বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজত সংযত না হলে ছেলেরা বসে থাকবে না ॥ মহিউদ্দিন

চট্টগ্রামঃ আমরা অস্ত্রের রাজনীতি করি না। অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। তাই বলে কেউ যদি বোমা মারে, অস্ত্রের ভয় দেখায় তাহলে আমাদের ছেলেরা বসে থাকবে না। ধৈর্যের একটা সীমা আছে। যদি আঘাত করা হয় তাহলে পাল্টাআঘাত করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
১৪ দলের ব্যানারে বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, যদি সন্ত্রাস করেন বা সড়ক অবরোধ করে বসে থাকতে চান তাহলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিতাড়িত করা হবে। শহরে আর ঢুকতে দেয়া হবে না। মহিউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ইসলাম রক্ষার নামে যারা বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসা থেকে এসে দিনের পর দিন শহরে অবস্থান করছে তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী। এরা রাতের পর রাত সাধারণ মুসল্লিদের মসজিদে থেকে মসজিদকে হোটেল বানিয়েছে। মসজিদের ফ্যান চালাচ্ছে, পানি ও শৌচাগার ব্যবহার করছে। এদের চট্টগ্রাম শহর থেকে বের করে দিতে হবে। যদি আমরা আমাদের ছেলেদের নির্দেশ দিই তাহলে কেউ রক্ষা পাবেন না। সুতরাং সাবধান হয়ে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসা একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে ২০ হাজার জঙ্গীকে ট্রেনিং দিয়ে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে আফগান যুদ্ধে ১০ হাজার মারা গেছে, অবশিষ্ট ১০ হাজার ফেরত এসেছে। তারা এখন যোগ দিয়েছে হেফাজতে ইসলামির সঙ্গে। ইসলাম রক্ষার জন্য যুদ্ধে গেলেও তারা ইসলাম রক্ষা করতে পারেনি। বরং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ধ্বংস হয়েছে। লালখান বাজার মাদ্রাসায় অনেক বহিরাগত সন্ত্রাসী আছে বলে উল্লেখ করে পুলিশের উদ্দেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসা ঘেরাও করে তল্লাশি করুন। যারা অবস্থান করছে তারা ছাত্র না বহিরাগত জঙ্গী তা দেখুন। চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশমুখে পুলিশী চেকপোস্ট বসানোর আহ্বান জানিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বহিরাগত এরা শহরকে ধ্বংস করছে, শহরের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তারপরও যদি বহিরাগত জঙ্গীরা শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে মহিউদ্দিন চৌধুরী হুমিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশে কড়া ভাষায় বলেন, রাস্তা অবরোধ করতে পারবেন না। সে সুযোগ আর দেয়া হবে না। পুলিশকে বলছি ট্রাক বা বাসযোগে এ সন্ত্রাসীদের ঢুকতে দেবেন না। আর যদি সন্ত্রাসীরা এসে তান্ডব চালাতে চায় তাহলে আমরা নীরব ভূমিকায় থাকব না। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফিকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ চাঁদা দিয়ে, কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে এবং নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করে কওমী মাদ্রাসা চালু রেখেছি। কিন্তু আপনারা এ অর্থ দিয়ে লেখাপড়া না করিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জঙ্গী আন্দোলনে ব্যবহার করবেন তা হবে না। গরিব-এতিম ছেলেদের নিয়ে রাজনীতির খেলা আর খেলবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন, এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাডভোকেট আবু হানিফ, মহানগর জাসদের জসিম উদ্দিন বাবুল প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের নামে যারা রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার আগে কখনও ধর্ম বা রসূলের (স) বিরুদ্ধে অপবাদ দানকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। ধর্ম অবমাননা কেউ করছে মর্মে কোন অভিযোগও উত্থাপন করেননি। গণজাগরণ মঞ্চ যখন দেশের ১৫ কোটি মানুষকে জাগিয়ে তুলছে ঠিক সেই মুহূর্তে তারা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির পক্ষে মাঠে নেমেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর শেষ কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানের মতো অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ফেরত জঙ্গী গোষ্ঠী। ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে এরা পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারেনি। এবারও পারবে না। যারা কোমলমতি মাদ্রাসা ছাত্রদের রাস্তায় বসিয়ে কোরান-হাদিস পড়ানোর নামে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, একদিন দুনিয়ায় এবং আখেরাতে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। লিখিত বক্তব্যে এই জঙ্গী গোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন