বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না

রেজা শাওন
আজানের জন্য যে মাইক সেটা সব ধরনের বিতর্কের বাইরে থাকবে_ এমনটাই কাম্য। তবে গত কয়েক সপ্তাহে তা থাকেনি। ভয়ঙ্কর সব মিথ্যা আর বিভ্রান্তির প্রোপাগান্ডার শুরুটা ছিল মসজিদের মাইক থেকেই। চাঁদের বুকে কারও কল্পিত ছবি থেকে ফটিকছড়ির ইমাম সাহেবের ওপর হামলার মতো ভীষণ কিছু মিথ্যা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে মসজিদের মাইকের অনন্য ভূমিকা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। বগুড়াতে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে হাজারো মানুষকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এদের মধ্যে আবার অনেকেই সারিয়াকান্দির নদীভাঙা এলাকার লোক।
দুনিয়ার যত কিছুর ওপর তাদের ক্ষোভ। তারা থানা ঘেরাও করতে চেয়েছে। সম্প্রতি ফটিকছড়ির ঘটনাটি যে পরিকল্পিত, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হামলাকারীরা তাদের পরিকল্পনা কষার পর মসজিদের মাইকের নিয়ন্ত্রণটুকু নেওয়ার শুধু অপেক্ষায় ছিল। এরপরের ঘটনাগুলো খবর সবার জানা। চারপাশের সব কত দ্রুততম সময়ে পুড়ে অঙ্গার হতে পারে_ সে ব্যাপারে মানুষ সম্যক ধারণা পেয়েছে। হতাহতের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র যে, হতভাগ্যদর সঠিক সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত কেউই বলতে পারছে না।
অদূর ভবিষ্যতে কখনও যদি এমন দেখা যায়_ সাংকেতিক সব ধ্বনি ভেসে আসছে মসজিদের মাইক থেকে,তখন কী হবে? স্থানীয় প্রশাসন সে সংকেতের মানে না বুঝলেও, যদি দেখা যায় তা শুনে হাজার হাজার লোক ভীষণ উন্মত্ততায় রাস্তায় নেমে আসছে_ তাতে খুব বেশি একটা অবাক হওয়ার সুযোগ নেই। প্রক্রিয়াটা সম্ভবত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
সরকারের কাছে প্রশ্ন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে আইনের মারপ্যাঁচ আছে জানি। কিন্তু উস্কানি আর বিভ্রান্তি থামানোর জন্য যে কেউ চাইলেই মসজিদের মাইক থেকে 'ইচ্ছা-ঘোষণা' দিতে পারবে না, এই আইনের প্রণয়ন এবং প্রয়োগ কতটা কঠিন?
ফটিকছড়ি কিংবা দেশের অন্যান্য জায়গায় এখন পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন তাদের অনেকেরই ধর্ম ইসলাম। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊধর্ে্ব আরও দুটি পরিচয় আছে। প্রথম পরিচয় তারা মানুষ, দ্বিতীয় পরিচয় তারাও মুসলমান। কোনো একটা সময় এই মসজিদগুলোতে তারাও সারিবদ্ধ হয়ে অন্যদের সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই মসজিদ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া কোনো 'বিভ্রান্তি' মানুষের জীবনকে সংকটাপূর্ণ অবস্থায় ফেলবে না_ এমনটাই কাম্য। সামনে হয়তো আরও অস্থির সময় অপেক্ষা করছে। সৃষ্টিকর্তার ঘর হিসেবে মসজিদ মানুষের জীবনের রক্ষাঢাল হবে_ এমনটাই আশা থাকবে। মনে রাখতে হবে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজার-লাখো মসজিদকে ঘিরে কোনো কূটকৌশল রুখে দেওয়ার কাজটা কঠিন। এই কাজটা আমাদের। যে কোনো ধরনের অপতৎপরতার আগুনের আঁচটা শেষে এসে আমাদেরকেই পোড়াবে_ এই সত্যটুকু অনুধাবন প্রয়োজন। কোনো 'বিভ্রান্তি' যেন আমাদের প্রতিবেশী কিংবা পাশের মানুষটিকে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে না দেয়। নিজেদের রক্ষাঢাল আমরা নিজেরাই হতে পারি। নূ্যনতম ধৈর্যটুকু শুধু প্রয়োজন।

 শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকতা
স্টেট ইউনিভার্সিটি ইউটরেক্ট নেদারল্যান্ডস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন