জনকণ্ঠ, স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিলেও
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আন্দোলনে
এখনও বিরোধীদলীয় নেতার সমর্থন প্রত্যাশা করছেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরা।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতকে বর্জন করে খালেদা জিয়া
যদি এই আন্দোলনে শামিল হতে চান, তবে তার জন্য দরজা খোলা। প্রজন্ম চত্বরের
আন্দোলনের ৪৭তম দিনে একটি অনলাইন পত্রিকা আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রজন্ম
সেনারা এসব কথা বলেন।
চলমান আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা, করণীয়সহ তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। এতে অংশ নেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ রসুল, মাহমুদুল হক মুন্সী, আরিফ জেবতিক, অমি রহমান পিয়াল, শারমিন রেজোওয়ানা, বাকী বিল্লাহ, আফসানা কিশোয়ার, পিনাকী ভট্টাচার্য, নাহিদ সুলতানা ও সিমু নাসের। আলোচনা সঞ্চালনা করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
বিরোধী দলকে নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান জানতে চাইলে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা মাহমুদুল হক মুন্সী বলেন, বিএনপির অবস্থান শুরুতে এক রকম ছিল। কয়েকদিন পর তা পাল্টে যায়। এত বড় একটা আন্দোলন নিয়ে তাদের অবস্থানটি তারা ঠিক করতে পারছিল না। খালেদা জিয়া শাহবাগের আন্দোলনকে ‘নাস্তিকদের’ আন্দোলন আখ্যা দেয়ার পরও মাহমুদুল বলেন, তিনি যদি ক্ষমা চেয়ে জামায়াতকে ছেড়ে আসতে পারেন, তার জন্য দরজা খোলা রয়েছে।
তবে বিরোধীদলীয় নেতার ক্ষমা চাওয়ার কথায় দ্বিমত পোষণ করেন আরিফ জেবতিক। আফসানা কিশোয়ার এক্ষেত্রে জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপির কাছে কোন প্রত্যাশা নেই বলে মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের আমলে গোলাম আযমের দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার আমলে তার নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে তাতে ভিন্নমত পোষণ করে আরিফ জেবতিক ও পিনাকী ভট্টাচার্য জামায়াতকে বর্জন করে বিএনপিকে আন্দোলনে আসার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। শাহবাগ নিয়ে অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে এ জন্য মূল ধারার কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকেও দায়ী করেন আন্দোলনকারীরা। অপপ্রচারের বিষয়ে আরিফ জেবতিক তার নামে ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট করে তাতে ধর্মবিদ্বেষী লেখা প্রকাশের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মবিরোধিতার কোন সম্পর্ক নেই, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে তাদের।
আরিফ জেবতিক মূল ধারার কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকেও দায়ী করেন। আমার দেশ, নয়া দিগন্ত ও দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের। হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ইসলামবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে আসছে। অপপ্রচার প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন সিমু নাসের। সেই সঙ্গে সরকারেরও দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
কালরাত্রির কর্মসূচী
পঁচিশে মার্চ সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজে ক্লাস চলাকালীন যে কোন পিরিয়ডে বাংলা বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বা কবিতা পাঠ এবং তার ওপর সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। পাশাপাশি এদিন বিকাল ৫টা থেকে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। সারাদেশে সন্ধ্যা সাতটায় পঁচিশে মার্চের নির্মম গণহত্যা স্মরণে মৌন পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করা হবে। ঢাকার বাইরে যেখানে গণজাগরণ মঞ্চ আছে, সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শহীদ মিনারে মৌন পদযাত্রা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে গণজাগরণ মঞ্চ নেই, সেখানকার জনগণ নিজ নিজ এলাকার একটি নির্ধারিত স্থানে জড়ো হবেন এবং সেখান থেকে মৌন পদযাত্রা যাবে শহীদ মিনারে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এদিন রাত ১১টায় মৌন পদযাত্রা শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবে। রাত ১১টা ২৯ মিনিট থেকে রাত ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শিহীদ মিনারে এবং সারাদেশে এবং দেশের বাইরে, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ‘ফিরে যাই একাত্তরে শিরোনামে একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করা হবে। এ দিন রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে আলোর মিছিল নিয়ে জগন্নাথ হল গণকবরে যাবে। একাত্তরের পঁচিশে মার্চে গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। রাত ১১টা ৫৮ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে দুই মিনিট ‘নিষ্প্রদীপ মুহূর্ত’ পালন করা হবে। গণহত্যার কালরাত স্মরণে এই সময়ে মোমবাতি নিভিয়ে রাখা হবে। রাত ১২টার পর থেকে া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে সকাল পর্যন্ত চলবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
ছাব্বিশে মার্চের কর্মসূচী
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সকাল ৭টায় প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল থেকেই প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। এ দিন বিকেল চারটায় মুক্তিযোদ্ধা জনতা মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশের পর রাত ৮টায় মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বার্ষিকী স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উড়ানো হবে ৪২টি ফানুস। মহান স্বাধীনতা দিবসে সারাদেশে ও গণজাগরণ মঞ্চ ও অন্যান্য স্থানে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন