শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

আসলেই কি আমরা জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চাই?

মুনতাসীর মামুন
জামায়াত নিষিদ্ধ করা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার দ্বিমত নেই। আরও অনেকেরই দ্বিমত নেই। তবু জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি করে আসছে। দাবি জানাতে জানাতে আমরা অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও অন্তত শাহরিয়ার কবির ক্লান্ত হননি। অক্লান্তভাবে জামায়াতের অপকর্ম তুলে ধরেছেন, নিষিদ্ধকরণের কথা বলেছেন। ১৯৯৪ সালেই তিনি প্রকাশ করেছেন ‘জনতার আদালতে জামায়াতে ইসলামী।’ কিন্তু সবাই তো আর শাহরিয়ার কবির নয়, সবারই সমস্যা আছে। এটি অবশ্য শাহরিয়ারের বোধের মধ্যে নেই। গত দু’মাস জামায়াতের আসল রূপটি প্রকাশিত হয়েছে। তারপর থেকে জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবি ব্যাপকতা পেয়েছে বটে কিন্তু স্থিতাবস্থা এখনও বজায় আছে। এমনকি যে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে তরুণ ও প্রবীণরা উচ্ছ্বসিত সেই মঞ্চের একটি দাবিও সরকার কেন, যাঁরা উচ্ছ্বসিত তাঁরাও মানেননি। সে কারণেই এতদিন পর মনে হয়েছে, বাস্তবতা বড় কঠিন। এবং সে কারণেই প্রশ্ন জেগেছে সত্যিই কি আমরা চাই জামায়াত নিষিদ্ধ হোক? নাকি এটি নিছক একটি স্লোগান। যে স্লোগান দিল নিজের প্রগতিশীলতা প্রমাণ পেল, আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলো কিন্তু সত্যিকার আন্দোলনে যেতে হলো না।
প্রথমে যে বিষয়টি বলা দরকার, বার বার অবশ্য বলেও এসেছি যে, জামায়াত যা ছিল ১৯৭১ সালে এখনও তা আছে। ১৯৭১ সালে তার হিংস্রতার কোন মাপকাঠি ছিল না। এবং গোলাম আযম নিজামী মুজাহিদরা কাউকেই ছাড় দেয়নি। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি না থেকেও তা উপলব্ধি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন। সমাজরাষ্ট্রে অশুভ ছায়া যাতে বিস্তার না করে তা তিনি চেয়েছেন। কারণ তাঁর কাছে মানুষের স্বার্থটা ছিল বড়। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানও জামায়াতকে বুঝেছিলেন। এই জন্য তাদের অবমুক্ত করে তাদের হিংস্রতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছেন নিজ স্বার্থে। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন তিনি নষ্ট করতে চেয়েছেন নিজ মহিমা বাড়ানোর জন্য। সেজন্য এদের দরকার ছিল। খালেদা জিয়ার দরকারও সেই একই রকম। মুক্তিযুদ্ধের মৌল অর্জন স্বীকার করলে তাঁর রাজনীতি থাকে না। চৌদ্দ দলের অনেকে আহ্বান জানাচ্ছেন খালেদাকে যে, গোলাম আযমদের ত্যাগ করতে। তাঁদের একটি ধারণা, খালেদা নিজামী আলাদা হলে বোধহয় তাঁদের ভোটের বাক্স ভরে উঠবে। এঁদের আমাদের অর্বাচীন মনে হয়। এঁদের রিসাইকেল্ড রাজনীতিবিদ বলা যেতে পারে। দু’টি দল আলাদা থাকলেও তারা কখনও আওয়ামী লীগে ভোট দেবে না। ভোট ভাগও হবে না। এদিক থেকে তাদের কমিটমেন্ট মৃদু বাম, কঠিন বাম এবং আওয়ামী লীগ থেকে বেশি।

গত দু’মাসে জামায়াত-বিএনপি যা করেছে তা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। লক্ষ্য করবেন আমি জামায়াত-বিএনপির কথা এক সঙ্গে বলছি। কারণ রাস্তায় তারা যৌথভাবে অপারেট করছে। তাদের আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। তারা যে মানুষ নয় বা মানবিক গুণাবলী যে তাদের নেই সেটি প্রতিভাত হয়েছে। আওয়ামী লীগের যাঁরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তাঁরাও হয়ত বুঝেছেন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বৈবাহিক সম্পর্ক গড়লেও রাজনীতির প্রশ্নে তারা আপোসহীন। সুশীল সমাজের অনেকেও ধাক্কা খেয়েছেন এই হিংস্রতা দেখে কিন্তু তাঁরা এদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন তা বলা যাবে না। যারা নিরপেক্ষ তারাও ভাবছে সত্যি সত্যি জামায়াত এলে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বসবাস করা যাবে তো। নাকি ’৭১-এর মতো স্ত্রী-কন্যা-মাতা গনিমতের মাল হয়ে যাবে। লক্ষ্য করবেন, সবাই জামায়াতকে দোষারোপ করছে, বিএনপিকে নয়। দুটিই অশুভ শক্তিÑ এ কথা তাঁরা স্বীকার করেন না। তাঁরা জামায়াতকে শুধু অশুভ মনে করেন। এটি একটি ফ্যালাসি। আমাদের কপালে আরও দুর্ভোগ আছে। কেননা চৌদ্দ দলের, সুশীল সমাজের অনেকে এই ফ্যালাসি বিশ্বাস করেন।

রাজনীতির গভীরে যাঁরা যেতে চান না, তাঁরাও বলেছেন, গত এক সপ্তাহ বাদ দিলে গত ৭ সপ্তাহ, চৌদ্দ দল বা আওয়ামী লীগের কাউকে রাস্তায় দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের অধিকাংশ ওই সময় নিজ এলাকায় যাননি বা যাওয়ার সাহস পাননি। এর কারণটি কী? চৌদ্দ দল বা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড কি তা ভেবে দেখেছে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যাকে আমরা সবাই পছন্দ করি, তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারদের মতো অনুপস্থিত থাকেন। এত বড় ক্রাইসিসে এত বড় দলের এত বড় সম্পাদক ও এত বড় বড় নেতার এত অসহায় অবস্থা আর চোখে পড়েনি। দলীয় সভানেত্রী আমাদের মন্তব্য উপেক্ষা শুধু নয়, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কিন্তু তা বলে বিষয়টা অসত্য তা কখনও ভেবে দেখেছেন কেন তাদের এ রকম আচরণ? সুতরাং আমরা যদি ভাবি জামায়াত প্রতিরোধে ১৪ দল/আওয়ামী লীগ তেমন প্রমাণিত হয় না। উৎসাহী নয় তা কি ভুল হবে। ১৪ দলের ওপর তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে।

মিডিয়ার দৌলতে এ রকম একটি বিষয় দাঁড়িয়েছে যে, ৬৪টি জেলায় জামায়াত-বিএনপি এমন করার ক্ষমতা রাখে। আসলে তা ঠিক নয়। বিশেষ যত স্থানে সহিংসতা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিবিদদের খতিয়ে দেখা উচিত কেন ওইসব জায়গায় হিংস্ররা হিংস্রতা দেখতে পারল? সেখানের সংসদ সদস্য ও নেতাদের বিষয়ে তাদের দুবার ভেবে দেখা উচিত। সব কথার সারমর্মÑ যেসব রাজনৈতিক দলের ওপর আমরা আস্থা রাখি তাঁরা সিভিল সমাজকে নিয়ে দূরে থাকুক নিজের দলীয় কর্মীদের নিয়েও মাঠে নামতে পারেননি। একটি যুক্তি দেয়া হয়, নামলে আরও ক্ষয়ক্ষতি হতো। সব পুড়িয়ে, ধর্মান্তর করার পর আর কী ক্ষতি হতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

গত দু’মাসের ঘটনায় আরেকটি মজার বিষয় চোখে পড়েছে। সরকারী দলের নেতানেত্রী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী সবাই অন্দরে বাইরে, এমনকি সংসদে উচ্চকণ্ঠে বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে। তারাই তো নিষিদ্ধ করবেন। দাবি তো তুলব আমরা। যাঁরা নিষিদ্ধ করবেন তাঁরাই যখন নিষিদ্ধকরণের দাবি তোলেন তখন ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে এ দাবি কতটা আন্তরিক বা কতটা সিভিল সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঠোঁট সেবা বা লিপ সার্ভিস?

এরপর আসি মিডিয়ার ব্যাপারে। বিদ্যুতায়িত মাধ্যমে টকশোতে এ বিষয়ে প্রচুর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের সহিংসতা দেখান হয়েছে, বিএনপির সহিংসতাও খানিকটা স্থান পেয়েছে। বিশ্বজিতের ঘটনা যতবার দেখান হয়েছে, এই ঘটনা যে কত খারাপ [খারাপ তো বটেই মর্মান্তিকও যা কোনক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়] তা বারংবার উচ্চারিত হয়েছে। জয়পুরহাটে মুসলমানদের যে তওবা পড়ান হলো ও ‘ইসলামে’ আবার দীক্ষা দেয়া হলো বা কীভাবে পিটিয়ে কুপিয়ে পুলিশ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের মারা হলো তা কিন্তু বারংবার দেখানো হয়নি, টকশোতেও আসেনি। বিশ্বজিৎ হত্যায় যে ২০ জনেরও ওপরে ‘ছাত্রে’র বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে তাও উল্লিখিত হয়নি। ১৯৯৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর শিবির আক্রমণ করে এবং অনেকে খুন হন। যদ্দুর মনে পড়ে, বিএনপির এক নেত্রীর পুত্র রিমুও খুন হন। সংসদে বিএনপি নেতারা জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন। লক্ষণীয়, শিবিরের হত্যাকারীদের কখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য অর্থাৎ এ আমলে হত্যাকারীকে সম্ভব হলে ধরা হয়। খালেদা নিজামী আমলে ধরা হয় না এটি কেউই উল্লেখ করেননি। খালেদা যাদের টিভি লাইসেন্স দিয়েছেন তারা এ ধরনের কাজ করতেই পারে কিন্তু হাসিনা যাদের লাইসেন্স দিয়েছেন তারাও এমনটি করবেন? নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী জানেন তাঁরা লাইসেন্স কাদের কাছে বিক্রি করেছেন? তাদের তিনি কেন এখনও আনুকূল্য দেখাবেন? শেখ হাসিনার আমলে যাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তারাও একই রকমের কাজ করেছে। টকশোর নামে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের তারা নিয়ে এসেছে এবং আসছে ও তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি জামায়াত-বিএনপিকে এক ধরনের সমর্থন। লক্ষ্য করবেন, অনেক টিভির স্ক্রলে এখন লেখা হয় না জামায়াত-বিএনপি আক্রমণ করেছে। লেখা হয়Ñ দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধাপরাধ বিচার তো নেগোশিয়েবল নয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যাপারও নয়। কিন্তু কেন এই মতলববাজি? কারণ ব্যবসায়িক সম্পর্ক। খবরের কাগজেও একই ব্যাপার। প্রধান কাগজগুলো জামায়াতের বিরুদ্ধে লেখা/খবর ছাপতে রাজি হলেও বিএনপির ব্যাপারে নয়। সেখানেও টাকার সম্পর্ক। কিন্তু তরুণরা যখন জেগে উঠেছিল তখন তারা লিপ সার্ভিস দিচ্ছিল।

এ রকম একটা সময়ে আমি আবেদ খানকে ফোন করে জানিয়েছিলাম, এটিএন নিউজ সুুখের বিষয় একটি পক্ষ নিয়েছে, কিন্তু বারবার ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে, ব্যাপারটা কেমন গোলমাল হয়ে গেল না? তিনি জানালেন, ‘আমি খেয়াল করিনি, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ সেখানেও সময় টিভিতে শুধু আমি ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন দেখিনি। জনকণ্ঠ যে নিরপেক্ষ নয় তা সবার জানা। সেখানেও একদিন এমন বিজ্ঞাপন ছাপা হওয়ার পর স্বদেশকে প্রশ্ন করি। জনকণ্ঠের প্রবল অর্থকষ্ট সত্ত্বেও তারা সেই বিজ্ঞাপন আর ছাপেনি। সুতরাং কমিটমেন্ট এক জিনিস সেøাগান অন্য জিনিস, বিষয়টিও অনুধাবনের সময় এসেছে। সুতরাং মিডিয়া যে লিপ সার্ভিস দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই, সৌজন্যমূলক সম্পর্ক অটুট। কিন্তু যখন জানা গেল তিনি গোলাম আযমভক্ত তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকরাও কতটা কমিটেড সে প্রশ্ন জাগে। কারণ জনাব চৌধুরী এখনও তাদের নেতা। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদেরও নেতা।

গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থা যখন তুঙ্গে তখন আমি খুলনা গিয়েছিলাম। স্বাচিপের নেতা ডা. বাহার আমাকে খুলনা মেডিক্যালে নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু বলার জন্য। সেখানে কয়েক শ’ ডাক্তার, ছাত্র, ইন্টার্নি ছিলেন। সবাই জামায়াত নিষিদ্ধ চান। আমি বললাম, তরুণ তুর্কি হওয়ার দরকার নেই। সামান্য কয়েকটি কাজ করুন। ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখবেন না। কারণ তা জঙ্গীবাদে পুঁজি যোগায়। তাদের হাসপাতালে প্র্যাকটিস করবেন না বা ইবনে সিনার ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন না এবং যারা [টিভি, খবরের কাগজ বা অন্যরা] এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের বর্জন করুন। তার আগে খান এ সবুরের নামে যে রাস্তা সেটি বাতিল করুন। কারণ হাইকোর্ট এটি স্থগিত করার কথা বলেছে মেয়র সে আদেশ অস্বীকার করেছেন। এবং হাইকোর্টও সে ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। তাদের উৎসাহ দেখে মনে হলো এখনই একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমার চার দশকের অভিজ্ঞতায় এ রকম উত্তেজনা অনেক দেখেছি তাই উত্তেজিত হইনি। আজ প্রায় ১ মাস হয়ে গেল, তাদের কোন সাড়াশব্দ পাইনি। এই হচ্ছে অবস্থা।

গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এ ধরনের বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছিল। উদ্যোক্তারা কখনও খতিয়ে দেখেননি, সে আহ্বান কতটা সাড়া ফেলেছে। শুধু সেøাগানে সমাজ বদলায় না। বিপ্লবও হয় না। চার দশক বিভিন্ন আন্দোলন করে অন্তত এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুনেছি জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান সরকার স্বাচিপের সঙ্গে যুক্ত। এ মুহূর্তে জামায়াত নিষিদ্ধ চান এ রকম কয়েকজন স্বাচিপ নেতাকে অনুরোধ করেছি ব্যক্তিপর্যায়ে এ তিনটি দাবি মানতে, কেউ সাড়া দেননি। অথচ এঁরা সবাই জামায়াত নিষিদ্ধ চান।

সিভিল সমাজের যাঁরা নেতা হিসেবে আওয়ামীবিরোধী সংবাদপত্র ও টিভিতে পরিচিত তাঁদের একজনও জামায়াত নিষিদ্ধের কথা উচ্চারণ করেননি। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ থেকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কাউকে তো টু শব্দটি করতে দেখিনি। সংস্কৃতি জগতের কতজন সোচ্চার হয়েছেন?

সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ করছে না বলে আমরা ক্ষুব্ধ হতেই পারি। সরকার বা পুলিশের পক্ষে একা জামায়াত-বিএনপির নাশকতা ঠেকানো মুশকিল। আমরা যে বাস্তবতা ভুলে যাই তাহলো দেশের কমপক্ষে ৫০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগবিরোধী। আমি যে উদাহরণগুলো দিলাম তা অস্বীকার করতে পারবেন? এদেরও মৃদু জামায়াতী ধরলে সে সংখ্যা কত দাঁড়ায়? শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন। তাঁর পক্ষে এ হিসাব গণনায় না নেয়া মুশকিল। আমরা যখন এত হিসাব কেতাব করি, তো একজন রাজনৈতিক নেতা তা করবেন না এটি তো বাস্তব নয়। আমরা যারা জামায়াত নিষিদ্ধ করার কথা বলছি তারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজের কাজটুকু করছি কি না সেটা আগে দেখা উচিত। জামায়াত যে আজ তা-ব করে পার পেয়ে যাচ্ছে তার কারণ তার অর্থনৈতিক শক্তি। ডা. আবুল বারকাত গত পাঁচ বছর এই কথা বলেছেন, লিখছেন। যে তাহমিদ গণজাগরণ মঞ্চের একনিষ্ঠ কর্মী ছিল সিলেটে, সে কেন জামায়াতের পক্ষে মিছিলে নেতৃত্ব দেয় এবং মারা যায় তা কখনও ভেবেছেন? আমাদের সবাইকে এভাবে অদৃশ্য বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে বিএনপি-জামায়াত। সে কারণে আমরা ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা উঠাই না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব ভাংচুর হয়, বিএনপি-জামায়াতের হয় না, ইবনে সিনা ক্লিনিকে সবার আগে যাই। গণজাগরণ মঞ্চের ব্যাপারে আকুল হই কিন্তু স্ব স্ব অবস্থানে থাকি তাদের দাবি মানি না। আবার গণজাগরণ মঞ্চে জামায়াতের ব্যাপারে সোচ্চার কিন্তু যে বিএনপির জোরে জামায়াত দাঁড়িয়ে, যে বিএনপি তাদের প্রায় নর্দমার সঙ্গে তুলনা করছে তাদের ব্যাপারে সোচ্চার হবে না কারণ তাহলে রাজনীতি হবে, বিএনপি-জামায়াতের মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলি আর শেখ হাসিনাকে বলি জামায়াত নিষিদ্ধ করতে। বলিহারি বাস্তবতা!

আমরা আমাদের কাজটুকু করি, সামান্য অহিংস কাজ, দেখবেন আগামী কয়েক মাসে জামায়াতের হিংস্রতা অনেক কমে গেছে। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন একটি রাষ্ট্রকে অবলুপ্ত করেছিল। তখনকার মানুষ কত কমিটেড ছিলেন এবং নেতাদের কতটা বিশ্বাস করতেন, ভেবে দেখুন! আওয়ামী লীগের জামায়াত অংশকে চিহ্নিত করুন এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে অটুট থাকুন, দেখবেন সরকার বাধ্য হবে কাজ করতে। আওয়ামী লীগকে ভেবে দেখতে বলুন, আমাদের ভোট তাদের জন্য জরুরী কি না?

শুরুতেই এ কারণে বলেছিলাম, আসলেই কি আমরা জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চাই?
 #
জনকণ্ঠ
বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন