শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ॥ জামায়াতের ৫ নেতা

০ এরা মূলত জামায়াত-শিবিরের বি টিম
০ অর্থও যোগান দেয় তারাই
০ নাস্তিকের বিচার দাবি করলেও ওদের আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল
জনকণ্ঠ । শংকর কুমার দে/বিভাষ বাড়ৈ ॥ ‘আমাদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নেই’- একথা প্রচার করলেও বেরিয়ে পড়েছে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী হেফাজতে ইসলামের আসল চেহারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ব্লগারদের নাস্তিক ও মুরতাদ অভিহিত করে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। কিন্তু জানা গেছে, সংগঠনের কিছু ব্যক্তি ছাড়া সকলেই বিএনপির মিত্র জামায়াতসহ উগ্রপন্থী কয়েকটি দলের নেতা। চট্টগ্রামে ‘হেফাজতে ইসলাম’ মূলত জামায়াত-শিবিরের একটি অংশ মাত্র। যার নেপথ্যে কাজ করছেন জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতা। জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীর দায়ে অভিযুক্ত এক বিএনপি নেতার পরিবারের অর্থ ও পরিকল্পনায় চলছে এর কার্যক্রম। এদিকে চট্টগ্রাম ছাড়া সংগঠনটির ঢাকাসহ কোথাও শাখা নেই। অথচ হঠাৎ সংগঠনটির আশুলিয়া শাখার নামে সংবাদ সম্মেলন করে জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ ঠেকানোর হুমকিতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। মূল নেতারা বললেন, আশুলিয়ায় কারা কাজ করছে আমরা জানি না। তাদের আমরা চিনি না। অধিকাংশ নেতাই দেখেননি যাঁদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন সেই ব্লগারদের কোন লেখা!
অন্যদিকে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম-ওলামারা গনজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের সম্পর্কে বলেছেন, প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোন বিষয় নিয়ে কাউকে নাস্তিক-মুরতাদ বলা যাবে না। বাস্তবে যদি গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা বা যে কেউ ইসলাম ও ইসলামের বিশেষ কোন বিধান নিয়ে কটূক্তি করে থাকেন, তাহলে তাঁরা অবশ্যই নাস্তিক-মুরতাদের কাজ করেছেন। আর যদি তাঁরা এটি না করে অন্য কেউ করে থাকেন, সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামী চিন্তাবিদরা আরও বলেছেন, কে বা কারা ব্লগে ইসলাম ও নবীকে নিয়ে কুৎসা রচনা করেছে তার হিসাব নেই। একজন দু’জনের ব্যক্তিগত ব্লগের কথা নিয়ে সব ব্লগারের ওপর অপরাধের পাপ চাপিয়ে দেয়া অপরাধ। ব্লাগার তো যে কেউ হতে পারে, এমনকি আমাদের আলেম-ওলামারাও তো ব্লগার হতে পারেন। আসল কথা হচ্ছে কে মহানবীর (দ) সম্পর্কে অশ্লীল কথা বলছে আর কে কোন মাধ্যমে তা প্রচার করছে। ব্লগের লেখা কয়জন পড়েন? ৫০ থেকে ১০০ জন। কিন্তু আমার দেশ এটাকে ছেপে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে প্রচার করেছে? সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। আজকে ইসলামের নামে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই হঠাৎ চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠন আলোচনায় আসে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে দাবি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও বার বার সংগঠনটির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নেই। তবে ধীরে ধীরে বের হচ্ছে সংগঠনটির নেতা ও এর কর্মকা-ের চিত্র। বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের দেয়া তথ্যপ্রমাণ ও সংগঠনটির দাবি দেখে জানা গেছে, সংগঠনের কিছু ব্যক্তি ছাড়া সকলেই বিএনপির মিত্র জামায়াতসহ উগ্রপন্থী কয়েকটি দলের নেতা। চট্টগ্রামে ‘হেফাজতে ইসলাম’ মূলত জামায়াত-শিবিরের একটি অংশ মাত্র। যার নেপথ্যে কাজ করছেন জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতা। এই পাঁচ নেতার মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জঙ্গী কানেকশনেরও অভিযোগ রয়েছে। হঠাৎ করেই হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও অর্থের উৎস নিয়ে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। চট্টগ্রামের পর শুক্রবার রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়াতে সমাবেশ প- করে দেয়ার হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম আশুলিয়া শাখার ব্যনারে কিছু ব্যক্তি। হেফাজতে ইসলামের হঠাৎ করে এই শক্তির উৎস খুঁজতে তৎপরতা শুরু করে সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জানতে পারেন হেফাজতে ইসলামের আড়ালে সব কিছুই হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা মোতাবেক। পরিচালিত হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতার ইশারা-ইঙ্গিতে। এঁদের সকলে সংগঠনটিতে সদস্য না হলেও এঁরাই যোগাযোগ রক্ষা করছেন জামায়াতের সঙ্গে।

শাহ আহমদ শফী হেফাজতে ইসলামের আমির হলেও মূলত ওই পাঁচ ব্যক্তির কমান্ডেই চলছেন তিনি। ইসলামী দলগুলোর অভিযোগ, একজন হলেন নেজামী ইসলামী নামে আরেকটি ধর্মভিত্তিক দলের চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী। আব্দুর রহমান কারাগারে আটক সাকা চৌধুরীর নিকটাত্মীয় বলে দাবি উঠেছে। আছেন চট্টগ্রাম হাটহাজারীর সাবেক ছাত্রশিবির নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী। কয়েকদিন আগেও তিনি জামায়াতের ওই থানায় সক্রিয় ছিলেন। আছেন সাকা মুক্তি পরিষদের অন্যতম নেতা এমএ হাশেম খান, রাঙ্গামাটি শিবিরের সাবেক নেতা ও বর্তমানে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসান নিজামী এবং জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক নেজামী ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি এজাহারের ছেলে হারুন এজাহার। পিতা-পুত্র দু’জনকেই জঙ্গী সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদের সঙ্গে সম্পৃক্তার অভিযোগে আটক করে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সংগঠনটির সংবাদ সম্মেলনেও এদের দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে এবং ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন করলেও মূলত তাদের ব্যানারে উচ্চারিত হচ্ছে সেই জামায়াত-শিবিরের দাবিগুলোই। ইসলাম অবমাননার কথা বললেও মূলত জামায়াতে ইসলামী যেসব দাবি নিয়ে দেশে সহিংসতা চালাচ্ছে সেসব দাবিই ফুটে উঠছে হেফাজতে ইসলাম নেতাদের মুখে। বক্তব্যে বিভিন্ন সময় জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবি তোলা হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে এবং নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ফেসবুক পেজ ‘বাঁশের কেল্লা’। অথচ এই সংগঠনের শুক্রবারের কর্মসূচীতেও বাঁশের কেল্লা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়।

চট্টগ্রামে ছাড়া সংগঠনটির ঢাকাসহ কোথাও শাখা কমিটি নেই। অথচ হঠাৎ সংগঠনটির আশুলিয়া শাখার নামে সংবাদ সম্মেলন করে জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ ঠেকানোর হুমকিতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। আশুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে কারা কর্মসূচী দিয়েছে, জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক সম্পাদক আ ন ম আহমদউল্লা বলেন, কারা করেছে এটা আমাদের জানা নেই। তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাহলে আপনাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ এটা করতে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হুজুরের (আহমদ শাহ শফি) অনেক ছাত্র এবং ভক্ত আছেন। তাঁরাই এটা করতে পারেন। শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি স্পষ্ট। মূলত আমার দেশ আর নয়া দিগন্ত পত্রিকার সংবাদের ওপর ভিত্তি করেই তারা সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে। জামায়াত নেতারা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিরোধিতা করেছেন। আপনাদের সঙ্গে কোন ভুল বোঝাবুঝি থাকলে আলোচনা করে তো সমাধান করা যেত, কেন আলোচনায় বসলেন না, জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক বলেন, এটা আমার জানা নেই। তিনিসহ অন্য কয়েক নেতা বললেন, ব্লগাররা মহানবী (স) এবং ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর লেখা লিখেছে। আমরা মনে করি, তারা এসব ইচ্ছা করে লিখেছেন। কারা এসব করেছেন, জানতে চাইলে নেতারা সকলেই বলেন, আমি দেখিনি। অনেকে দেখেছেন। তাঁরা কেউ নিজে দেখেননি। প্রচার সম্পাদক বললেন, আমার দেশসহ কয়েকটি পত্রিকা এসব লিখেছে। গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ইমরান এইচ সরকার কিছু লিখেছেন? আপনি দেখেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। তবে না থাকলেও তিনি তো ব্লগারদের নেতা। তাঁরা নাস্তিক। বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ তওহিদী জনতা সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন সাইফী বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম চলছে জামায়াতের কথামতো। এটা তারাই চাচ্ছে।

অন্যদিকে সিলেটের প্রখ্যাত আলেম ও ঐতিহ্যবাহী দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ) জামেয়া ক্বাসিমূল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া বলেছেন, অপ্রমাণিত কোন বিষয় নিয়ে কাউকে নাস্তিক-মুরতাদ বলা যাবে না। বাস্তবে যদি গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তারা ইসলাম ও ইসলামের বিশেষ কোন বিধান নিয়ে কটূক্তি করে থাকেন, তাহলে তাঁরা অবশ্যই নাস্তিক-মুরতাদের কাজ করেছেন। আর যদি তাঁরা এটি না করে অন্য কেউ করে থাকেন, সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। যে বা যাঁরাই এ ধরনের কাজ করুন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের কাজে যাঁরা জড়িত তাঁদের শাস্তি দেয়া গেলে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে দুঃসাহস দেখাবেন না। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেছেন, আগে প্রমাণ হতে হবে কে অপরাধ করেছে। কে বা কারা ব্লগে ইসলাম ও নবীকে নিয়ে কুৎসা রচনা করেছে তার হিসেব নেই। একজন দু’জনের ব্যক্তিগত ব্লগের কথা নিয়ে সব ব্লগারের ওপর অপরাধের পাপ চাপিয়ে দেয়া অপরাধ। ব্লাগার তো যে কেউ হতে পারেন। এমনকি আমাদের আলেম-ওলামারাও তো ব্লগার হতে পারেন। আসল কথা হচ্ছে কে মহানবীর (দ) সম্পর্কে অশ্লীল কথা বলছেন আর কে কোন মাধ্যম তা প্রচার করছেন।

হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির হুমকি-ধমকির নেপথ্য চেহারার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। আদপে জামায়াতে ইসলামীর ‘বি টিম’ মুখে যাই বলুক না কেন? যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোই হচ্ছে তাদের অভিন্ন লক্ষ্য। ইসলাম রক্ষার ধুয়া তুলে ব্লগারদের শাস্তি দাবির ইস্যু নিয়ে হেফাজতে ইসলাম যে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তার নেপথ্যে রয়েছে জামায়াতের নীলনক্সা। হেফাজতে ইসলামকে সংগঠিত করে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিরাট অঙ্কের টাকা ছড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে এবং ব্লগারদের শাস্তির দাবির ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার গোপন ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে। এজন্য হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির দিকে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীর দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠার পর থেকেই তারা হেফাজতে ইসলাম নামে আরেকটি বি টিম সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় জামায়াত। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে জামায়াত রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জেলাকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলাম নামে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টা আরেকটি জনতার মঞ্চ বা অন্য কোন নামে মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে হেফাজতে ইসলাম। জামায়াতে ইসলামীই গোপনে হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে এই ধরনের মঞ্চ করাচ্ছে। এমনকি একটা সময় দেখা যাবে যেখানে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপন করা হবে সেখানেই হেফাজতে ইসলাম আরেকটি অনুরূপ মঞ্চ স্থাপনের ঘোষণা দেবে। এতে পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করানোর সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

হেফাজতে ইসলাম শুক্রবার জুমার নামাজের দিন যে মিছিল বের করেছে তাতে দেখা গেছে যারা অংশ নিয়েছে তারা জামায়াত-শিবিরেরই নেতাকর্মী। জামায়াতে ইসলামীর ব্লগারদের তৈরি বাঁশের কেল্লা বন্ধের প্রতিবাদে স্লোগান দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশে ও মিছিলে অংগগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের নাস্তিক অভিহিত করে তাদের প্রতিহত করার হুমকি দিচ্ছে অথচ জামায়াত-শিবিরের ব্লগার ও তাদের বাঁশের কেল্লার ব্লগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তাহলে তাদের উদ্দেশ্যটা কি তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন উঠেছে গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররা যদি নাস্তিক হয় তাহলে জামায়াত-শিবিরের ব্লগাররা নাস্তিক নয় কেন? গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের প্রতিহত করার হুমকি দিলে জামায়াত-শিবিরের ব্লগারদের প্রতিহত করার হুমকি দেয়া হচ্ছে না কেন? জামায়াত-শিবিরের বাঁশের কেল্লার ব্লগ বন্ধের প্রতিবাদে স্লোগান ওঠে না কেন? এসব প্রশ্নের ভেতরেই হেফাজতে ইসলামের আসল উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা মনে করছেন।

শুধু তাই নয়, জামায়াত-শিবিরের প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে ফাঁসির আসামি যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে যে স্লোগান ওঠে, সেই একই স্লোগান হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিল থেকেও উঠেছে। হেফাজতে ইসলাম শুক্রবার জুমার নামাজের পর যে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে তাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে স্লোগান দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সারাদেশে জামায়াত-শিবিরই সশস্ত্র সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর জন্য মাঠে নামিয়েছে হেফাজতে ইসলামকে। সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের যেসব কর্মী বাহিনী তারাও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বাহিনীই। এ জন্যই হেফাজতে ইসলাম হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি কঠোর কর্মসূচীর হুমকি ও হুঙ্কার দিচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনটির প্রতি অনুসন্ধান ও সতর্ক নজরদারি করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জামায়াতে ইসলামীরই উল্টো পিঠ হেফাজতে ইসলাম। তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানো ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির নেতৃত্বের সামনে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের পর্দার অন্তরাল থেকে পরিচালিত করছে জামায়াতে ইসলামী। হেফাজতে ইসলাম হঠাৎ করে এভাবে সংগঠিত হয়ে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে এবং ব্লগারদের নাস্তিক ফতোয়া দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে কিভাবে? জামায়াতের অভিন্ন কর্মসূচীই পালনের জন্য মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম।

পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি জানান, হেফাজতে ইসলাম যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে তাহলে আমরা তাদের সহায়তা করব। আর যদি হেফাজতে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে মিথ্যা অজুহাতে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমে জানমাল নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোরহস্তে তা দমন করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন