শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে নাশকতার নীলনক্সা জামায়াতের

ফিরোজ মান্না ॥ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনকেই এখন ঢাল হিসেবে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কর্মসূচী দিয়ে মাঠে থাকার কৌশল নিয়ে আগাতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র কোটি কোটি টাকা ঢালছে। জামায়াত-বিএনপি হেফাজতকে দিয়ে আরও কঠিন নাশকতার ছক কষেছে। এই ছক বাস্তবায়ন করতে হেফাজতের কর্মীরা মাঠে নেমেছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে নাশকতার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন তথ্য জানিয়েছে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দা সংস্থাটি জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলাম মূলত কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ইসলামী সংগঠন। ইসলাম রক্ষা ও এর হেফাজত করা সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। অতীতে সংগঠনটি জাতীয় নারীনীতি ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি সম্প্রতি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষানীতির বিরুদ্ধেও সংগঠনটি অবস্থান নেয়। গত ৬ এপ্রিল তারা ঢাকার মতিঝিলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বিরোধী সমাবেশ করে। ওই সমাবেশ থেকে নাস্তিক ব্লগারদের কঠোর শাস্তি এবং মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ইসলাম অবমাননা প্রতিরোধ আইন করাসহ ১৩ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচী শেষে ৫ মে তারা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। তবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর হেফাজতে ইসলামের রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। মাহমুদুর রহমান কট্টর ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। জামায়াত-বিএনপির প্রিয়ভাজন সাংবাদিক। এর আগে তিনি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর সঙ্গে বৈঠক করেন। গত ১১ এপ্রিল মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার মুক্তির দাবীটি তাদের অন্যতম দাবী হিসাবে উঠে আসে। গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের মজলিশ-ই-শূরার বৈঠকে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী সকল কওমী মাদ্রাসায় খতমে বুখারী, খতমে ইউনুস ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অয়োজনের কর্মসূচী গ্রহণ করা করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন কর্মসূচী কঠোর ও গতিশীল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারা মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবে। তারা মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার নিয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা হেফাজতের সঙ্গে কয়েক দফা বেঠক করেছেন। এ ছাড়াও হেফাজতের চলমান আন্দোলনকে তারা জামায়াত-বিএনপির চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি নির্বিঘেœ পালন করতে না পারায় এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এই সংগঠনটিকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করবে। একদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে, অন্যদিকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে সারাদেশে জাগরণ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মসূচী দিয়ে মাঠে থাকা জামায়াতের জন্য জরুরী বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তাই ‘অরাজনৈতিক’ প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে। যদিও এই সংগঠনটির বেশিরভাগ নেতাই ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের শীর্ষ পদে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক আদর্শের দিক দিয়ে ওই সব দলের অবস্থান জামায়াতের বিপরীতধর্মী। এই বিপরীতধর্মী অবস্থান সত্ত্বেও জামায়াত কৌশলে হেফাজতে ইসলামের ব্যানার কাজে লাগাচ্ছে এবং মাঠে সক্রিয় থাকার কৌশল নিয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের নেতারা বলেছেন, একক কর্মসূচী দেয়ার খুব বেশি সুযোগ এখন নেই। সরকার সব কিছুর দায় জামায়াতের ওপর চাপাচ্ছে। এ কারণেই অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীতে আমরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। সমমনা ইসলামী দল বা হেফাজতে ইসলামÑ সব পক্ষের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতাদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। যদি কোন কারণে হেফাজতে ইসলাম জামায়াত-শিবিরের কর্মকা- থেকে সরে যায়Ñ তাহলে নতুন অন্য কোন ইসলামিক দলের ওপর ভর করবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আহমদ শফী গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি পত্রিকায় খোলা চিঠি প্রকাশ করেছিলেন। ওই চিঠি প্রকাশের নেপথ্যে জামায়াতের ইন্ধন ছিল বলে জানা গেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী উপজেলার একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। পরে তারা আরও কয়েকটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে তা-ব চালায়। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে চালানো কর্মকা-ের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নূরুল আমিন বলে ছিলেন, ‘হেফাজতে ইসলামই এখন তৌহিদী জনতার ঐক্যের প্রতীক। দক্ষিণ চট্টগ্রামে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা কম এবং সেখানে জামায়াতে ইসলামীর আধিপত্য বেশি। এ কারণে সেখানে মিছিল হয়েছে। কিন্তু সব মিছিলেই ব্যানার ব্যবহৃত হয়েছে হেফাজতে ইসলামের।
আদর্শগত দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কেন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তি টাকা। টাকার বিনিময়ে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে এই উন্মাদনায় হাজার হাজার সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর সম্পদ লুট করা হয়েছে। পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সরকারী সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। এখানে ইসলামের কোন নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন নেই। মুখে বলে যাচ্ছে, ইসলাম রক্ষার জন্য এই আন্দোলন। আমির আল্লামা আহমদ শফী কাউকে ইসলামকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান জেহাদের পথে নেমেছে। এই জেহাদে জিততে তিন হাজার লোক নিয়ে ‘শহিদী কাফেলা’ গঠন করেছে। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক এই কাফেলায় রয়েছে। কাফেলার যে কোন সদদ্য অত্মঘাতী হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না। নির্দেশ পেলেই যে কোন স্থানে তারা হামলা করতে পারে। এ জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন ইসলামের নামে। গোয়েন্দা সংস্থার এই রিপোর্টটি সরকারের ওপর মহলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ করে যাচ্ছে।
#
জনকণ্ঠ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন