বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

বগুড়ায় সন্ত্রাস ও নাশকতারোধ কমিটি উপদেষ্টা ও সভাপতির দায়িত্বে জামায়াত নেতারা

সমকাল
বগুড়ায় সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী। এছাড়া জামায়াতের ১৩ জন চেয়ারম্যান ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। সম্প্রতি হরতালে জ্বালাও-পোড়াও এবং নানা গুজব ছড়ানোয় নাশকতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের আলোকে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন শুরু করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৫ মার্চ ফ্যাক্সযোগে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে বগুড়ায় ১২ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা ১৫ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ উপজেলায় উপজেলা কমিটি গঠন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশে ৩১ মার্চের মধ্যে জেলার ১০৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৫টিতে কমিটি গঠন সম্পন্ন করা হয়। বাকিগুলো গঠনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কমিটির কাজের বিষয়ে ওই ফ্যাক্সবার্তায় উল্লেখ রয়েছে, সাধারণ মানুষ নানা গুজবে কান দিয়ে নাশকতার সঙ্গে যাতে জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, হরতালের মধ্যে গাড়ি

ভাংচুর, গাড়িতে আগুন যাতে না দেওয়া হয়_ এসব বিষয়সহ সব ধরনের নাশকতা বন্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই কমিটির মূল কাজ। কমিটির সদস্য ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে_ শিক্ষক, রাজনীতিক, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংস্কৃতিক কর্মী উল্লেখযোগ্য। উপজেলা কমিটিতে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব থানার ওসি। ইউনিয়ন কমিটিতে সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক, সদস্য সচিব পুলিশ সুপার। প্রজ্ঞাপনে কমিটিতে উপদেষ্টা রাখার কথা বলা হয়নি। তবুও জেলার কোনো কোনো উপজেলায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের কমিটির উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। কাহালু উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী। ওই উপজেলার জামগ্রাম ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জামায়াতের আমির আবুল কালাম আজাদ।
এ ব্যাপারে কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহম্মেদ বলেন, প্রজ্ঞাপনে কী রয়েছে সেটা বড় বিষয় নয়, এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত হলেও তিনি নাশকতা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখায় তাকে কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে। তবে ভিন্নমত ব্যক্ত করেন শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান। ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও জামায়াত নেতা। ইউএনও জানান,

প্রজ্ঞাপনে যেহেতু উপদেষ্টা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই এবং তার উপজেলায় চেয়ারম্যান যেহেতু জামায়াতের তাই তিনি কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে রাখেননি বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কায়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সন্ত্রাস ও নাশকতা কমিটি কোনো কোনো এলাকায় গণসচেতনতামূলক কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মঙ্গলবারের হরতালে যাতে নাশকতা সৃষ্টি না করা হয় সে জন্য উপজেলা প্রশাসন কমিটির সদস্যদের নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও জামায়াতের হওয়ায় সেখানেও কমিটির উপদেষ্টা রাখা হয়নি। এমনকি ওই উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজিদ স্থানীয় জামায়াত নেতা এবং ৩ মার্চ নাশকতা ঘটনার মামলার আসামি, তাই ওই ইউনিয়নের কমিটিতে সভাপতি অন্য কাউকে করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন। দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, হরতাল স্বাভাবিকভাবে পালন করার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু হরতালে গাড়িতে আগুন ভাংচুর ও গুজব সৃষ্টি করে যাতে নাশকতা কর্মকাণ্ড না করা হয় সেজন্য ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে।
বগুড়া সদর উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সদর উপজেলার সব ইউনিয়নেই কমিটি হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান। তিনি বলেন, পদাধিকার বলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কমিটির উপদেষ্টা রাখা হয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিব আহসান জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল আশরাফ জিন্নাহকে উপদেষ্টা করে তার উপজেলায় কমিটি গঠন করা হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখনও কমিটি গঠন করা হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন