প্রফেসর মো. শাদাত উল্লা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোলার যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ ঘোষণা করার পর তা প্রত্যাখ্যান করে সেদিন রাত থেকেই শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে তরুণ প্রজš§। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই বিক্ষোভের পরিমাণ বেড়ে গণজাগরণে রূপ নিচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন নামে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, আর সেই ঝড়ের একটাই দাবিÑ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি। এই জামায়াত বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছে, মেনে নেয়নি দেশের স্বাধীনতা। শাহবাগ থেকে নবজাগরণের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এ আন্দোলন গড়ে উঠেছে একমাত্র তরুণ প্রজন্মের স্বতস্ফূর্ত উদ্যোগে, কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় নয়। ইতিমধ্যে তরুণদের দাবির কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালেও স্বাধীনতার সংগ্রামে তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে, তাদের সর্বোচচ সাজা দেখতে চায় জনগণ। এটাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোলার যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ ঘোষণা করার পর তা প্রত্যাখ্যান করে সেদিন রাত থেকেই শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে তরুণ প্রজš§। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই বিক্ষোভের পরিমাণ বেড়ে গণজাগরণে রূপ নিচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন নামে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, আর সেই ঝড়ের একটাই দাবিÑ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি। এই জামায়াত বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছে, মেনে নেয়নি দেশের স্বাধীনতা। শাহবাগ থেকে নবজাগরণের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এ আন্দোলন গড়ে উঠেছে একমাত্র তরুণ প্রজন্মের স্বতস্ফূর্ত উদ্যোগে, কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় নয়। ইতিমধ্যে তরুণদের দাবির কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালেও স্বাধীনতার সংগ্রামে তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে, তাদের সর্বোচচ সাজা দেখতে চায় জনগণ। এটাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় যেমন দলমত নির্বিশেষে জনতা রাজপথে নেমেছিল, তেমনি শাহবাগের গণজমায়েতেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নেমেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নানা গান ও সেøাগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হওয়ায় আমার কাছে শাহবাগ চত্বরকে একাত্তরের মুক্তিবাহিনীর দুর্গ বলে মনে হচ্ছে। যতোই টিভির পর্দায় দেখছি আর হারিয়ে যাচ্ছি সেই একাত্তরের দিনগুলোতে এবং নিজেকে খুঁজছি তরুণ প্রজন্মের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংহতি পেয়েছিল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে ডাকে, সেই ডাকটি ছিল ‘জয় বাংলা’। এই ডাকটি বাংলার জয়ধ্বনি দেয়। বাংলার জয়ধ্বনির সঙ্গে এ দেশের সব জয়ের ডাকটিও নিহিত থাকে। আর থাকে বলেই লাখো মানুষ ছুটে এসেছেন শাহবাগে। এই ডাককে ধরেই সারা বাংলায় মানুষের জাগরণ ঘটেছে। তারা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে সোচচার হয়েছে। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচেছ ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ অথবা ‘কাদের মোলার ফাঁসি চাইÑ ফাঁসি চাই‘আমার তোমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’; ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ যুদ্ধাপরাধীদেরÑ ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। প্রজন্ম চত্বরে এ সমাবেশে উত্তেজনা আমাকে একাত্তরের প্রথম দিকে উত্তাল দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর বার বার মনে করিয়ে দিচেছ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের কথা। যে ভাষণ শুনে আমার মতো লক্ষ লক্ষ তরুণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রজন্ম চত্বরে যোগ দিয়ে যে কেউ ঊনসত্তর বা একাত্তরের গণজমায়েতের তৃষ্ণা কিছুটা হলেও মেটাতে পারে।
নতুন প্রজন্ম ঘোষণা দিয়েছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের। শাহবাগের উত্তাল জনসমাবেশ থেকে রাজাকারমুক্ত, যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা থেকে তিন মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিযেছিল গোটা বাংলাদেশ। স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোটি কোটি মানুষ ওই তিন মিনিট যে যেখানেই ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতের শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ নীরবতা কোনো মাথা নত করা নয়, এটা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও ফাঁসির দাবি। এ নীরবতা একাত্তরের চেতনায় জাগ্রত তারুণ্যের রক্তে জ্বলে ওঠা আগুন, যা ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে। তিন মিনিটের স্তব্ধতা কাটতেই আবারও সেই অগ্নিকন্যা লাকির কণ্ঠে ধ্বনিত হলো ‘জয় বাংলা’। সেøাগানে সেøাগানে উঠল জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার। ওদের অতুলনীয় দেশপ্রেম থেকে উৎসারিত এই গভীর চেতনাসমৃদ্ধ দাবি এতোটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে একাত্তরের মতো মুষ্টিমেয় কিছু লোক ব্যতীত আজ তা গনমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেমের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। এই প্রজন্মের তরুণরা আজ প্রমাণ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণদের যোগ্য উত্তরাধিকারী।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর জামায়াত কিছুদিন চুপ থাকার পর ২৫ মার্চ রাতে তারা নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের সাথে হামলা করে। গত মঙ্গলবার শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম স্কয়ারসহ দেশের সর্বত্র একাত্তরের শহীদদের স্মরণে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তিন মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঠিক তার আগের মুহূর্তে ঢাকার মতিঝিল ও কারওয়ানবাজার এলাকায় জামায়াত এবং এর অঙ্গ-সংগঠন শিবিরের কর্মীরা তা-ব চালায়। মঙ্গলবারে মতো বুধবারও দেশব্যাপী হামলা করেছে তারা। জামায়াত-শিবিরের এই অরাজকতা নতুন কিছু নয়। একাত্তরে তারা যেমন নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করতে দ্বিধাবোধ করেনি, স্বাধীন দেশেও তারা একই ধারায় রাজনীতির নামে তান্ডব চালাচ্ছে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি বাস্তবায়নের সময় এসেছে বলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করছেন। এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। সেজন্য জামায়াত কখনো এককভাবে এ দেশে নির্বাচন করতে পারে না। কিছুদিন আগে জার্মানিতে নাৎসিবাদি রাজনীতির উত্থান হতে গিয়েছিল, কিন্তু তারা সে দেশের সরকারের অনুমতি পায়নি। অন্য নামে তারা আত্মপ্রকাশ করলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি। মানুষ কোনোভাবে অন্যায়কে গ্রহণ করে না।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির আর তাদের তাঁবেদাররা যতোই অপপ্রচার করুক, যতোই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করুক, লাখো বাঙালি ছুটে আসছে, আসবে প্রজন্ম চত্বরে। একাত্তরের মতোই নতুন বিজয়ের ফসল নিয়ে ঘরে ফিরবে তারা। কোটি প্রাণের উত্তাপে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে রুচিহীন, বিকৃতমনস্ক অপপ্রচারকারীরা। এই অপশক্তি ১৯৭১ সালে তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনোদিন অনুশোচনা করেনি। কোনোদিন ক্ষমা চায়নি। বরং ডাক দিয়েছে গৃহযুদ্ধের। আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন সব আমলে। ফলে তারা এখন রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এসে তা সংশোধন করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। এবার যখন সংবিধান আবার সংশোধন হল সে ধারাটা কেন আবার সংযোজন হল না সে প্রশ্ন অনেকের। কিন্তু দেশের ক্ষমতায় দীর্ঘদিন স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসররা যেভাবে পাকাপোক্তভাবে গেঁড়ে বসেছিল, এর সংশোধন করা সত্যি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। জনগণকে যে আর ধর্মের দোহাই দিয়ে থামিয়ে রাখা রাখা যাবে না সেটি বুঝিয়ে দিল শাহবাগের আন্দোলন। ধর্মের দোহাই দিয়ে খুনি, ধর্ষক আর লুটেরাদের যে আর রেহাই দেয়া যাবে না সে সচেতনতা এসেছে এ দেশের মানুষদের। তবে এ সচেতনতা ছিল অনেক আগ থেকে, তাদের এই সচেতনতা, তাদের এই ঘৃণা প্রকাশ করার কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না, তরুণরা সে প্ল্যাটফর্ম দেখাল। সাবাশ বাংলাদেশ, সাবাশ তারুণ্য। তোমাদেরকে আমার পক্ষ থেকে হাজার সালাম।
প্রফেসর মো. শাদাত উল্লা : উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভোরের কাগজ : রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন