বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজত নির্বাচনে গেলে বিএনপি জাপার ভোট নষ্ট হবে

জনকণ্ঠ, শংকর কুমার দে ॥ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ করে গণজমায়েত অনুষ্ঠানের পর বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। হেফাজতে ইসলাম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এই খবর চাউর হওয়ার পর ভোট ব্যাংকের হিসাবনিকাশ করা নিয়ে তাদের সমর্থন ক্রমেই ভাটা পড়তে শুরু করেছে। মুখে তারা হেফাজতে ইসলামকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করলেও ভেতরে তারা অসন্তুষ্ট। হেফাজতে ইসলাম আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে গেলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ভোট নষ্ট হবে। ভোটের অঙ্কের হিসাবে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হেফাজতের লংমার্চ করে গণজমায়েতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ হেফাজতের লংমার্চ ও গণজমাতের অনুষ্ঠানের প্রতি নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ করে গণজমায়েত অনুষ্ঠানের কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকের ওপর কার কী প্রভাব পড়তে পারে সেই ব্যাপারে জরিপ প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্য বের হয়ে এসেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম এখন ১৩ দফা দাবি আদায়ের ব্যাপারে আন্দোলন করে যেতে হতে পারে। উগ্র মৌলবাদী ধর্মের উম্মাদনায় আন্দোলন করে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনোভাব চাঙ্গা করে তুলবে তারা। তাদের ১৩ দফা দাবি আদায়ের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই তাদের দাবি যে বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয় তা যুক্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির একটি ও বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। এই অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে যেতে হবে। যেই বিশেষ মহল থেকে হেফাজতে ইসলামকে ১৩ দফা দাবি দিয়ে মাঠে নামিয়েছে তারাই জাতীয় সংসদের নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কৌশল গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।
সূত্র জানান, হঠাৎ করেই বোমা ফাটানোর মতো আওয়াজ করে ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নিয়ে আসা হয়েছে হেফাজতে ইসলামকে। চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি গত মার্চ মাসে প্রথম যেদিন চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে তখন তাদের নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন যে, তাদের চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোন স্থানে শাখা কমিটি নেই। শুধু তাই নয়, শাহবাগের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে যে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপন করা হয় তার মোড় ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেয় হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির আন্দোলনের জন্য মাঠে নামার কৌশলের কাছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি ধামাচাপা পড়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবি আড়াল হয়ে গিয়ে সামনে চলে আসে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি। এই ঘটনাগুলো হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে কৌশলে করিয়েছে যুদ্ধাপরাধীর সহযোগী জামায়াত-শিবির।
সূত্র জানান, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীর দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলনের প্রতি প্রথমে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে বিএনপি। বিএনপিকে চাপে রাখতেই জামায়াত কৌশলে মাঠে নামিয়েছে হেফাজতে ইসলামকে। হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামানোর পর তারা বড় ধরনের শো-ডাউন করতে পারায় তড়িঘড়ি করে হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন দেয় বিএনপি। জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দেয় তারা। আর জাতীয় পার্টি কৌশলগত কারণে সমর্থন জানিয়েছে হেফাজতে ইসলামকে। কিন্তু বিএনপি ও জাতীয় পার্টির যে এতে ক্ষতি হবে তা তারা প্রথমে বুঝে উঠতে না পারলেও এখন তারা অনুধাবন করতে শুরু করেছে। হেফাজতের নির্বাচনে নামার খবর পেয়ে ভোটের হিসাবনিকাশ করতে শুরু করেছে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টিও।
গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি নিয়ে আগামী নির্বাচনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলে ভোট ব্যাংক নষ্ট হবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির। এতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এ জন্য হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ করে গণজমায়েত অনুষ্ঠানের কর্মসূচীতে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করে। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের নেতাদের দুই নৌকায় পা দেয়ার মতো সমালোচনার সম্মুখীন হয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এখন হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হেফাজতে ইসলামের গণজমায়েত অনুষ্ঠানকে উদ্দেশে করে বলেছেন, তারা বিড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে চলে গেছে। আর হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ উত্তেজিত হয়ে বলেছেন, আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীতে কে বিড়াল আর কে বাঘ তা বুঝতে পারবে আওয়ামী লীগ। দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের দেশ অচল করে দেয়ার জবাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হেফাজতে ইসলামকেই অচল করে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামকে তাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচনে যেতে হবে। নতুবা তাদের দাবি অন্য কোন রাজনৈতিক দল বাস্তবায়ন করবে কেন? হেফাজতে ইসলামের অঙ্গীকার বা এজেন্ড অন্য কোন রাজনৈতিক দল বাস্তবায়ন করতে যাবে কেন এই প্রশ্ন করা হতেই পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ থেকে শুরু করে লংমার্চ, গণজমায়েত অনুষ্ঠান, আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীসহ সব কিছুরই হিসাবনিকাশ কষার জন্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয় বলে জানিয়ে দেয়ার পর তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আন্দোলন করতে পারে। নির্বাচন চলে এলে তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচনে যেতেই হবে। নতুবা হেফাজতে ইসলামকে এই ব্যাপারে মারাত্মক বিতর্কের সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে হেফাজতে ইসলাম এককভাবে নির্বাচন করবে নাকি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাবে সেটা নিশ্চিত করে বলার সময়ে এখনও আসেনি। আর এ জন্য এখন হেফাজতে ইসলামের ভোট ব্যাংক আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কার পক্ষে যায় তার হিসাবনিকাশ কষা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন