রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

হেফাজতের নামে লংমার্চে রক্তের হোলিখেলায় মাতবে জামায়াতীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম ব্যানারে লংমার্চের নামে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠবে বলে অভিযোগ এনেছে প্রগতিশীল ইসলামী জোট। আধ্যাত্মিকতা, আউলিয়া কেরাম, আলেম-ওলামা, দরগা, মাজারসহ সুফিপন্থী ইসলামী দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোট দেশ ও পবিত্র ইসলামকে রক্ষায় অবিলম্বে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। রাজধানীতে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে জোটের নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসলামের শত্রু মওদুদীবাদী জামায়াত একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে চায়।
সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সরকার বাধা না দিলেও ৬ মার্চ লংমার্চে হত্যাকা- চালিয়ে রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠার অপকৌশল নিয়েছে জামায়াত। হেফাজতে ইসলামকে বলি, অবিলম্বে এ লংমার্চ বাতিল করুন। আর বিএনপি নেত্রীকে বলছি, আপনি জামায়াত ছাড়ুন। অন্যথায় দেশবাসী আপনার বিচার করবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানবী (সা), পবিত্র ইসলাম ও সকল ধর্ম অবমাননাকারীদের শাস্তির বিধান রেখে আইন পাস, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, মানবতাবিরোধীদের গ্রেফতার বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি, চট্টগ্রাম ১০ শীর্ষ সুন্নী আলেম হত্যা পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘর-বাড়ি হামলা এবং দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তা-বের প্রতিবাদে কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রগতিশীল ইসলামী জোট ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। জোটের লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক ও মুখপাত্র লায়ন এমএ আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ সৈয়দ হাবিবুল বাশার আল হাসানী, যুগ্ম মহাসচিব ডা. সৈয়দ আবু দাউদ মসনবী হায়দার, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের কো-চেয়ারম্যান ও গণফ্রন্ট চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের যুগ্ম মহাসচিব এম এ মোমেন, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক সচিব মাওলানা আ.ন.ম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মুহাম্মদ আলী ফারুকী, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মিয়াজি ও ইসলামী ফ্রন্টের অর্থ সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মতিন। আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, যুদ্ধাপরাধী, ইসলামবিকৃতকারী মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসী জামায়াতের ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এ দেশের জনগণের প্রাণের দাবি। ইসলাম বিকৃতকারী জামায়াত এ দেশের সহজ সরল মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মুক্তিকামী মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, গণহত্যা, লুটপাট জ্বালাও পোড়াওসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। এখন যখন তাদের মানবতাবিরোধী অপকর্মের বিচার চলছে তখনও তারা পূর্বের ন্যায় হত্যা, গুপ্তহত্যা, জ্বালাও পোড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশ হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ সকল অপকর্মের অর্থের যোগানদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামী ব্যানারে লংমার্চের নামে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির রক্তের হোলিখেলায় মতে উঠবে। হেফাজতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণ করছে স্বাধীনতা ও ইসলামের বিকৃতকারী জামায়াত। তাই আমরা ওই সংগঠনের সত্যিকারের নেতাদের প্রতি দেশ ও ইসলাম রক্ষায় অবিলম্বে কর্মসূচী বাতিলের আহ্বান জানাই। অন্যথায় কর্মসূচীর আড়ালে ফায়দা লুটবে জামায়াত-শিবির। কারণ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সরকার বাধা না দিলেও ৬ এপ্রিল লংমার্চে হত্যাকা- চালিয়ে রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠার অপকৌশল নিয়েছে জামায়াত। মাইজভান্ডারী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জামায়াত ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা ও ইসলামবিরোধী জামায়াত ত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশবাসী আপনার বিচার করবে। সম্প্রতি মহানবী (স) পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিয়ে ব্লক, ফেইসবুকে কটূক্তির মাধ্যমে অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি অপশক্তি। কিন্তু ইসলাম ও মহানবীকে (স) তারা যত অপমান করেছে জামায়াত প্রতিদিন ইসলামকে তারচেয়ে বেশি বিকৃত করছে, ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই জামায়াত ইসলামের শত্রু সন্ত্রাসী সংগঠন। এটা ইসলামী কোন দল নয়। জামায়াত ইসলামের লেবেলে মহানবী (স) ও আওলিয়ায়ে কেরামবিদ্বেষী ভ্রান্ত মওদুদীবাদের দর্শনে এ দেশে সন্ত্রাসী কায়দায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়। এদের কারণে শান্তি ও মানবতার ধর্ম পবিত্র ইসলাম আজ প্রশ্নবিদ্ধ। লায়ন এম এ আউয়াল বলেছেন, জামায়াত সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদী দল। এদের কারণে আমাদের পবিত্র ইসলাম সমালোচনার ভাগিদার হচ্ছে। এদের অপকর্মের দায় পড়ছে সত্যিকারের ইসলামী দলগুলোর ওপর। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের আউলিয়া কেরাম, আলেম-ওলামা, তরিকতপন্থী জনগণের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দুর্বলতার সুযোগেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদীরা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে ‘শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে ধর্মের নামে জামায়াত-বিএনপির অপরাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের নামে জামায়াতের নাশকতার ষড়যন্ত্রের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হবে। জামায়াতের ইসলাম আর শান্তির ধর্ম ইসলাম এক নয়। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী ভ্রান্তভাবে ইসলামের ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ইসলামের পোশাক ব্যবহার করে হত্যার পরিকল্পনা করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন