শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াতের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মদিনা সনদও সাংঘর্ষিক

শুনানিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া নিবন্ধন সংক্রান্ত রিট আবেদনে হাইকোর্টের জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানিতে রিট দায়েরকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘জামায়াতের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মদিনা সনদও সাংঘর্ষিক। মদিনার সকল জনগণ মিলে এর মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারণ করেছেন। এতে ইসলামী বা কোন ধর্মগ্রন্থ আরোপিত করা হয়নি। ওখানে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।’ পরে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেছে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত জবাব আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারির পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়েছে। যেখানে তাঁর (সেক্রেটারি) ছেলেকে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, এটা পলিটিক্যাল পার্টির বিষয়। এখানে তো ছেলেকে এ্যাটর্নি দিতে পারেন না। আদালত আবেদনটি ঠিক করতে বলেছে।’
শুনানিতে তানিয়া আমীর বলেন, ‘চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে না। জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না। জামায়াত একটি সাম্প্রদায়কি দল। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদশ অনুসারে কোন সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোন শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি রাজনৈতিক দলের শাখা। তারা স্বীকারই করে, তাদের জন্ম ভারতে। বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে।’
শুনানিতে তানিয়া আমীর আরও বলেন, ‘মদিনা সনদে নবী মোহাম্মদ (স.) সকল গোত্রের সঙ্গে তথা নন-মুসলিমদের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। সেখানে সবাই স্বাক্ষর করেছেন। আর মদিনা সনদের বাইরে আর কিছুই তো হতে পারে না। মদিনা সনদ হচ্ছে লিখিত দলিল। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মদিনা সনদেও সাংঘর্ষিক। মদিনার সকল জনগণ মিলে এর মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারণ করেছেন। এতে ইসলামী বা কোন ধর্মগ্রন্থ আরোপিত হয়নি। ওখানে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।’ তানিয়া আমীর বলেন, ‘জামায়াত ইসলাম কায়েমের কথা বলেছে। প্রশ্ন হলো, তারা কখন, কোথায় ও কীভাবে ইসলাম কায়েমের কথা পেয়েছেন। স্বয়ং রাসূল (স.) ছিলেন মেসেঞ্জার।’ এর আগে আদালতে হলফনামা আকারে নির্বাচন কমিশন রুলের জবাব দাখিল করা হয়েছে।
২০০৯ সালে ২৭ জানুয়ারি জারি করা রুলে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ববাহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আধ্যাশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তৎকালীন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলে। রুলটি পরে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আংশিক শুনানির মধ্যেই ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। আদেশে, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
এর আগে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সী আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন।
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নবেম্বরে দু’বার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নবেম্বরে দু’বার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন