সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতের ১৩ দফা বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র : রবীন্দ্র গোপ

রনজু রাইম
হেজাফতে ইসলাম ব্লগারদের শাস্তি ও ইসলামরক্ষার নামে গত শনিবার রাজধানীতে সমাবেশ করে সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে তা বাস্তবায়ন না হলে বর্তমান সরকারকে তারা ক্ষমতায় থাকতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক বিশিষ্ট কবি রবীন্দ্র গোপ এসব কথা বলেন।রবীন্দ্র গোপ বলেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে জামায়াত, হেফাজতসহ কিছুসংখ্যক দলের আন্দোলন সমাবেশ এবং কোনওরকম উস্কানি ও ইস্যু ছাড়া হরতাল দেওয়াটাকে  উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন, সরকারকে চাপে রাখা, ধর্ম ও ইসলামবিরোধিতার ধোঁয়া তুলে সংস্কৃতিবান্ধব সরকারের জনমত হ্রাসকল্পে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি, সর্বোপরি বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে জামায়াত-হেফাজতসহ এসব দল।
হেফাজতের ১৩ দফা বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। তাদের এ দাবি মেনে নেওয়া হলে ক্রমেই তারা আমাদের লোকজ উত্সবগুলো নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালাবে। ইতোপূর্বে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনা থেকেই আমরা সতর্ক হতে পারি। হেফাজতের এসব শর্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিনষ্ট হবে এবং দেশ সর্বনাশের পথে পা বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, এদেশে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্যধর্ম ও সংস্কৃতির কোনও বিরোধ নেই। বিদায় হজের ভাষণে হজরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন— ধর্ম নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। অন্যের ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ করো না, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে অতীতে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
রবীন্দ্র গোপ বলেন, সংস্কৃতিবান্ধব প্রগতিশীল সরকারের প্রতি হুমকি দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেফাজতের আন্দোলনকারীরা বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ধর্মের প্রতি তাদের যদি সত্যিকার অর্থে মমত্ববোধ থাকবে তা হলে কেন মন্দিরে মূর্তি ভাঙার সময় তাদের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি আসেনি। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে বর্তমান সরকার এবং বাঙালি সংস্কৃতির কোনও বিরোধ নেই। মসজিদে জায়নামাজ, কোরআন পোড়ানো ধর্মরক্ষার কোনও আলামত নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, তাই কোরআন, সুন্নাহ, রাসুলুল্লাহ এবং ইসলামের প্রতি এ দেশে বসবাসকারী ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের লোকজনেরও আন্তরিকতা রয়েছে। কিন্তু সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে ধর্ম পালন করতে গেলে বাঙালি জাতিসত্তার বিলয় ঘটবে। সংস্কৃতিই বাঙালি জাতিসত্তার পরিচায়ক। এ সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, রক্ত দিয়েছি। সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতা আমরা কারও দানে পাইনি। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখেছি। আগামীতেও বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য এ দেশের লক্ষ-কোটি জনতা জাগ্রত আছে। একাত্তরে এ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা হানাদারদের পক্ষ নিয়ে ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন এমনকী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, তারাই আজ ভাস্কর্য, মূর্তি ভাঙাসহ ইসলামরক্ষার নামে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর বিদেশিদের জন্য অন্যতম আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র এবং মিনি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু আগ্রহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ এটি গড়ে তোলেন। এখানে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যসহ অনেক ভাস্কর্য আছে, যা ভাঙার জন্য ধর্মীয় উগ্রপন্থী মৌলবাদীরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছে। বাংলার সচেতন মানুষ তাদের রোধ করবেই। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এক না হলে ধর্মীয় মৌলবাদী উগ্র গোষ্ঠীকে রোধ এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
 লোক ও কারুশিল্প মেলা সম্পর্কে রবীন্দ্র গোপ আশা প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সোনারগাঁয়ে ৩ দিনব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা শুরু হচ্ছে পহেলা বৈশাখের দুদিন আগে। সঙ্গে থাকছে চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন। মৌলবাদীদের হুমকি-ধমকির তোয়াক্কা না করে আমরা লোকমেলায় লালন, হাছন রাজা এবং শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশনের ব্যবস্থা রেখেছি বলে যোগ করেন তিনি।  রবীন্দ্র গোপ আরও উল্লেখ করেন, কয়েক লাখ লোক মিলিত হবে সোনারগাঁয়ের এ লোকমেলায়। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে শিবের নাচনসহ বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন