রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

মৌলবাদ রোখার প্রত্যয়ে রাজশাহীর মঙ্গল শোভাযাত্রা

রাজশাহী: পুরনো বছরের জীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নেচে-গেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে হাসি-আনন্দে নতুন বছরের মঙ্গলযাত্রায় শামিল হন রাজশাহীর বিভিন্ন স্তরের নারী, পুরুষ ও শিশু। সবার মধ্যেই ছিল সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদকে রুখে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়।

বছরের প্রথম দিনে সবাই আরও একবার প্রকাশ করে তাদের আবহমান চেতনার কথা। এছাড়া শেকড়ের সন্ধানে নববর্ষকে বরণ করতে রাজশাহী মহানগরী জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। বৈশাখের খরতাপ উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মেতেছে সবাই।


সাদা আর লাল রঙের আলোকচ্ছটায় রঙিন হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক নগরজীবন। বর্ণিল আনন্দের ঘনঘটায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজশাহী মহানগরীতে এবার উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ, বাঙালির প্রাণের উৎসব।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা-ইলিশ ও ভুরিভোজ।

রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে সাদা-লালের বাহারি পোশাক পরে বের হয়েছেন ঘর থেকে।

ভোরে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো... গানের মধ্য দিয়ে মহানগরীর পদ্মাপাড়ের ফুদকিপাড়ার উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয়েছে বাংলা বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সেখানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন আয়োজন করে পান্তা-ইলিশ উৎসবের। দিনব্যাপী অন্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত পরিবেশন, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গ্রমীণ খেলা, গম্ভীরা ইত্যাদি।

অপরদিকে, সকাল ৭টায় মহানগরীর কলেজিয়েট স্কুলের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি রাজশাহী শিশু একাডেমীতে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, মেয়র পত্নী শাহীন আকতার রেনী, সিপিবি নেতা আবুল কালাম আজাদ, নারী নেত্রী কল্পনা রায়, সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ফজলুল হক প্রমুখ।

পরে সেখানে উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বসেছে বৈশাখী মেলা। এ উপলক্ষ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও সকাল সাড়ে ৯টায় শোভাযাত্রা বের হয়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মহানগরীর বড়কুঠি ওয়াই ফাই জোন, শহর রক্ষা বাঁধ ও চরসহ পুরো পদ্মার পাড়েই বৈশাখী উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই।

এদিকে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মহানগরী জুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ৠাব ও গোয়েন্দা সদস্যরা মহানগরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এজন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে দেওয়া এক আদেশে রোববার মহানগর এলাকায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য, পটকা, আতশবাজিসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক দ্রব্য বহন, ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ মূল্য ছাড়া উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

বাংলা নববর্ষ-১৪২০ উপলক্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় কারাগার, সেফ হোম, সরকারি শিশু সদন, অন্ধ মূক ও বধির বিদ্যালয়, শিশু নিবাস, এস ও এস শিশু পল্লী, শিশু বিকাশ কেন্দ্রে সকাল থেকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন