ইসমাইল হোসেন ও মেহেদী হাসান পিয়াস
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রূপসী বাংলা
হোটেল ঘুরে আবার চারুকলা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং
অশুভকে বিতাড়ন করতে ৬০ ফুট লম্বা প্রতীকী সরীসৃপ নিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণের
অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বিশালাকৃতির এক দানব সরীসৃপ, হাতি-ঘোড়া-বাঘ সব চলেছে অশুভ শক্তি বিনাশে।
ছায়ানটের
অনুষ্ঠান শেষে শোভাযাত্রায় যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। কারো হাতে বাঘের
মুখোশ, কারো হাতে হাতপাখা, কেউবা নিয়েছেন একতারা-দোতারা। বাঙালির ঐতিহ্যকে
ধারণ করে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
প্রতি বছরই বর্ষবরণ উৎসবে মঙ্গল
শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রায় থাকে বিশেষ কোনো প্রতীক। এবারের
প্রতীক স্বাধীনতার চার দশক পর যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে
শাহবাগের যে আন্দোলন বেগবান, তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবার পহেলা বৈশাখে
মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে ৬৫ ফুট দীর্ঘ ভিনদেশি এক সরীসৃপ। দানবীয় এই
প্রাণিকে ‘রূপক’ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙালির ঐতিহ্যের দিনটিতে, যা
তাড়াবে অশুভ শক্তি।
বিশালাকৃতির এক সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ‘রূপ’,
যেটি মূল থিমেটিক স্ট্রাকচার তৈরির কাজ প্রায় শেষ দিকে। সরীসৃপ এই প্রাণীটি
ক্ষিপ্র গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ থেকে ছুড়ছে আগুন।
মঙ্গল
শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের সমন্বয়ক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আগামীর ভবিষৎ
তরুণ প্রজন্মসহ সবার দাবি যুদ্ধাপরাধীরে ফাঁসি, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ। সেই
দাবিকেই শোভাযাত্রায় ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে রূপকের মাধ্যমে।”
তিনি
বলেন, “আমরা বাঙালির ঐতিহ্যকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু অশুভ
শক্তি সেটা বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়ত। তিনটি ভ্যানের ওপর কাঠের তৈরি ৩০
ফুট ফ্রেমে চেপে বসে শোভাযাত্রার মূল অনুসঙ্গ ৬৫ ফুট দীর্ঘ এই প্রাণীটি।
বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্য নিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপকের মাধ্যমে অশুভ
শক্তিকে তাড়াবে এই দানব।”
মঙ্গল
শোভাযাত্রা ঘুরবে রাজধানীতে, যেখানে স্থান পেয়েছে টেপা পুতুলের রিকশায়
১৪-১৬ ফুট উচ্চতার ১২/১৩ টা ঘোড়া এবং ১৫ ফুটের একটি হাতি। এছাড়াও দানবীয়
প্রাণীটির সঙ্গে ছিল বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সাহিত্যের নানা
দিক। বাঙালি ঢঙে বৈশাখী পোশাকে তরুণ-তরুণী-যুবাসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ গালে
আলপনা এঁকে এ শোভাযাত্রার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে শতভাগ বাঙালিয়ানা।
নববর্ষ
উদযাপন কমিটির সিদ্ধান্তে শুধু রাজধানীতেই নয়, অশুভ শক্তি বিতাড়নে পহেলা
বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন
সিদ্দিকের নেতৃতে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে টি-শার্ট এবং পোস্টারে প্রতীকী
অর্থে মোটিভ তৈরি করে পাঠানো হবে সারা দেশে।
বাঙালির চিরায়ত
ঐতিহ্যের দিনটিতে রং-বেরঙের মুখোশ, শোলার পাখি, পেঁচা, প্রজাপতি, খরগোশ ও
টেপা পুতুল, ঢাক-ঢোল-বাঁশি, লাঠি-বর্শা, তীর-ধনুক নিয়ে অংশ নিয়েছেন মঙ্গলের
যাত্রীরা।
মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে বাংলা সাল গণনা
শুরু হয়। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য তারা বর্ষ শুরুর জন্য সে দিনটি হিসেব
করছিল, তা এখন বাঙালির নববর্ষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন