মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

শাহবাগ আর নির্ঘুম নয়!

জেবুন নেসা আলো, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শাহবাগ থেকে: দেশ জাগানো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এখন আর নির্ঘুম নয়। দিনের পর দিন ফাঁসির দাবিতে উন্মাদ হয়ে ওঠা এ চত্বর অনেকটাই যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। রাত-দিন গণমানুষের পদচারণায় মুখর থাকা এ শাহবাগ রাজনৈতিক টানাপড়েনে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সোমবার মধ্যরাতের শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।


পহেলা বৈশাখের উৎসব উপলক্ষে রোববার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় শাহবাগ। তবে মঙ্গলবার আবারও কাটা তার সংশ্লিষ্ট শক্ত ব্যারিকেড তৈরির কাজ চলছে সোমবার মধ্যরাত থেকে। তবে প্রজন্ম চত্বরের পরিসর যেন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। এবার ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছে জাদুঘরের সামনে থেকে এবং অন্যপাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে।

মাঝখানের এ সংকীর্ণ অংশেই চলবে প্রজন্ম চত্বরের কর্মসূচী। শুধু স্থান সংকীর্নতাই নয় দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলন চালাতে একটি বিশালাকার যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল সেটিও সম্প্রতি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখানে এখন অস্থায়ী ছোট একটি মঞ্চ রাখা হয়েছে।

মধ্যরাতে সরেজমিনে দেখা যায়, রাতের কোনো কর্মসূচী না থাকায় মঞ্চটি ফাঁকা পড়ে আছে। রক্ত গরম করে দেয়া স্লোগান আর যে বাদ্যের ঝঙ্কার জাগিয়ে রাখতো সারা দেশকে সেই চত্বরে এখন শুনশান নীরবতা। শাহবাগের সেই রাতজাগা পাখিদেরও দেখা মেলেনি।

তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মীরা আগের মতোই নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রেখেছে শাহবাগকে। কর্মসূচী না থাকলেও শাহবাগের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপরতা কমেনি।

শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার নাজির বাংলানিউজকে জানান, কর্মসূচী না থাকলেও এখানে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকে।

গণজাগরণ মঞ্চের এ শক্তিকে নিজের দখলে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অপচেষ্টা আর নানামুখী বিতর্কে ভাটা পড়েছে এ আন্দোলনে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষের ঐক্যমতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেই দাবিটিও যেন স্তিমিত হয়ে পড়েছে তথাকথিত ‘আস্তিক’ ‘নাস্তিকতার’র বিচারে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে ফাঁসির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সংস্কৃতি কর্মী, ব্লগারসহ বিভিন্ন সংগঠনের তরুণদের মাধ্যমে এ আন্দোলনের সুত্রপাত হয়। এরপর মাসব্যাপী রাত-দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে এ আন্দোলন। এতে শাহবাগে গণমানুষের জোয়ার সৃষ্টি হয়।

তবে ব্লাগার রাজিব হত্যার পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে আন্দোলনের দৃশ্যপট। আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণের অভিয়োগ উঠে। অনেকে অভিযোগ তুলে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপোসের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীদের পক্ষ থেকে শুরু হয় শাহবাগের আন্দোলনের গতি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলে দেয় ‘আস্তিক’ ‘নাস্তিক’ শব্দগুলোর মাধ্যমে। এতে ভাটা পড়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আর মূল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ব্লগারদের কার্যক্রম আর নিজেদের  ‘আস্তিক’ প্রমাণের চেষ্টা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন