শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতের ১৩ দফা মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেয়ার সনদ

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচী ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। এই ১৩ দফা মধ্যযুগের অন্ধকারে ফিরিয়ে নেয়ার সনদ। তাদের দাবি বাস্তবায়ন হলে নারী অধিকারও খর্ব হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৩ দফার প্রতিবাদ, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও নারী অধিকার সুরক্ষার দাবিতে মহাসমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের উপচার্য অধ্যাপক ড. এসএম নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, বিচারপতি এএফএম মেছবাহউদ্দীন প্রমুখ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান খান।
অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা একবিংশ শতাব্দীতে অচিন্তনীয়। একই সঙ্গে অগ্রহণযোগ্য। সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নাদিয়া শারমিনের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। তবে ১৩ দফার বিষয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেননি। খালেদা জিয়াকে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে।
বিএফইউজে সভাপতি বলেন, মহাজোট সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে তরুণ সমাজ জেগে উঠেছে। তবে তরুণ সমাজের এই জাগরণে ভীত হয়ে জামায়াত-শিবির চক্র ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বুয়েটের উপচার্য ড. নজরুল ইসলাম বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা কার্যকর হলে আধুনিক সভ্যতা নষ্ট হয়ে যাবে। দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে ১৩ দফার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধর্মের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। ধর্ম থাকবে মানুষের জীবনে। তবে এই ধর্মের প্রভাব যেন রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ১৩ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ১৩ দফার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে। হরতালের বিষয়ে তিনি বলেন, হরতালের ফলে পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। পরীক্ষাকে হরতালের আওতমুক্ত রাখতে হবে।
ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠী এখন মরিয়া। তারা যুদ্ধাপরাধ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে শুরু থেকেই নানাভাবে বাধাবিঘœ সৃষ্টি করে বিচার বানচাল করতে চায়। এ জন্য কয়েক মাস ধরে গোটা দেশে তা-ব শুরু করেছে। হরতাল আহ্বান করছে, জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে, জ্বালাও পোড়াও করছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করছে। এছাড়া তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলাও চালিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা ঘোষণা করেছে। তিনি পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে ১৩ দফা প্রত্যাখ্যান করে মহাসমাবেশসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এসব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিকর্মী, নারীসহ সকল পেশাজীবীর প্রতি আহ্বান জানান।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচী ॥ হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার প্রতিবাদ, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও নারী অধিকার সুরক্ষার দাবিতে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় দেড় মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচী অনুযায়ী শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচী। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, খুলনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্র শাখাসহ অন্যান্য জেলায় এই অবস্থান কর্মসূচী পালিত হবে। ২০ এপ্রিল ময়মনসিংহে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা সমাবেশ। ২২ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে মৌলবাদের অর্থনীতি বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক। ২৭ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন। ২১ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বিভাগীয় শহরে সমাবেশ। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পেশাজীবী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন