রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

নাগরিক সম্মেলনে ডাক ॥ রুখো জামায়াত

০ তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত কর
০ জার্মানিতে নাৎসি বাহিনী রাজনীতির অধিকার পায়নি, বাংলাদেশে জামায়াত থাকতে পারে না
০ জামায়াত-হেফাজতপ্রীতি থাকলে বিএনপি ৬ মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে
০ রক্ত দিয়ে সংবিধান তৈরি হেফাজতের কথায় পরিবর্তন করা হবে না
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন কালক্ষেপণ না করে দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় এখনই যুদ্ধাপরাধী দল, সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ দেশের বিশিষ্টজনদের সম্মেলন থেকে একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর অগ্রগতিবিরোধী উগ্রবাদীদের তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করার ডাক দেয়া হয়েছে। আর কত সহিংসতা চালালে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে? সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তাঁরা বলেছেন, জার্মানিতে যেমন নাৎসি বাহিনী রাজনীতির অধিকার পায়নি, বাংলাদেশেও তেমনি জামায়াত থাকতে পারে না। যারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে ও যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দোদুল্যমান রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে।
বিএনপিকে অবিলম্বে জামায়াত ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, জামায়াত-হেফাজতপ্রীতি থাকলে বিএনপি ছয় মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনদিন পরাজিত হয়নি, হবেও না।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার ত্বরান্বিত করা, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধসহ ৫ দফা দাবিতে শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউিশনে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ নামের সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেছেন। সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করা এবং ‘ধর্ম অপব্যবহারকারী’ সংগঠন জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবে নাগরিক সমাজ। এছাড়া দাবি আদায়ে বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশ, আলোচনা ও মতবিনিময়সভা করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে গণজাগরণের মধ্যে এটি ছিল নাগরিক সমাজের দ্বিতীয় সম্মেলন। এর আগে ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম সম্মেলন হয়। শনিবার সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠন। সম্মেলনের শুরুতে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী, মেজর জেনারেল (অব) আমীন আহমেদ চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের জন্য প্রাাণ বিসর্জনকারী সব শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনে আন্দোলনের পক্ষে পাঁচ দফা ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন এর অন্যতম উদ্যোক্তা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। সঞ্চালনায় ছিলেন মুহম্মদ এ আরাফাত। পাঁচ দফা দাবিতে বলা হয়েছে- এক. জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করো : জামায়াত-শিবির তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা ধর্মের অপব্যবহারকারী, সংবিধানবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন। সুতরাং ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। দুুই. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত কর : বর্তমানে বিচারাধীন সব শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ ত্বরান্বিত করে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করতে হবে। তিন. সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত কর, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াও : মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে, সব মন্দির পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য শুধু সরকারই নয়, সমগ্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। চার. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নাও, মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখো : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ’৭২’র সংবিধানের মূলনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা ছাড়া আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই, ধর্মানুভূতিকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ করা যাবে না। পাঁচ. তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করতে হবে, নারী অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে : ধর্মান্ধ শক্তি ১৩ দফা দাবির মাধ্যমে দেশকে মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন করাতে উদ্ধত হয়েছে। সুতরাং ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর সব তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে সম্প্রতি মতিঝিলে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন, যাদের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। হেফাজতের ১৩ দফায় নারীনীতি বাতিল ও নারী-পুরুষের চলাফেরা বন্ধের মতো দাবিও তোলা হয়েছে, যাতে সমর্থন দিয়েছে প্রধানবিরোধী দল বিএনপি। সারওয়ার আলী বলেন, দেশের এ সঙ্কটকালে প্রয়োজন একাত্তরের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সর্বসাধারণের জাতীয় ঐক্য, যারা অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ। তরুণদের স্বাগত জানিয়ে সম্মেলনে বলা হয়, শাহবাগসহ দেশের সব জায়গায় গণজাগরণ মঞ্চের তরুণের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে শান্তিপূর্ণ পথে সমুন্নত রাখছে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ব্লগ বা ফেসবুকে মত প্রকাশ করলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয়। আর কা’বা শরীফের ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালালে কি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয় না ? তারা মন্দির ও মসজিদে আঘাত করেছে। হেফাজতের নেতারা পাকিস্তানীদের সহায়তা করেছেন সে জন্য তারা তওবা বা মাফ চায়নি। তারা ১৩ দফা বাস্তবায়নের যে দাবি জানিয়েছে তা পালন করা হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান রক্ত দিয়ে তৈরি তা হেফাজতের কথায় পরিবর্তন করা হবে না। আমরা তাদের আদর্শের বিরুদ্ধে তাদের বর্জনের ডাক দিতে চাই। জামায়াত জঙ্গীবাদী ও সন্ত্রাসী দল। অবিলম্বে তাদের নিষিব্ধ করা হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, জামায়াত-শিবির রাজাকাররা ’৭১ সালেও বাংলাদেশের জন্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, এবারও তারা স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে সংখ্যালঘু জামায়াত-শিবির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে হার মেনেছিল এবারও তারা হার মানতে বাধ্য হবে। কখনও কখনও ব্যক্তি পরাজিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনও পরাজিত হতে পারে না। স্বাধীনতার পর জামায়াত তাদের কাজ সুসংগঠিতভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই করে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সুসংগঠিতভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করিনি। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, চাকরি সামাজিকভাবে অবস্থান নেয়াসহ সব তারা করেছে। এবার যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের বিচার করতে চাওয়ায় তারা সেই বিচারে বাধা দিতে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা ’৭১ সালের মতো নারীদের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করতে চায়। আর তা হতে দেয়া হবে না। আমরা স্বাধীন এ দেশে তাদের হাত থেকে নারীর অধিকার রক্ষা করে তবেই ঘরে ফিরব।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাজনীতি দুই প্রকার। এক. ক্ষমতার রাজনীতি, দুই. মুক্তির রাজনীতি। যারা ক্ষমতার রাজনীতি করে তারা সব কাজে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসে। আর যারা মানুষের মুক্তির রাজনীতি করে মানুষকে মুক্তি দিতে চেষ্টা করে তাদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করা শুরু করে। জামায়াত-শিবির পাকিস্তান আমলে যে সব দাবি তুলতে সাহস করতে পারেনি তারা বর্তমানে দেশের বিরুদ্ধে এ সমস্ত দাবি তুলছে। মৌলবাদীদের শক্তি ও এসব দাবি রাষ্ট্রের মূলনীতিকে আঘাত করে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি আন্দোলনকে বেগবান করে তাই অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন করতে হবে। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ছায়ানাটের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করে। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। এদের নিশ্চিহ্ন করতে সরকারের কাছে অনুনয়-বিনয় নয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। এ জন্য মানুষকে জাগাতে হবে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির কাছে আমরা কখনও হারতে পারি না। হারার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এবার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে। সংস্কৃতির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগাতে হবে।
লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের অর্জিত সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। জামায়াতের ধর্মীয় কুসংস্কারকে রুখে দাঁড়াতে হবে। শুধু রুখে নয়, আমাদের শক্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত শক্তিকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, বাংলার মানুষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। হেফাজতে ইসলাম তাদের দাবি পূরণে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছে। তারা খুনী, ধর্ষকদের সমাবেশে নিয়ে এসেছে আর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শাহবাগে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, যুবতীসহ সব শ্রেণীর মানুষকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছি। তাই তাদের ভয় আছে। আসুন তাদের রুখতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, জামায়াত আল কায়েদার মতো নারী, পুরুষ, শিশু, নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাই সারাবিশ্বে আল কায়েদাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল কায়েদাকে সবাই ঘৃণা করে, তেমনি জামায়াত-শিবির চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মতো সারাদেশে সহিংসতা আর ঘৃণার রাজনীতি করে। তাই আল কায়েদার মতো কেন তাদের নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। জামায়াতকে রাজনৈতিক দল বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ডানপন্থী শক্তি রাজনীতিতে থাকা ভাল তবে জামায়াত ও হেফাজত প্রীতি থাকলে ৬ মাসের মধ্যে বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে। বিএনপি আর থাকবে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সব সময় হিংস্র ও লোলুপ ব্যবসায়ী হয়। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, আতাউর রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে এদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল। তখনকার স্লোগান ছিল- ‘বাঙালী রুখে দাঁড়াও।’ আর স্বাধীনতার পর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবারের স্লোগান হলো- ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও।’ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি করায় তারা বাংলাদেশকে ’৭১-এর দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। আপোস আর চোরাবালির রাজনীতি না করলে জামায়াত-শিবিরের উত্থান ঘটত না। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বর্তমান এ অবস্থা থেকে ফেরার আর কোন অবকাশ নেই। তারা জাতীয় পতাকাকে খাঁমচে ধরেছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ফিরিয়ে নিতে চায়। সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় জনগণের মঞ্চ তৈরি করা দরকার। আমরা ৫ দফার মধ্য দিয়ে ’৭১-এ বাংলায় ফিরে যেতে চাই পাকিস্তানে নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিতে তৈরি করা কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ অবস্থান দরকার। এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের দেশ। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ কোন দিন জয়ী হতে পারেনি, পারবেও না। সবার প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা কিভাবে রাজনীতি করার অধিকার পায় ?
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, একাত্তরে জামায়াতীরা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ধর্মের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। এবারও তারা ফায়দা লুটতে বাংলার গণজাগরণকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তবে তারা সফল হতে পারেনি। আসুন সবাই এ অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই। তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আর কত সহিংসতা করলে জামায়াতকে এ দেশে নিষিদ্ধ করা হবে? হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানলে বাংলাদেশ ১৩শ’ বছর পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, হেফাজতের একেকটি দফা মানলে বাংলাদেশ একশ’ বছর করে পিছিয়ে যাবে। ব্যাহত হবে দেশের উন্নয়ন। ব্যভিচারী এরশাদ হেফাজতে ইসলামকে পানি খাইয়েছেন। আর বিএনপির সিনিয়র নেতারা গেছেন মঞ্চে। এই সমাবেশ শেষে তারা শাহবাগে হামলা করেছিল। আমি সেখানে ছিলাম। দেখেছি তরুণদের সাহস। তাদের কাউকে ভয় পেতে দেখিনি। তারা হামলা প্রতিহত করেছে। তিনি বলেন, আমাদের একটি তরুণ সমাজ রয়েছে, যা আর কারও নেই; যারা অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই বিশাল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা ’৭১ সালে ভয় পাইনি। এখনও ভয় পাব না। আমাদের পরিষ্কার বলতে চাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, জার্মানিতে যেমন নাৎসি বাহিনী রাজনীতি করার অধিকার পায়নি, তেমনি বাংলাদেশেও জামায়াত থাকতে পারে না।
সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আসলে এভাবে আর সহ্য করতে পারি না, সহ্য করব না। প্রতিটি পর্যায়ে সবাইকে সংঘবদ্ধ হতে হবে আন্দোলনকে বৃহৎ পরিধিতে নিয়ে যেতে। ধর্মের নামে তা-ব দেখেছি, আস্ফালন শুনেছি। হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে নৃশংস হামলা দেখেছি। একাত্তরের পুনরাবৃত্তি দেখেছি। হেফাজতে ইসলামকে জামায়াতে ইসলামীর ‘সামাজিক প্রতিষ্ঠান’ উল্লেখ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের পরিপূরক হিসেবে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবীর। বলেন, সব দেশপ্রেমিক জনগণের ওপর আঘাত করা হচ্ছে ধর্মকে ব্যবহার করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন জামায়াত-শিবিরকে বন্ধ করা হচ্ছে না। সরকারকে অনতিবিলম্বে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রহণ করতে হবে। তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত না করলে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। শাহবাগের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনকে বার বার বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি মাহমুদুর রহমানকে দায়ী করে বলেন, “দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এই বিতর্কের নায়ক। দৈনিক আমার দেশে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছেন। আমরা আগে থেকেই তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তাকে আগেই গ্রেফতার করা হলে এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না।
#
জনকণ্ঠ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন