শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

মুক্ত করো ভয়

প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন ক্রমেই ব্যাপ্তিলাভ করছে, এখন আর শুধু শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই, সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ করছে তারা। ঢাকার বাইরেও তৈরি হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ, চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। সে বিক্ষোভ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দিক হতে দিগন্তে। ওদিকে যে জন্য এই মহাবিক্ষোভের সূচনা ও এখনো চলমান, সেই অপশক্তি দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম-ব্লগার রাজীবের হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের সেই হিংস্রতার শুরু হয়ে এখন তা সব সীমাই অতিক্রম করে গেছে।

যানবাহন ভাঙচুর, দোকানপাট লুটপাট, রেললাইন উপড়ানো, ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়ে নষ্ট করেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সবচেয়ে ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক কাজ যেটি তারা করেছে তা হলো, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভেঙে ও পুড়িয়ে ছারখার করা, তাদের গৃহহীন করা, এমনকি তাদের মন্দিরে ঢুকে বিগ্রহ ভেঙে চুরমার করা। যে কাজগুলো ১৯৭১ সালে করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকার-আলবদর-আলশামসের সহযোগে, হুবহু সেই ঘৃণ্য কাজগুলোই করে চলেছে বর্তমানের মৌলবাদী অপশক্তি।

স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না দেওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি তরুণ প্রজন্ম, প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল তারা, জড়ো হয়েছিল শাহবাগ চত্বরে, লাখো কণ্ঠে জানিয়েছিল, এ রায় তারা মানে না, ফাঁসি দিতে হবে, ফাঁসি। তখনই সব কয়টি বিষদাঁত বের করে কামড়াতে শুরু করল ধর্মের মোড়কে লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত সাপের দল। আর তার পরপরই যখন ১৯৭১ সালের পাপিষ্ঠ সাঈদীর ফাঁসির রায় বের হলো, অমনি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে জামায়াতে ইসলামী শুরু করল বিভিন্ন স্থাপনা, যানবাহন ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও খুন। সৃষ্টি করল চরম বিপর্যয় দেশজুড়ে। আর সঙ্গে চালাল মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার। সঙ্গে পেল তাদের অপকর্মের সমর্থনকারী প্রাণের দোসর জাতীয়তাবাদী দলটিকে, যে দল ভুলে গেল তাদের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধা ছিল, যাঁরা একাত্তরে এ দেশেরই মুক্তি চেয়েছিলেন। অবশ্য এখন আর তাদের এ দেশের মুক্তিকামীদের দল বলে ভাবা যাচ্ছে না।

মৌলবাদের অপসংস্কৃতি বিষধর ফণা বিস্তার করে দেশময় ছড়াচ্ছে বিষবাষ্প, ফলে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এ দেশের নিরীহ মানুষের। হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকরা ওদের কোপানলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে, জান-মান-সম্পদ_সবকিছু। এখনই ওই অপশক্তি নির্মূলে সমগ্র বাংলার মুক্তিকামী মানুষ সোচ্চার না হলে দেশটিই হুমকির মুখে পড়ে যাবে, যা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পথেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই ওই হিংস্র হায়েনার টুঁটি চেপে ধরতে হবে, এখনই সমূলে উৎপাটিত করতে হবে বাংলার মাটি থেকে। ধর্মের ভিন্নতা বাঙালিকে কোনো দিন বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, আজও পারবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেও আর হীন্মমন্যতায় ভুগলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, তারা এ দেশেরই সন্তান, সমানভাবে বাঁচার অধিকার তাদের আছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী দলকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, দিতে হবে চরম শাস্তি, যাতে আর কোনো দিন বাংলা মায়ের সঙ্গে বেইমানি করার সাহস তারা দেখাতে না পারে।

রবীন্দ্রনাথ সেই শক্তিতেই জ্বলে উঠতে বলেছিলেন এ দেশের কোটি কোটি সন্তানকে, সংকোচের বিহ্বলতায় নিজেদের অপমান করতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, 'মুক্ত করো ভয়,/আপনা মাঝে শক্তি ধরো/ নিজেরে করো জয়।'

শিখা ব্যানার্জি
বাউফল কলেজ, পটুয়াখালী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন