সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতের আড়ালে কারা!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান
ময়মনসিংহ: শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তির দাবিতে প্রথমে আন্দোলনে নামলেও দিন দিন স্বরূপ পাল্টাতে শুরু করেছে হেফাজতে ইসলামের।

তাদের ১৩ দফা আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমানে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির প্রসঙ্গটি। পাশাপাশি দলটির জামায়াত ঘনিষ্ঠতা ও সরকার বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ্যে আসায় হেফাজতে ইসলামের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।


গত শনিবার ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর ময়মনসিংহে গণমানুষের কাছে এ সংগঠনের ভূমিকা ও উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে যুক্তিতর্ক আর বিচার-বিশ্লেষণ।

তাদের মতে, ব্লগারদের বিচারের দাবির আড়ালে মূলত সরকার পতন আন্দোলনের পথেই হাঁটছে হেফাজতে ইসলাম।

সরকারের মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে  আসছিলেন, হেফাজতে ইসলাম আসলে জামায়াতকেই হেফাজত করতে চাইছে। তাদের কর্মসূচিতে জামায়াত কর্মীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগও উঠেছে।

গত শনিবার ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের স্কাইপে কথোপকথন প্রকাশ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।

ইঙ্গিত দিয়েছেন ৩৬ ঘণ্টার হরতালের বিষয়েও। তাদের মতে, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির সঙ্গে এখন নতুন দফা হচ্ছে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির বিষয়টি।

এদিকে, ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের প্রতি চরম বিষোদগার করা হয়েছে।

গালাগাল দেওয়া হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, এমপিকেও। কিন্তু এর বিপরীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে একবারের জন্যও মুখ খোলেননি হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ সারির নেতারা।

সূত্র জানায়, এ মহাসমাবেশে কৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পদচারণা ছিল। এ সময় মুখে মাস্ক পরে মঞ্চের আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে অনেক জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদেরও।

সমাবেশ চলাকালে জেলা জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা হেফাজতের মঞ্চে গিয়ে সংহতিও প্রকাশ করেন। এ সব ঘটনা প্রবাহ হেফাজতে ইসলামের জামায়াত ঘনিষ্ঠতাই প্রমাণ করে।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, “আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, ‘হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের অন্য নাম’। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতেই মূলত ওরা মাঠে নেমেছে।

জামায়াতের বুদ্ধিজীবী হিসেবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত  মাহমুদুর রহমানের পক্ষ নিয়ে ওরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে।”

জানা যায়, নারী-নীতি বাতিলের দাবিতে ২০১০ সালের এপ্রিলে গঠিত হয়, হেফাজতে ইসলাম। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ৫টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে হেফাজতে ইসলামে।

এর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী), খেলাফত মজলিশ (ইসহাক), জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলামী পার্টি বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক।

১৮ দলীয় জোটের সমমনা হিসেবে থাকা খেলাফতে ইসলামী, খেলাফতে আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশও হেফাজতে ইসলামে রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এ সব ইসলামিক দল দেশ ও ঈমান রক্ষার আন্দোলনের নাম করে ব্লগার বিরোধী জোট গড়ে। পরে এ জোটটিই হেফাজতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়ে।

ময়মনসিংহের বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক ও রাজনীতিক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, “হেফাজতে ইসলাম কী এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে, কারা এদের নামিয়েছে, মধ্যযুগীয় দাবি কারা হেফাজতের মাধ্যমে তুলছে, সেই বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষের কাছে এখন পরিস্কার।”

তিনি বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে এরা বিষোদগার করছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না।”
#
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন