নং সেক্টরে সম্মুখযুদ্ধ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি যক্ষ্মা, হাঁপানিসহ নানা রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন। ইতোমধ্যে তার একটি ফুসফুস অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় আমি অসুস্থ থাকি। আমারও দিন ঘনিয়ে এসেছে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তিতে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, একজন নারী হয়েও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও আমাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন রাজনৈতিক কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছে। তিনি মনে করেন, এদেশের মানুষের ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা ও বেকারদের কর্মসংস্থান হলে তাদের যুদ্ধ করা সার্থক হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন