রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াত-শিবিরের সব প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান গণজাগরণ মঞ্চের

পক্ষকালব্যাপী গণসংযোগ শুরু
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের পাশাপাশি চলমান আন্দোলন এগিয়ে নিতে পক্ষকালব্যাপী গণসংযোগ শুরু করেছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচী চলবে ৪ মে পর্যন্ত। গণসংযোগের প্রথম দিনে জাগরণ মঞ্চের নেতারা ৬ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক, বীমা, মিডিয়া, কোচিং সেন্টারসহ আট ধরনের প্রতিষ্ঠান বর্জন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জমায়েত শেষে টিএসসি থেকে শুরু হয় কর্মসূচী। জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে এতে অংশ নেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। টিএসসিসহ আশপাশের এলাকায় ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের হাতে হাতে তুলে দেয়া হয় গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপির কপি।
এছাড়া যুদ্ধাপরাধী ও তাদের তাঁবেদারদের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দেয়া হয় আরেকটি লিফলেট। কর্মসূচী চলাকালে সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের স্বাগত জানান। তাঁরা আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ৪২ বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অপেক্ষা করেছে বাংলাদেশের মানুষ। এবার সকলের প্রত্যাশা একটাই ন্যায়বিচার পাবে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হবে। অন্যথায় সকলে মিলে আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এ সময় ইমরান এইচ সরকার বলেন, দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্দোলন অহিংস, কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফিরে যাবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
যেসব প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান ॥ সর্বস্তরের মানুষের কাছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড, তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কোরাল রীফ মিশন ডেভেলপারস, আবাসন সিটি, লালমাটিয়া হাউজিং, ওয়ান সিটি, ফোকাস (বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং), রেটিনা (মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং), কনক্রিট, কনসেপ্ট, এক্সিলেন্ট, দৈনিক নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, সোনার বাংলা ব্লগ, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইবনে সিনা ফার্ম, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইবনে সিনা ফার্ম, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মানারাত, লাইসিয়াম কিন্ডারগার্টেন, প্রফেসরস, কারেন্ট নিউজ, আধুনিক প্রকাশনী, কিশোর কণ্ঠ প্রকাশনী, ফুঁলকুড়ি প্রকাশনী, মদিনা পাবলিকেশনস, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, ফুলকুড়ি সাহিত্য পরিষদ, সাইমুম, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, সিএনসি, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, কেয়ারি জিন্দাবাদ।
শাহবাগের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনকে বার বার বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। এজন্য তিনি মাহমুদুর রহমানকে দায়ী করে বলেন, ‘দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এই বিতর্কের নায়ক। সকালে ইনস্টিটউশন ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. ইমরান বলেন, মাহমুদুর রহমান দৈনিক আমার দেশ-এ মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছেন। আমরা আগে থেকেই তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এজন্য কয়েকদফা আল্টিমেটামও দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় থাকতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাঁকে আগেই গ্রেফতার করা হলে এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না বলে মনে করেন তিনি।
এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচীর কথা তুলে ধরে ডা. ইমরান বলেন, শাহবাগের আন্দোলনে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সমর্থন দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। দেশের সব মা, সব বাবাকে নিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ব আমরা। এজন্য চলমান আন্দোলনে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন