বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
হাজার বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নারী যে অগ্রযাত্রার পথ রচনা করেছে তাতে কেউ বাঁধ সাধলে তাদের রুখতে প্রয়োজনে নারীরা রাজপথে নামবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী লেখক-অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদরা।
নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধে হেফাজতে ইসলাম যে দাবি জানিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
হাজার বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নারী যে অগ্রযাত্রার পথ রচনা করেছে তাতে কেউ বাঁধ সাধলে তাদের রুখতে প্রয়োজনে নারীরা রাজপথে নামবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী লেখক-অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদরা।
নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধে হেফাজতে ইসলাম যে দাবি জানিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
হেফাজতের ১৩ দফা দাবির চতুর্থটি হচ্ছে- ‘ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যাভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা’।
এছাড়া নারী উন্নয়ন নীতি বাতিলের দাবিও রয়েছে তাদের।
নারী সম্পর্কে এই অবমাননাকর দাবি উত্থাপন এবং নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর নারীরা ‘হেফাজতীদের’ প্রকৃত চেহারা চিনতে পেরেছে বলে মনে করেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো দাবি বা আস্ফালন এ দেশের প্রগতিশীল নারীদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ এদের [হেফাজতে ইসলাম] চেহারা নারীদের চেনা হয়ে গেছে।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর নারীদের নিয়ে এ ধরনের দাবি তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করে এই লেখক বলেন, “স্বাধীনতার এত বছর পর এটা আমাদের শুনতে হবে তা আমি কোনো দিন ভাবিনি, ভাবতে পারিনি।
“হেফাজতের মনে রাখা উচিত ছিল, এটা স্বাধীনতার আগের কোনো সময় নয়, স্বাধীনতার পরের ১০-১৫ বছরের বাংলাদেশও নয়। এটা হচ্ছে এমন বাংলাদেশ যেখানে নারীরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসে দাড়িয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, নারীরা সব শৃঙ্খল ভেঙে শিক্ষা ও কর্মস্থলে তাদের জায়গা করে নিচ্ছে। দরকার হলে এদের বিরুদ্ধেও নারীরা আবার রাস্তায় নামবে।
হেফাজতে ইসলামের এই দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী।
তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়, হতে পারে না। এই দাবি আমাদের নারী সমাজ প্রত্যাখ্যান করে। সব পার্থক্যের শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের নারীরা আরো সামনে এগিয়ে আসছে।
“এ রকম একটি সময়ে নারীদের আবার যুগ যুগ পিছিয়ে দেয়ার জন্য এই দাবি। নারীকে তার অধিকার দিতে হবে। নারীকে পিছিয়ে দিতে নারী-পুরুষের মধ্যকার বায়োলজিক্যাল পার্থক্যকে সামনে নিয়ে এসে এই দাবি করা হচ্ছে।“
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপার্সন গীতি আর নাসরীন বলেন, হেফাজতের এই দাবি সম্পূর্ণ ‘অবাস্তব’।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এখন অসংখ্য নারী কাজ করছেন। দেশের অন্যতম প্রধান আয় উপার্জনকারী খাত পোষাকশিল্প থেকে শুরু করে, কৃষি, নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, চিকিৎসা বা নার্সিংয়ের মতো সেবা খাত, নিরাপত্তাবাহিনী, শিক্ষকতা, গণমাধ্যম কোথায় নারী নেই। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও নারীর অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে।
এই বাস্তবতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কীভাবে বাড়ানো যায় এবং সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা যায় সেটাই এখন ‘বাস্তব দাবি’ বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
একজন নারী প্রধানমন্ত্রীর সরকার হেফাজতের দাবিকে মেনে নিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ‘ভূলুণ্ঠিত’ এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ‘হাস্যকর’ করে তুলবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন গীতি আরা নাসরীন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মনে করেন, হেফাজতের কথা মানলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না।
তিনি বলেন, “এরা নারীকে পিছিয়ে দিতে চায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।”
হেফাজতে ইসলামকে শুধু প্রতিহত নয়, ‘নির্মূল’ করতে দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
তিনি বলেন, হেফাজতের প্রথম দাবিটিই তো মারাত্মক। তারা আমাদের সংবিধান পরিবর্তন করতে বলছে। এটা করলেই তো বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকে না।
তিনি বলেন, নারী-পুরুষ সম্পর্কে তাদের দাবি রীতিমতো ‘ভয়ঙ্কর ও মধ্যযুগীয়’।
হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মতাদর্শ ‘এক ও অভিন্ন’ বলেই মনে করেন তিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন