মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

সৈয়দ কায়সার জেলহাজতে

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

আসামিপক্ষ তার জামিনের আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।


দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে সৈয়দ কায়সারকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসে পুলিশ। এর আগে ১৬ মে বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পুলিশ তাকে নজরদারিতে রেখেছিল। হাসপাতালের আইসিইউতে থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না পুলিশ।

ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন জানান কায়সারের আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, “সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার গুরুতর অসুস্থ। তার বুকে পেসমেকার লাগানো রয়েছে। তিনি হাঁটতে পারেন না। তাকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। তাই তাকে জামিন দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।”

এ আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, “তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুর আড়াইটার পরে ট্রাইব্যুনালে আনায় নথিপত্র দেখা সম্ভব হয়নি। তাই এ শুনানির জন্য সময়ের প্রয়োজন।”

পরে ট্রাইব্যুনাল সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে জেলহাজতে পাঠিয়ে বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ মনে করলে তার চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।”   

এর আগে গত ১৫ মে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ১৬ মে ভাটারা থানা পুলিশ তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জানতে পেরে সেখানে পাহারা বসায়। তবে হাসপাতালের আইসিইউতে থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না পুলিশ।

প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল যতো দ্রুত সম্ভব সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে গ্রেফতার করার আদেশ দিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। একই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিতে তদন্ত সংস্থাকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

ওই দিনই সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জমা দেন প্রসিকিউশন। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নজরে আনেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

দুপুর ২টায় এ আবেদনের শুনানির সময় ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। শুনানিতে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের নানা অভিযোগ ছাড়াও তদন্ত কাজে বাধা এবং সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ করে দ্রুত গ্রেফতারের আবেদন জানান।

প্রসিকিউটর রানা অভিযোগ করেন, “সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার মুক্তিযুদ্ধকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।”   

প্রসিকিউটর রানা বলেন, “এই ব্যক্তি অত্যন্ত বিত্তশালী ও প্রভাবশালী। তিনি সাক্ষীদের ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত রাখতে হুমকি দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ১০০ জনের বেশি সাক্ষী পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু তার হুমকিতে কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অনেকে তার বিরুদ্ধে জবানবন্দি ও সাক্ষ্য দেবেন।”

তিনি বলেন, ‘‘এই আসামি বাইরে থাকলে তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে এবং অর্থ-বিত্তের জোরে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন। তাই তদন্তের স্বার্থে তাকে দ্রুত গ্রেফতারের আবেদন জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুর্ধর্ষ রাজাকার বাহিনী গঠন করে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লা হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও রাহাজানিসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন