মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

শিগগির 'ফ্রিডম অপারেশন'

সারাদেশে নাশকতায় জড়িতদের
তালিকা তৈরি
ফসিহ উদ্দীন মাহতাব, সমকাল
নানা চেষ্টা সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা রুখতে হিমশিম খাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সহিংসতা মোকাবেলা করতে গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের প্রাণ দিতে হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের রক্ষার্থে জামায়াত-শিবির দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে গেছে। রাজনীতির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের লাগাম এখনই বন্ধ করতে হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

এমন পরিস্থিতিতে উচ্চপর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক শেষে সরকার হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে। নাশকতায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বিশেষ অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেকেই। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিশেষ গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী শিগগির সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে বিশেষ একটি টিম। এই টিমের অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে 'ফ্রিডম অপারেশন'। বিজিবি, র‌্যাব,
এপিবিএন ও আনসারের চৌকস সদস্যদের সমন্বয়ে এই টিম একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে অভিযানে অংশ নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতা মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গলদঘর্ম হচ্ছে। এরই মধ্যে যোগ হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তারা ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার ফটিকছড়িতে সহিংস ঘটনার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রমাণ পেয়েছে। সারাদেশে তারা আরও সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর নকশা এঁকেছে বলে সরকারের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নেপথ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকার মধ্যে জামায়াত-শিবির নেতাদের নাম বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। আইনি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের প্রস্তুতকৃত নাশকতায় নেপথ্যদের নামের তালিকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে জামায়াতের ১২৪ ও বিএনপির ৬৮ জন, খুলনা বিভাগে জামায়াতের ৯৩ ও বিএনপির ৮ জন, রংপুর বিভাগে জামায়াতের ১০০ ও বিএনপির ৮২, চট্টগ্রাম বিভাগে জামায়াতের ১৩৯ ও বিএনপির ১০২ জন, ঢাকা বিভাগে জামায়াতের ১৭২ ও বিএনপির ১১৬ জন, বরিশাল বিভাগে জামায়াতের ৫৪ ও বিএনপির ১০৮ জন এবং সিলেট বিভাগে জামায়াতের ৭৫ ও বিএনপির ৪৮ জনের নাম রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসব নেতাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই শীর্ষ নেতা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তারা ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, 'সারাদেশে সহিংসতার পেছনে যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা দেশ অস্থিতিশীল করার নীলনকশার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিমও মাঠে কাজ করছে। রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হবে না দাবি করে টুকু বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
'ফ্রিডম অপারেশন' অভিযান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন টিম কাজ করছে। তবে যারা ধর্মের নামে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম যে কোনো নামে অপারেশন চালাতে পারে।' এখন পর্যন্ত অভিযানের নাম নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'দুই মাসব্যাপী আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে তাতে দেশ ভয়াবহ দিকে চলে যাচ্ছে। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন