রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করো | 'রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ'-এর সমাবেশে বাংলাদেশ'-এর সমাবেশে বিশিষ্টজনের দাবি

২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনে অবিলম্বে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। একই সঙ্গে তারা দল-মত নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সাম্প্রদায়িক হামলায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের নেতৃত্বস্থানীয় সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে 'রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ' জাতীয় সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা, তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করে
.নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা এবং মুক্তচিন্তার পথ খোলা রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিহত করতে সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে 'রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ' সমাবেশ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলন থেকে ২৭ এপ্রিল ঢাকায় নারী মহাসমাবেশ সফল করারও আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। পাঁচ দফা হচ্ছে_ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা, তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা এবং নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা।
'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' আহ্বানভিত্তিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর একটি শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ। পাঁচ দফা দাবিসংবলিত সম্মেলনের ঘোষণা পড়েন সারওয়ার আলী। ঘোষণায় বলা হয়, মাতৃভূমি আজ গভীর সংকটে। এ সংকট থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনেই এ সম্মেলনের আয়োজন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, '১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানি হানাদাররা বর্বর গণহত্যা-গণধর্ষণ চালিয়েছিল, তখন হেফাজতের নেতাদের ভূমিকা কী ছিল? সেদিন ধর্মের নামে কারা ঘাতক পাকিস্তানি হানাদারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল, সেটাও জাতি জানে। আজ কোন অধিকারে হেফাজত নেতারা ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার ঘোষণা দেন? বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, কোনো ধর্মান্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। বাংলাদেশকে জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর সব চক্রান্ত রুখে দেওয়া হবে।' জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা মানা হলে বাংলাদেশ ১৩শ' বছর পিছিয়ে যাবে। কিন্তু দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে, অগ্রযাত্রার বাংলাদেশের পক্ষে। এই তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নেই। সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, বিভিন্ন সংকটে নেতৃত্ব দেওয়া বিশিষ্টজন তরুণ প্রজন্মের এগিয়ে যাওয়ার বড় শক্তি। তারা পাশে থাকলে তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আদায়সহ ৩০ লাখ শহীদের রক্তে গড়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক-ধর্মান্ধ শক্তির সব অশুভ তৎপরতা রুখে দেবে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কামাল লোহানী, অজয় রায়, কাইয়ুম চৌধুরী, সুলতানা কামাল, ড. সন্জীদা খাতুন, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ড. সুশান্ত কুমার দাশ, ড. শাহদীন মালিক, আবেদ খান, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, রামেন্দু মজুমদার, খুশী কবির, নাসিমুন আরা হক মিনু এবং কৃষিবিদ আবিদুর রেজা। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠক, নারী নেত্রীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ সম্মেলনে অংশ নেন। ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তারা বিরাট মিছিল নিয়ে সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ক্ষমতার রাজনীতি আর মুক্তির রাজনীতি_ এ দুই ধারায় রাজনীতি বিভক্ত হয়ে গেছে। ক্ষমতার রাজনীতি অন্যান্য অস্ত্রের মতো ধর্মকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
সুলতানা কামাল বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। এখনই সাম্প্রদায়িক আক্রমণ রুখে দাঁড়াতে হবে, রুখে দিতে হবে। তা না হলে এই দেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, এই দেশ আমাদের অহঙ্কার। অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ, যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বাস করে। এটিই আমাদের অহঙ্কার, আমাদের চেতনা। এ চেতনা হারিয়ে যেতে দেব না।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এই দেশ একটি জাতি-রাষ্ট্র। যখনই কোনো সংকট এসেছে, জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে।
ড. সন্জীদা খাতুন বলেন, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যেন আমরা আজীবন এ রকম মুক্ত পরিবেশে গাইতে পারি, সেই বাংলাদেশই আমরা চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে স্ফুলিঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে, তার ভয়ে ভীত হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। কারণ, তারা ভীত। তারা কখনও জয়ী হবে না।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আরব বিশ্বে মার্কিন কূটনীতির সাম্প্রতিক ধারা হচ্ছে মডারেট ইসলামপন্থি দলগুলোকে সমর্থন করা। সেই চেষ্টা বাংলাদেশেও চলছে, এমন সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। উগ্র, ধর্মান্ধ হেফাজতের উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের 'মডারেট মুসলিম' নীতি বাস্তবায়নের একটা চাল আছে কি-না, সে বিষয়েও সচেতন থাকা দরকার। অবশ্যই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, জামায়াত-হেফাজত বাড়তে থাকলে বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে। বিএনপি বিলীন হোক এটা কেউ চায় না, বরং একটা ইতিবাচক চিন্তার দল হিসেবে বিএনপির ডানপন্থি রাজনীতি চলার পক্ষে সবাই।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, হেফাজত জামায়াতের সামাজিক সংগঠন। জামায়াত-শিবির হেফাজতের ব্যানার সামনে রেখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার চেষ্টা করছে। 
#
সমকাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন