ডা. এম এ হাসান
কাদের মোল্লার বিচারের রায় যখন ঘোষণা হয় তখন আমি দেশে। এরপর আমার ছেলের অসুস্থতার প্রেক্ষিতে কারণে বেশ কিছুদিন বিদেশে থাকার কারণে তরুণ প্রজন্মের সংকল্পের অনির্বাণ শিখা আমূল অবলোকন করতে পারিনি। তবু অনুভবে করেছি, দেশের সাধারণ মানুষ এবং নবীনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে কিভাবে অন্তরের গভীরে স্থান দিয়েছে। ভেবেছি, আমাদের জীবনের দীর্ঘ প্রয়াস একেবারে বিফলে যায়নি। প্রত্যাশিত বিচারটি পেতে ব্যর্থ হয়েই জনগণ তাদের হতাশা ও আবেগ ব্যক্ত করেছে শাহবাগে। তরুণ সমাজ তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয়ার জন্যই সমবেত হয়েছে শাহবাগে। এর মাঝে কোনো শঠতা বা রাজনীতি ছিল না।
তারা সেখানে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘাতকের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে। অনেকেই সেই দাবিটিকে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখার এবং দেখাবার চেষ্টা করেছেন। যারা জামাতের সমর্থক এবং বা বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারাই মূলত বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন। সত্যিকার অর্থে এটা ছিল একটি ‘পপুলার পারসেপশন’কে ভিত্তি করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হৃদয়গ্রাহী নিখাদ জনদাবি। আবেগের স্থান এবং সাধারণ যুক্তির স্থান থেকেই এ দাবিটি উত্থাপিত হয়। এটি অস্বাীকার করলে বিগত নির্বাচনের রায়কে অস্বীকার করতে হয়।কাদের মোল্লার বিচারের রায় যখন ঘোষণা হয় তখন আমি দেশে। এরপর আমার ছেলের অসুস্থতার প্রেক্ষিতে কারণে বেশ কিছুদিন বিদেশে থাকার কারণে তরুণ প্রজন্মের সংকল্পের অনির্বাণ শিখা আমূল অবলোকন করতে পারিনি। তবু অনুভবে করেছি, দেশের সাধারণ মানুষ এবং নবীনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে কিভাবে অন্তরের গভীরে স্থান দিয়েছে। ভেবেছি, আমাদের জীবনের দীর্ঘ প্রয়াস একেবারে বিফলে যায়নি। প্রত্যাশিত বিচারটি পেতে ব্যর্থ হয়েই জনগণ তাদের হতাশা ও আবেগ ব্যক্ত করেছে শাহবাগে। তরুণ সমাজ তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয়ার জন্যই সমবেত হয়েছে শাহবাগে। এর মাঝে কোনো শঠতা বা রাজনীতি ছিল না।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি সত্য যে ’৭১-পরবর্তী সময়ে সিংহভাগ রাজাকার তথা পাকিস্তানি মনোভাবসম্পন্ন মানুষগুলো সমাজের নানা স্তরে ঘাপটি মেরেছিল। এদের অনেকে স্বাধীন দেশে পুলিশ ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নিজেদের গা বাচাতে এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়। আওয়ামী লীগের বহু নেতা এবং কর্মীও এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে এবং এদের সঙ্গে আত্মীয়তা করেছে। বিশেষ করে এদের মধ্যে যারা বিত্তবান তারা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক স্থানে জায়গা করে নেয়। সে ক্ষেত্রে নগদ নারায়ণ, অর্থ ও কন্যা ইত্যাদির লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে শুধু রাজনীতিবিদ নয়, বাঘা বাঘা মুক্তিযোদ্ধা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যগণও মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
অনেক ভয়াবহ রাজাকার এবং ঘাতক আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। এর একটি উদাহরণ হলো কিশোরগঞ্জের মওলানা আতাহার, তোহা ইত্যাদি ব্যক্তি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের বাঘা বাঘা রাজাকার এভাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আল-বদর বাহিনীর ঘাতকগণও পুলিশের কৃপায় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান করে নেয়। আর অনেকে পালিয়ে বার্মা, নেপাল পাকিস্তান হয়ে পাশ্চাত্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে যে এগারো হাজার বাঙালি পুলিশ পাকিস্তানের অনুগত হয়ে হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতনে বিশেষ ভূমিকা রেখে হিন্দু সম্প্রদায় নির্মূলে অগ্রগামী ছিল তারাই প্রসাশনের উচ্চপদে আসীন হয়। সে সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিল পাকিস্তানপন্থী ও অবাঙালিগণ। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতাসীন বিডি মেম্বার এবং বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার মওলানা ও পীরগণ দ্রুত তাদের ক্ষমতা সংহত করে নেয়। বরিশালের কুরিয়ানা গণহত্যায় সংশ্লিষ্ট পীরগোষ্ঠী এর একটি উদাহরণ।
এরপরও এ বিষয়ে অধিকাংশ রাজনীতিবিদের মুখে কথা ফুটে না। অধিকাংশ পীর সাহেব ও মওলানাদের মুক্তিযুদ্ধ তথা হিন্দুবিরোধী ভূমিকা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলেছে তাদেরকে হুজুর-জ্ঞান করে। এসব কারণেই জাতিগত বিদ্বেষ ও ধর্মগত বিদ্বেষের নষ্ট প্রণোদনাটি রয়ে গেছে বাংলার তৃণমূলে। এই সব নষ্ট তথা লুটেরা রাজনীতির কারণেই ’৭১-পরবর্তী সময়ে সেই মূল্যবোধটি আর নির্মাণ করা যায়নি, যা লাখো শহীদ স্বপ্নে ধারণ করেছিলেন। অন্যায় ও অপরাধের সঙ্গে আপোসকামিতা, মিথ্যাচার এবং ভ-ামি এ জাতির মজ্জাগত হয়ে ওঠে। রাজাকার ও আলবদরের সঙ্গে নষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন যে বুদ্ধিজীবীরা হাত মিলিয়েছিল এবং পাকিস্তানের দোসর হিসেবে কাজ করছিল তাদের নাম ’৭২-এর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ঐ দিনের পত্রিকায় শিরোনামটি ছিল এই রকমÑ দৈনিক আজাদ, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২, ‘সেই বাংলাদেশবিরোধী ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী’। তাতে লেখা হয় ‘ঢাকা ১৬ই মে। পূর্ব পাকিস্তানের ৫৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কলেজ শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পী আজ বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ভারতের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারে নিউইয়র্কে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব ইউনিভার্সিটি ইমার্জেন্সি যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাহাতে আমরা মর্মাহত হইয়াছি। উক্ত সংস্থার এক বিবৃতিতে ঢাকার প-িত ব্যক্তিদের নির্বিচারে হত্যাকা-ের উল্লেখ করিয়া যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হইয়াছে তাহাতে তাহারা এক যুক্ত বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের অনেকের নাম গুলিবিদ্ধ ও নিহতদের তালিকায় দেখিয়া আমরা বিস্মিত হইয়াছি। কিন্তু এই তালিকায় উল্লিখিতদের অনেকে ইতিমধ্যে টেলিভিশনের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে যোগদান করিয়া প্রপাগান্ডাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে। তাঁহারা বলেন যে, ঢাকা ও অন্যান্যস্থানে গোলযোগের কারণে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের প্রায় সকলেই গ্রামে চলিয়া গিয়াছিলাম। এই কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারকে ব্যাপকভাবে অমান্য করা হইতেছিল। এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের নাম নিম্নে প্রদত্ত হইল : ড. সাজ্জাদ হোসাইন, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, ড. মীর ফখরুজ্জামান, ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, জনাব নূরুল মোমেন, জনাব জুলফিকার আলী, জনাব আহসান হাবীব, জনাব খান আতাউর রহমান, মিস শাহনাজ বেগম, জনাব আসকার ইবনে শাইখ, মিসেস ফরিদা ইয়াসমীন, জনাব আবদুল আলিম, জনাব আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম, জনাব এ এইচ চৌধুরী, ড. মোহর আলী, জনাব এম মুনীর চৌধুরী, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, খোন্দকার ফারুক আহমদ, জনাব এস এ হাদী, মিসেস নীনা হামিদ, জনাব এস এ সামাদ, মিসেস লায়লা আর্জুমান্দ বানু, জনাব শামসুল হুদা চৌধুরী, জনাব বেদারউদ্দিন আহমদ, মিসেস সাবিনা ইয়াসমীন, মিসেস ফেরদৌসী রহমান, জনাব মোস্তফা জামান আব্বাসী, জনাব সরদার জয়েন উদ্দীন, সৈয়দ মর্তুজা আলী, জনাব তালিম হোসেন, জনাব শাহিদ আলী, কবি আবদুস সাত্তার, জনাব ফারুক শায়ের, কবি ফররুখ আহমদ, জনাব আবদুস সালাম (সম্পাদক, পাকিস্তান অবজারভার), জনাব বদরুদ্দীন (সম্পাদক, মনিং নিউজ), জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন (সম্পাদক, দৈনিক পাকিস্তান), জনাব ফতেহ লোহানী, জনাব হেমায়েত হোসেন, জনাব বি রহমান, জনাব মনজুরুল হোসেন, জনাব আকবর উদ্দীন, জনাব এ এফ এম আবদুল হক, প্রিন্সিপাল এ কিউ এম আদম উদ্দীন, জনাব আলী মনসুর, কাজী আফাজ উদ্দিন, জনাব সানাউল্লাহ নূরী, সরদার ফজলুল করিম, জনাব বদিউজ্জামান, জনাব শফিক কবীর, মিসেস ফওজিয়া খান, লতিফা চৌধুরী ও জনাব আবদুল আলীম।’
এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার দায়িত্ব এই সব শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের। এরাই পরবর্তীতে দেশের নন্দিত তারকা তথা বুদ্ধিজীবী বনে যান। যারা ’৭১-এ পাকিস্তানিদের পদলেহন করে গা বাঁচিয়েছিলেন অথবা ক্লীবদাস হিসাবে জীবনযাপন করেছিলেন, প্রিয়ভাষিণী গণিকা হিসাবে কাজ করছিলেন তারাই আজ মুক্তিযুদ্ধের ঝা-া উড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে পরিণতি হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে। এরাই আজ তরুণ সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছেন।
আজ ধর্মের নামে যে অধর্ম হচ্ছে, নারীর প্রতি যে সহিংসতা হচ্ছে, সংখ্যালঘুর প্রতি যে নির্মম দমন, পীড়ন চলছে তা চলমান ’৭১-পরবর্তী সময় থেকে। ’৭১-এর পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের ভয়াবহ গণহত্যা নারী নির্যাতন এবং ধ্বংসজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায় যখন ’৭২-এ ঘরে ফিরে এলো, তখন অসহায়ভাবে অবলোকন করেন স্বার্থ চিন্তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিভাবে হার মেনেছে। যে সব রাজাকার ধর্মান্ধতার ধূম্রজাল সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধাদের মা ও বোনকে ধর্ষণ করেছে, টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলেছে, বাবা ও ভাইকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে ঠেলে দিয়েছে, তাদের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে নব্য দেশপ্রেমিকগণ। ময়মনসিংহের ফুলপুরের পয়ারী চৌধুরী বাড়ি ও গফরগাঁও এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। এই অশুভ বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা করেনি কেউ। ভোটের রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি এতোটুকু। ’৭১-এ জামাতি তথা ঘাতক রাজাকারদের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনের কারণেই অপশক্তির নষ্ট দর্শন প্রতিরোধে আন্তরিক কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি এতোটুকু। উপরন্তু তা বিকশিত হওয়ার পথ করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর সকল ধর্ম যে মানব সভ্যতার সংস্কৃতির অংশ এবং মৌলিক দর্শনগুলোর সঙ্গে যে ধর্মের যে যোজন ব্যবধান এটা কোনো পাঠ্য পুস্তকে বা সরকারের তথ্য মাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। বরং কুখ্যাত আইয়ুব খান যেভাবে মাদ্রাসা, মৌলভী এবং গ্রাম্য ফড়িয়া (বিডি মেম্বার) সৃষ্টি করে নষ্ট রাজনীতির বিকাশ করেছিল সে ধারা এখনো চলমান আছে। কোনো কোনো নষ্ট রাজনীতিবিদ ক্ষমতার শীর্ষে উঠে ম্যাকিয়াভেলি পাঠ করলেও প্লেটো, অ্যারিস্টটল, অগাস্টিন, লক, হবস, মিলসের রচনার ধারে কাছে যায়নি। এমনকি ল্যাসকির ‘গ্রামার অব পলিটিকস’ বা কৌটিল্যের শাস্ত্রও পাঠ করেনি। অ্যারিস্টটলের প্যালিটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এ দেশের ফড়িয়াদের সংঘ ছাড়া আর কিছু নয়। রিপাবলিক হলোÑ কিছু কিছু স্বার্থান্ধগোষ্ঠীর অবাধ চারণ ক্ষেত্র। আর রাজনীতি হলোÑ সেই সব গ্রাম্য অথবা অর্ধভগ্ন নগরের ক্ষমতাধর মোড়ল এবং তাদের লাঠিয়ালদের ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্র। জনগণ প্রকৃত অর্থে নির্বিষ, দাঁতহীন, অক্ষম কিছু প্রাণী।
এই অক্ষমদের প্রতিনিধিরা হঠাৎ জেগে ওঠে যখন শাহাবাগে দাঁড়িয়ে গেলো তখন তাদের অর্জন ও স্বপ্নটি অপহরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেলো। কিছু মুক্তিযুদ্ধের ফেরিওয়ালা তাদের ভর করে নিজেদের অবয়ব ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। আর অপরদিকে ঘাতক-জামাত বা তাদের সমর্থকগণ ’৭১-এর কায়দায় জনগণের সম্পদ, জীবন এবং সংখ্যালঘুর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে লাল সবুজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য প্রশাসন ও পুলিশের কিছু প্রয়াস লক্ষ্য করা গেলেও স্বাধীনতার পক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজ গ্রামাঞ্চলের আঘাতপ্রাপ্ত অসহায় মানুষগুলোর কাছে এতোটুকু দাঁড়ায়নি এবং পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা প্রতিরোধের কোনো চেষ্টাও করেনি। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মূল্যবোধের জায়গাটি প্রায় অন্তঃসারশূন্য অবস্থায় রয়ে গেছে সেই সব ফেরিওয়ালা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে অর্থ, বিত্ত ও ক্ষমতা ভোগ করছেন তাদের কাছে।
এই সব বিবেচনা করেই তরুণ প্রজন্মকে দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, কলকারখানা ঘুরে ঘুরে ’৭১-এর চেতনা ও মূল্যবোধ নির্মাণ করতে হবে। আমরা অনেকেই ’৬৯ থেকে ’৭২ পর্যন্ত জীবনের কয়েকটি মূল্যবান বছর দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলাম। ভাই-বোনসহ নিকটজনের প্রাণ, স্বপ্ন ও সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিলাম। তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই দৃষ্টান্ত রয়েছে। রয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। ’৭১-এর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ-পরবর্তী অসহিষ্ণুতা, অৎৎড়মধহপব, অস্থিরতা এবং নানা অক্ষমতার কারণে আমরা যেভাবে নষ্ট রাজনীতি ও লুটেরা সম্প্রদায়ের কাছে পরাভূত হয়েছি, তেমন করে তরুণরা পরাভূত হবে না সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, অনির্বাণ মূল্যবোধ, মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার এটাই সময়। ময়ূরপুচ্ছধারী কাক এবং মিষ্টি কথার নষ্ট ফেরিওয়ালা থেকে সাবধান।
ডা. এম এ হাসান : চেয়ারম্যান, ওয়ারক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, বাংলাদেশ।
ভোরের কাগজ : মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন