শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

হবিগঞ্জ শহরে জামায়াত শিবিরের উস্কানিতে সুন্নী-তবলীগ সংঘর্ষ

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ তবলীগ জামাতপন্থীদের আধিপত্য বিস্তার ও মসজিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং জামায়াত-শিবির সমর্থকদের কৌশলগত উস্কানিকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে হবিগঞ্জ শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় সুন্নী ও তবলীগ জামাতের লোকজনের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত হয়েছে দেড় শতাধিক লোক। এদিকে ঘটনার পর থেকে শহরজুড়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নতুন করে সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমঝোতা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, হবিগঞ্জ শহরের বাণিজ্যিক এলাকার সওদাগর জামে মসজিদে পুরান মুন্সেফ এলাকার বাসিন্দা জনৈক মাহমুদ, শ্যামলী এলাকার সফিউল আলম খান ও আজমিরীগঞ্জের রুহিবুরসহ আরও কয়েক যুবকের নেতৃত্বে গত বুধবার বাদ আছর তবলীগ জামাত অনুসারী মুসল্লি সংঘবদ্ধভাবে প্রবেশ করেন। পরে তারা বয়ান করতে চাইলে সুন্নী জামাতের লোকজন তা না করার অনুরোধ জানান। তখন এ নিয়ে উভয় পক্ষাবলম্বনকারী মুসল্লিদের মাঝে বাক-বিত-াসহ মৃদু উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও তবলীগ জামাতের লোকজন মসজিদ এলাকা ত্যাগ করেন। এদিকে এশার নামাজের পর সংশ্লিষ্ট মসজিদে সুন্নী সংগ্রাম পরিষদ এক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এই মিলাদ শুরুর খবর পেয়ে দলে দলে মসজিদে ছুটে আসে তবলীগ জামাতের লোকজন। একপর্যায়ে তারা মসজিদের বারান্দায় শুরু করে বয়ান। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজনের মাঝে দেখা দেয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে সুন্নী জামাতের অনুসারী মুসল্লিরা তবলীগ জামাতের লোকজনকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় সদ্য ফেরত সৌদি প্রবাসী হাজী সফিক মিয়াকে (৩৫) রাস্তায় ফেলে মারধর করে। তার কিছুক্ষণ পর তবলীগ জামাতের সমর্থক শত শত সশস্ত্র লোক অন্যত্র জমায়েত হয়ে রাত সোয়া ৯টার দিকে সওদাগর মসজিদ দখলের জন্য শহরে প্রবেশ করার পাশাপাশি মসজিদের সন্নিকটে চলে আসে। এ খবর আগেই পেয়ে মসজিদ রক্ষার জন্য মাইকিং করে অবস্থান নেয়া সুন্নী জামাতপন্থী শত শত মুসল্লি, ছাত্র-যুবকসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুরু হয় তবলীগ সমর্থকদের ভয়াবহ সংঘর্ষ। এতে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সুন্নী সমর্থক মুসল্লিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে দেখা যায় এবং যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ও হরতালের পক্ষে সেøাগান দিতে দেখা যায়। এ সময় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্য ধর্মাবলম্বীভুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ও রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ে।
এ সময় পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল আমীনের নির্দেশে ও এডিশনাল পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদের সার্বিক তত্বাবধানে সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সদর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে লাটিচার্জ, ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং পরে অন্তত ৬৭ রাউন্ড শট গানের গুলি ছোড়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তবলীগপন্থীরা পিছু হটলে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ ও সুন্নী জামাতের শত শত বিক্ষুব্ধ লোক। এ সময় উল্টো খবর আসে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বিভ্রান্তিমূলক গুজবে উত্তেজিত হয়ে জেলার বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা থেকে শত শত মানুষ তবলীগের পক্ষে গাড়িযোগে হবিগঞ্জ শহরের দিকে আসছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সওদাগর জামে মসজিদ এলাকায় নতুন করে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। এ সময় হবিগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আবু জাহিরের হস্তক্ষেপ কামনা করে সাধারণ মুসল্লিসহ এলাকাবাসী। ফলে শহরের শান্তি রক্ষায় এমপি তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন