শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতকে ঢাকায় রেখে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিল বিএনপি

সৈয়দ আশরাফের তথ্য ফাঁস
জনকণ্ঠ, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপির হরতাল কর্মসূচীকে ‘বাঁকা পথ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঁকা পথ বাদ দিন, সোজা পথে আসুন। অতীতেও আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তবে আলাপ-আলোচনার মাঝে হেফাজতের কোন স্থান নেই। জনগণকে হেফাজতের ভয় দেখিয়েও লাভ নেই। সমাধানের পথে না এসে হরতালের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-, অযথা ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি দুঃখজনক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনাসভায় হরতাল আইন করে বন্ধ করার বিষয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, এটা রাজনৈতিক বিষয়। আর রাজনৈতিক বিষয় আদালতে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। জাজেরা (বিচারকরা) কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নন। তাঁরাই যে গণতন্ত্রের জন্য আস্থাকবচ, এটা ভাবা ঠিক না। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে এ চিত্র খুব স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা কমিটি এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, সাবেক আইন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, নারী নেত্রী রোকেয়া কবির প্রমুখ।
সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট শুধু আলোচনার মাধ্যমেই নিরসন করা সম্ভব। আলোচনা ছাড়া কখনও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব নয়। কিন্তু বিএনপি আলোচনায় আসতে চায় না। অথচ আলোচনায় বসলে একটা সাংবিধানিক পথ বেরিয়ে আসবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল বিষয়ে আদালতের রায়ের পরও আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আলোচনা হয় আস্তে আস্তে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় দফা শেষে হয় মূল আলোচনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে আগেও আলোচনা হয়েছে, এবারও হবে। তবে আলাপ-আলোচনার মাঝে হেফাজতের কোন স্থান নেই। জনগণকে হেফাজতের ভয় দেখিয়েও লাভ নেই। এই দেশের জনগণ পাকিস্তানের এক লাখ সশস্ত্র সেনাবাহিনী, দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামসদেরও ভয় পায়নি। আর ‘৪০ হাজার’ হেফাজতের সদস্যকে জনগণ ভয় পাবে না। তিনি বলেন, হেফাজতের লংমার্চ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। একটা পত্রিকা লিখেছে, দুই লাখ লোক হবে। এগুলো চোখের আইডিয়া। আমরা সায়েন্টিফিক পদ্ধতিতে হিসেব করেছি ৪০ হাজার লোক হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামিকে ঢাকায় রেখে চারদিনে বিএনপি সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের এই মুখপাত্র বলেন, বিএনপি এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি করছে না। তারা হেফাজতের ১৩ দফা দাবিতে সমর্থন দিয়েছে। হেফাজতকে ঢাকায় আনতে এবং ঢাকায় রাখতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বের হয়েছে। তাদের ঢাকায় রাখার জন্য বিএনপি চার দিনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তাদের অফিসে বাবুর্চি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। চাল-ডাল, তেল, ঘি, গরু-ছাগল, ডেক-ডেকচির ব্যবস্থাও ছিল। তিনি বলেন, হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় তারা লেজ গুটিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে। বিএনপি কোটি কোটি টাকা দিয়েও তাদের ঢাকায় রাখতে পারেনি। বিএনপি ভেবেছিল চার দিনেই তারা সরকার পতন ঘটিয়ে ফেলবে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমাদের শক্তি আছে। আওয়ামী লীগ সংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। কাজেই ভয়ের কোন কারণ নেই। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারব। আওয়ামী লীগ অতি প্রাচীন দল। তার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজস্ব ধারায় সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে, সফলও হচ্ছে। ভবিষ্যতেও সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, জনগণ আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার দেখে গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। তাই জনগণের দাবি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচারের একটি যৌক্তিক সমাপ্তি ঘটবে। এখানে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ বিচার বন্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। আদালতের রায়েরও বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হবে।
আবেদ খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিতে একটা যুদ্ধে নেমেছে। আওয়ামী লীগ না থাকলে এদেশ আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ হবে।
একে আজাদ প্রশ্ন রেখে বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের গণতন্ত্র? মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন। আগামী নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে-নাকি দলীয় সরকারের অধীনে হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ঠিক করে বিরোধী দলকে চিঠি দিন।
নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, আওয়ামী লীগের লড়াই কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ১৪০০ বছর ধরে আল্লাহ ইসলামকে হেফাজত করছেন। এখন যারা ইসলামের কথা বলে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে তাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে হেফাজত করতে হবে।
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, পুলিশকে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়ার ভিডিও-ফুটেজ থাকার পরও শাস্তি দিতে না পারাটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। জনগণের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা অগণতান্ত্রিক, অপরাধ ও অসাংবিধানিক। হরতালবিরোধী আইন করা প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন