শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

নজিরবিহীন হরতাল, সদরঘাটে লঞ্চ ভিড়ছে না

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সদরঘাট থেকে: লংমার্চ উপলক্ষে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা লঞ্চগুলোকে সকাল থেকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি ঘাটে। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৩টি সংগঠনের আহ্বানে অহিংস ও নজিরবিহীন হরতাল চলছে।
সদরঘাটে বিভিন্ন টামিনাল ঘুরে জানা গেছে, লংমার্চ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নদী পথে হাজার হাজার মানুষ রওয়ানা দেয়। হরতাল ও লংমার্চ মুখোমুখি হয়ে যাওয়ায় অনেক লঞ্চ মালিক শুক্রবার থেকে লঞ্চ বন্ধ করে দেয়।

কিছু লঞ্চ ঢাকার বাহিরে থেকে আসলেও প্রশাসনের লোকজন নাশকতা এড়াতে ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে দেয়নি।
শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
শনিবার ভোর থেকেই সদরঘাটে লঞ্চ ভিড়তে দেওয়া হয়নি।  হরতাল ও লংমার্চে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকায় নদী পথে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম।
শনিবার সকালে বরিশাল, ভোলা, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় আসা প্রায় ২০-২৫টি লঞ্চ শ্যামপুর, বাবু বাজার, পোস্তগোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে। সকাল ১০টার মধ্যে সদরঘাট থেকে প্রায় ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে মিতালী নামের একটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
চাঁদপুরের উদ্দেশে ঘাটে থাকা এমবি লামিয়া’র সুপারভাইজার মো. লিটন বাংলানিউজকে বলেন,‘ প্রতিদিন সকাল দুপুর ১২টার মধ্যে ১০টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যায়। যাত্রী না থাকা ও মালিক পক্ষ থেকে নিষেধাষ্ণা থাকায় মাত্র দু’টি লঞ্চ ঘাটে আছে।
অন্য হরতালে ঘাট থেকে এসময় ৫টি লঞ্চ ছাড়লেও মাত্র একটি লঞ্চ ঘাটে আছে। সেটি ছাড়বে কি না সন্দেহ রয়েছে। ইতিহাসের নজিরবিহীন হরতাল বলে তিনি উল্লেখ করেন’।
চাঁদপুরগামী যাত্রী আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন,‘ হরতাল দেখেছি, তবে এমন হরতাল দেখিনি। রাস্তাঘাটে একটি সিএনজি অটোরিক্সা পযন্ত নেই। অন্য হরতালে ঢাকার এতিহ্যবাহী সদরঘাট লঞ্চঘাট লোকে লোকারণ্য থাকলেও আমার নদীপথ ভ্রমণের দীঘ ৩০ বছরে এ প্রথম দেখলাম লঞ্চ ঘাটে লোক শূন্য। যাত্রী কম থাকার অজুহাতে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।

শরীয়তপুরগামী লঞ্চ কেয়া-১ এর ম্যানেজার জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘ হরতাল ও লং মার্চের কারণে সোনারতরী, মেঘনা রানী, সুরুয়া, মিতালী, বোগদাদিয়া, সুরেশ্বর, রিয়াজ-২, সুন্দরবনসহ প্রায় সব লঞ্চই বন্ধ রয়েছে। এটা আসলে হরতাল, লংমার্চ না আমাদের পেটে লাথি দেওয়া’।

এমবি লামিয়া’র মালিক প্রিন্স আওলাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘ সরকার বা মালিক সমিতি থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা হয়নি। লঞ্চ মালিক সমিতি হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া যাত্রী কম থাকায় ঘাটে লঞ্চ কম।

৫নং ঘাটে কাউন্টার ম্যানেজার সফি উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন,‘ আমি প্রায় ত্রিশ বছর এ ঘাটে চাকরি করি। এ প্রথম জনাকীণ এ ঘাটে লোক কম দেখলাম। যাত্রী না থাকায় টিকিটও কম বিক্রি হচ্ছে। এতে সরকারও লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ ঘাটের সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের রিজিক জড়িত। হরতাল দিয়ে এদের পেটে লাথি না দিতে আহ্বান জানাই’।

শুক্রবার গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষণা অনুসারে নৌ-পথে হেফাজতকর্মীদের ঢাকা আসা ঠেকাতে সদরঘাটে অবস্থান করছে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। ঘাটে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছুটির দিনে ডাকা এ ব্যতিক্রমী হরতাল শুরু হলে সন্ধ্যা থেকে ঢাকার রাস্তায় বাস, ব্যক্তিগত গাড়িসহ যান চলাচল একেবারেই কমে যায়। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ ছিল। তবে রাজপথে রিকশা ও বেশ কিছু অটোরিকশা চলেছে।
লংমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর সঙ্গে বাইরের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল।শনিবারও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকায় গণপরিবহনসহ কোনো ধরনের গাড়ি চলছেনা। তবে অল্প কিছু সিএনজি অটোরিক্সা, অটো আর রিক্সা চলাচল করছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৩টি সংগঠন বৃহস্পতিবার এ হরতালের ডাক দেয়। বাম রাজনৈতিক দলগুলো, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, গণজাগরণ মঞ্চ এবং বেশ কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এতে সমর্থন দিয়েছে।

অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের ডাকা ২২ ঘণ্টার দেশব্যাপী অবরোধ চলবে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত। অবরোধ শেষে গণজাগরণ চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে মহাসমাবেশ।

এরই মধ্যে গণজাগরণের কিছু সংগঠক ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননার অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি এসব দাবিতে ও গণজাগরণ ঠেকাতে শনিবার ঢাকামুখী লংমার্চ ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন