বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের বি টিম

আল্লামা শফীকে পদত্যাগের
আহ্বান ইমাম-ওলামা
সমন্বয় ঐক্য পরিষদের
জনকণ্ঠ | স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত হেফাজতে ইসলাম আসলে জামায়াতের হেফাজত করছে। এমন অভিযোগ এনে বাংলাদেশ ইমাম-ওলামা সমন্বয় ঐক্যপরিষদ দেশ ও ইসলামের স্বার্থে অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামের আমির পদ থেকে আল্লামা শাহ আহম্মদ শফীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়ে সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের অর্থায়নে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে জামায়াতের ‘বি’ টিম। আহম্মদ শফী ভাল মানুষ। কিন্তু তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করছে তার চারপাশের চিহ্নিত জামায়াতীরা। এদিকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আগামী ২৩ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ওলামা মাশায়েক তৌহিদী জনতার সংহতি পরিষদ। ৩০ মার্চ ওলামা মাশায়েক সম্মেলনের ডাক দিয়েছে তরিকত ফেডারেশন।
বুধবার বাংলাদেশ ইমাম-ওলামা সমন্বয় ঐক্য পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, হেফাজতে ইসলামের গত কয়েকদিনের কর্মকা-ে প্রমাণিত হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের উল্টো পিঠ। তারা জামায়াতের ‘বি’ টিম হিসেবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিতভাবে মাঠে নেমেছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হযরত মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসেন, সহ-সভাপতি মাওলানা এসএইচএম আরিফ বিল্লাল বুখারী। এছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যান হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে হঠাৎ করে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি ভূঁইফোড় সংগঠন ইসলামের নামে দেশে নতুন প্রজন্মের সন্তানদের মুরতাদ নাস্তিক বলছে। তারা আসলে ইসলাম নয়, জামায়াতকে হেফাজত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। জামায়াতকে হেফাজত করতেই তাদের প্রতিষ্ঠা। হেফাজতে ইসলামের আমির হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফি ভাল মানুষ হলেও তিনি যাদের কথায় চলেন, তারা সবাই জামায়াতে ইসলামের লোক। এখন তাঁর চারপাশে যাঁরা আছেন, যাঁরা এই সংগঠন চালাচ্ছেন, তাঁরা সবাই জামায়াতের চিহ্নিত লোক। এরা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছে। তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম সভাপতি আবদুর রহমান সাকা চৌধুরীর আত্মীয়, সাবেক শিবির নেতা ও সাকা মুক্তি পরিষদের নেতা মিজানুর রহমান, জঙ্গী সম্পৃক্ততায় আটক নেজামে ইসলামীর সভাপতি মুফতি এজাহারের ছেলে ও মাহমুদুল হাসান নিজামী আছেন এর সঙ্গে। এই নিজামীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া মক্কা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবি সাঈদীর মুক্তির মোনাজাত হিসেবে উল্লেখ করে যেসব পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ ছাপা হয়েছে, সেসব পত্রিকার প্রতি ধিক্কার জানান। জানানো হয় ধর্মের নামে অপকর্ম সৃষ্টিকারীদের সম্মিলিতভাবে মোকাবেলার আহ্বান। সংগঠনের সহ-সভাপতি মাওলানা এসএইচএম আরিফ বিল্লাল বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিস উল্লেখ করে বলেন, এক মুসলিম অন্যকে মুরতাদ, নাস্তিক বলতে পারেন না। যাঁরা ইসলাম ও কোরান হেফাজতের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, পবিত্র কোরানের হেফাজতকারী আল্লাহ নিজে।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীও হেফাজত ইসলাম নিয়ে নানা অভিযোগ এনেছেন। আন্দোলনে নামা হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আহমদ শফী বার্ধক্যের কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র জানেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস করার জন্য লং মার্চ করে ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। তিনি আলোচনা চাইলে সরকার তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। যারা মহানবী (সা) বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করছে তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলা প্রয়োজন। ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক, মুরতাদ বলা ইসলাম অনুমোদন করে না।
এদিকে আগামী ২৩ মার্চ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের ডাকা মহাসমাবেশ সফল করতে দেশব্যাপী প্রস্তুতি চলছে। সংগঠনের প্রতিটি জেলা উপজেলা শাখায় চলছে মতবিনিময়। বুধবার ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সত্যিকারের নাস্তিক-মুরতাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বন্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ সফলে এককাট্টা ওলামায়ে কেরাম। নাস্তিক-মুরতাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের এ দেশে ঠাঁই নেই। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ আহূত এই মহাসমাবেশ যে কোন মূল্যে ওলামায়ে কেরাম সফল করবে। তাঁরা বলেন, একটা গোষ্ঠী দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। সাধারণ তৌহিদী জনতাকে অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, সব যুগেই সত্যবাদীদের বিরুদ্ধে বাতিলরা অপপ্রচার করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের আগামী ২৩ তারিখের পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মহাসমাবেশ আগামী ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার আগে আগামী ৩০ মার্চ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে ওলামা-মাশায়েক সম্মেলন। সংগঠনের মহাসচিব লায়ন এমএ আইয়াল জানিয়েছেন, এই সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হবে। দাবি জানানো হবে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধেরও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন