বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

‘জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে: নিষিদ্ধ করুন জামায়াত’

ঢাকা: চার দশক পর দেশ কলঙ্কমুক্তির পথ ধরে হাঁটছে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে বাকি যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি দিলে জাতি পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত হবে।

রায়ের পর বাংলানিউজের সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্টজনরা এমনটাই জানিয়েছেন।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘চার দশক ধরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। সাঈদী, বাচ্চু রাজাকার ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত রায় শোনার পর আমরা আনন্দিত।’’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘রায় প্রত্যাশিত। এখন অপেক্ষা রায় কার্যকরের। আরও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত প্রত্যাশিত রায় দেখতে চায় জাতি।’’

তিনি বলেন, ‘‘যতো দ্রুত যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর হবে ততই জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।’’

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘কর্ণেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে আমরা ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। এ কামারুজ্জামান ১১ নম্বর সেক্টরেরই যুদ্ধাপরাধী। শেরপুরের যারা নির্যাতিত হয়েছেন তারা আজ শান্তি পেয়েছেন। এ রায় যেনো কার্যকর হয়। এটাই এখন প্রত্যাশা।’’

অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের কাঙ্খিত রায় দিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এ শিক্ষাবিদ।

বিচারের রায় শুনতে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন সকাল থেকেই। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘‘এই রায়ে স্বস্তি পেয়েছি। আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে আসছিলাম। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছিলাম, সেগুলোর কম-বেশি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি রায় ঘোষণা হলেও এখনও রায় কার্যকর হয়নি। রায় কার্যকর হলে প্রাণ খুলে উল্লাস প্রকাশ করতে পারবো। দক্ষিণ এশিয়ায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে বিচারমুখিতার দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে এই রায়। এটি ইতিহাস।’’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে জনমানুষের দাবি পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইবুনাল গঠন করা হয়েছে। এই আদালতের কাছে মানুষ যথার্থ বিচার চায়। জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়ে সংশয় ছিল, এই রায়ে তা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৩ বছর দেড় মাস পার করে ৪র্থ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করলেন। বৃহস্পতিবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় প্রথম ট্রাইব্যুনাল। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। গঠনের পর প্রথম দু’বছর যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারের গতি শ্লথ থাকলেও গত বছর এ প্রক্রিয়া গতি পায়।

গত ৩ বছরে ৪ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও ১ জনের। দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে বিএনপি-জামায়াতের আরও ৪ নেতার। আর বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলা এবং আওয়ামী লীগের এক বহিষ্কৃত নেতা (জামায়াতের সাবেক রোকন) ও আরও ২ শীর্ষ জামায়াত নেতার মোট ৪ মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে শিগগিরই।

এ পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩ মামলার রায় ট্রাইব্যুনাল-২ আর এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

ঘোষিত রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি এবং জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন