খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ
পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা হুজরাতের ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে, 'মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনে, তবে তোমরা যাচাই করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্র্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পস্তাতে না হয়।' প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় মহানবীর (সা.) হাদিসেও। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে সহিহ মুসলিম গ্রন্থে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে শোনামাত্র প্রচার করে দেওয়ার প্রবণতাই যথেষ্ট।'
পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা হুজরাতের ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে, 'মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনে, তবে তোমরা যাচাই করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্র্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পস্তাতে না হয়।' প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় মহানবীর (সা.) হাদিসেও। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে সহিহ মুসলিম গ্রন্থে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে শোনামাত্র প্রচার করে দেওয়ার প্রবণতাই যথেষ্ট।'
এ হাদিসে একদিকে অতিকথনকে জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে; অন্যদিকে যাচাই ও অনুসন্ধানের তোয়াক্কা না করে যেনতেন সূত্রে প্রাপ্ত কথা যারা প্রচার করে বেড়ায়, তাদের নিন্দাবাদ ব্যক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম নবভির (রহ.) উক্তিটি চমৎকার! তিনি বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মুখনিঃসৃত কথা তিনটি অবস্থার বাইরে নয়; কথাটি ভালো এবং এর জন্য তিনি সওয়াবের অধিকারী হন নতুবা তা মন্দ যার কারণে তিনি গুনাহ উপার্জন করলেন। তৃতীয় অবস্থায় তা মোবাহ অর্থাৎ নিষিদ্ধতার আওতামুক্ত। কিন্তু এরূপ মোবাহ কথাবার্তায় মজে থাকাও নিরাপদ নয়। কারণ তা অনেক সময় বহু অনর্থের পথ খুলে দেয়। আপাত নির্দোষ কথাটি কোনো এক পর্যায়ে জনসমাজে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করতে পারে।
কেউ মানুষকে চমকে দেওয়ার হুজুগ থেকে কেউবা আরও দূরপ্রসারী অসৎ উদ্দেশ্যে গুজবের জন্ম দেন। বাতাসেরও আগে যা ছড়িয়ে যায় পুরো সমাজে। মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভুল বোঝাবুঝি এমনটি বড় রকমের হাঙ্গামাও তৈরি হতে পারে একটি গুজবের ওপর ভর করে। বিশেষ কোনো অবস্থায় উত্তেজিত জনসাধারণকে উস্কে দেওয়ার মতলবে কোনো কোনো দুরাচার একটি মিথ্যা, মুখরোচক ও পিলে চমকানো তথ্য রাষ্ট্র করে দিয়ে গোটা সমাজে ভয়াবহ অস্থিরতা এমনকি পারস্পরিক সংঘাতের অনুঘটক হিসেবে সবার সর্বনাশ ঘটাতে পারে। সাধারণত সমাজে স্থির মেজাজ, প্রজ্ঞাবান, চিন্তাশীল ও বিচক্ষণ লোকের তুলনায় অস্থির মতি, অশিক্ষিত, আবেগপ্রবণ ও অদূরদর্শী মানুষের সংখ্যা বেশি। সমাজের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য কিছু নষ্ট চিন্তার মানুষ ওত পেতে থাকে। তাদের পাতা গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে সমাজের তরুণরা, রগচটা, আবেগী মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যার ফলাফল অধিকাংশ সময় শুধু নেতিবাচক নয়; ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
যুদ্ধ বা দুর্যোগকালে মানুষ এরূপ গুজবে নির্বিচারে বিশ্বাস করে বসে। তথ্যপ্রযুক্তির এ স্বর্ণযুগেও গুজবের কদর কমেনি বরং বরাবরই তা হটকেকের মর্যাদায়। আবিষ্কার-উদ্ভাবন আর বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষের জন্য আমরা বুক ফুলিয়ে অহঙ্কার করে বেড়ালেও এই প্রযুক্তিকে হীন উদ্দেশ্যে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার শক্তিশালী হাতিয়াররূপে ব্যবহার করি। ইসলামী দৃষ্টিকোণে সমাজের এক সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে যেখানে_ লোকের মুখে শুনলাম, অমুক বলছে, অনেকেই তো বলে ইত্যাদি ধাঁচের সূত্রে কোনো খবর বর্ণনা বা বিশ্বাস করার সুযোগ নেই; সেখানে বিবেকের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম এবং জাতির বিবেকস্বরূপ সাংবাদিকরা বাস্তব তথ্য-উপাত্ত ছাড়া নিজের মতাদর্শগত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসত্য, অর্ধসত্য, বিকৃত, ভিত্তিহীন বা দুর্বল ভিত্তির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট প্রকাশ করে নৈতিকতার বুনিয়াদ ধসে দিচ্ছেন না? জাতি, নতুন প্রজন্ম, নিজের বিবেক বা ইতিহাসের কাছে কি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই?
স্রেফ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, মতাদর্শগত বৈপরীত্য কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে কাউকে অপবাদ দেওয়া, কারও বিরুদ্ধে প্রচারিত অপবাদ যাচাই-অনুসন্ধান ছাড়া বিশ্বাস করা আর অন্যদের কাছে বলে বেড়ানোর মধ্যে বিকৃত আনন্দ আর রসনা তৃপ্তি মিলতে পারে। এতে ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক কল্যাণচিন্তার প্রতিফলন নেই। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এরূপ ব্যক্তি 'অবিশ্বস্ত ফাসিকের পরম জন', বিবেকের দায়বোধ থেকেও যার মুক্তি নেই।
kmhamidullah@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন