বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াত-শিবির গোপনে সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে

রাজীব আহাম্মদ
জামায়াত-শিবির গোপনে আবারও বড় ধরনের সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের শাস্তি দেওয়া হলে আবারও সহিংসতা চালাবে দলটি। জামায়াত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোলাম আযম ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে। এই রায়ের সময় সহিংসতা হতে পারে বলে সূত্র জানায়। জামায়াতের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, যেদিন রায় ঘোষিত হবে, সেদিন হরতাল দেওয়া হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে টানা দু-তিন দিন হরতাল দেওয়া হতে পারে।
তবে কয়েকজন নেতা জানান, আগের মতো তাণ্ডব চালানোর শক্তি এখন তাদের নেই। কারণ, এরই মধ্যে বহু নেতাকর্মী ধরা পড়েছে। তা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর। জামায়াত নেতারা বলছেন, তারা আপাতত আন্দোলনে (সহিংসতা) অংশ নিতে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা, তহবিল গঠন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষার কাজ করছেন।
দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াত নেতাদের দণ্ডিত করে রায় দেওয়া হলে তা মানবে না দলটি। তিনি দাবি করেন, 'সারাদেশের মানুষ জানে, জামায়াত নেতারা নির্দোষ। তাদের এক মিনিট সাজা দেওয়া হলেও মানুষ তা মানবে না।' জামায়াত নেতাদের দণ্ডিত করা হলে 'সাধারণ মানুষের' মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এমন সতর্কবার্তা দিয়ে আবারও সহিংসতার আভাস দেন জামায়াতের আরেক মজলিসে শূরার সদস্য।
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরমুহূর্ত থেকেই সারাদেশে একযোগে তাণ্ডব শুরু করে জামায়াত-শিবির। দেশের ১৬ জেলা ও ৩৩ উপজেলাকে রাজধানী থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দলটির সশস্ত্র কর্মীরা। ওই একদিনে নিহত হয় অন্তত ৪৩ জন। জামায়াতের হামলায় নিহত হন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় সদস্য। পরবর্তী কয়েক দিনে সহিংসতায় আরও ৪৫ জন নিহত হয়।
চলতি মাসের শেষ দিকে কামারুজ্জামান ও আগামী মাসের শুরুতে গোলাম আযমের রায় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জামায়াতের কয়েকজন নেতা মনে করেন, জামায়াতের কর্মী-সমর্থকের বাইরে গ্রামাঞ্চলে সাঈদীর বেশ ভক্তগোষ্ঠী রয়েছে। সাঈদীর রায়-পরবর্তী ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময় তাদের পাশে পাওয়া গিয়েছিল। গোলাম আযম ও কামারুজ্জামানের ওই রকম সাধারণ সমর্থক নেই। তাদের সাজা হলে দলীয় কর্মী ছাড়া আর কেউ এগিয়ে আসবে না। এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে জামায়াত।
সাঈদীর রায়ের পর সহিংসতা মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুত ছিল না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু এবার রায়ের আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে জামায়াতের রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা মহানগরের আমির গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন নরসিংদী, ভোলা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার আমির। রায়ের আগে জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক আটক হতে পারে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রায়ের তারিখ যত ঘনিয়ে আসবে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা তত বাড়বে। আটক-গ্রেফতার আরও বাড়বে। জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। শিবিরের এক নেতা সমকালকে জানান, এবার 'আন্দোলন' ততটা জমবে না। আমরা বাস্তবতা বুঝতে পারছি। আন্দোলনের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন অনেক কঠিন।
জোট শরিক বিএনপিকেও যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাশে পাওয়া যাবে না বলে মনে করে জামায়াত। তাই নিজ শক্তির ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে জামায়াতকে। শিবির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন গত ৩১ মার্চ গ্রেফতার হওয়ার আগে মাসজুড়েই চলে শিবিরের উদ্বুদ্ধকরণের কাজ। বাছাইকৃত কর্মী, সাথি ও সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে টিএস ও এটিএস (শিক্ষাশিবির) আয়োজন করা হয়।
আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য জরুরি তহবিলও গঠনের কাজ চলছে। জামায়াতের রুকন ও কর্মীরা মাসে যে টাকা ইয়ানত (মাসিক চাঁদা) দেন দলীয় তহবিলে, তার অন্তত ১০ গুণ এককালীন হিসেবে দিতে হচ্ছে। জামায়াতের একাধিক রুকন নিশ্চিত করেন, সাঈদীর রায়-পরবর্তী সহিংসতায় নিহত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া, আহতদের চিকিৎসা করা ও আটক কর্মী-সমর্থকদের জামিন করাতে এ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, এ ছাড়া 'আন্দোলনে' প্রচুর ব্যয় হচ্ছে। বিশেষ করে বিস্ফোরক, পেট্রোলসহ নানাবিধ ব্যয় রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাঈদীর মতো ভক্ত না থাকলেও গোলাম আযমের আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে। দীর্ঘদিন দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পালন করায় কামারুজ্জমানেরও পরিচিতি রয়েছে। এ পরিচিতি কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জামায়াত। জামায়াত সমভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল ইখাওয়ানুল মুসলেমিন তুরস্ক, মিসর ও তিউনেশিয়ায় ক্ষমতাসীন। এ দেশগুলোর সঙ্গে জোর যোগাযোগ চলছে। গোলাম আযমকে যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হয়, তার জন্য এসব দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গত ২৫ মার্চ একটি দৈনিকে প্রকাশিত কলামে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে বিস্তারিত লেখেন।
#
সমকাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন