মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

'মদিনা সনদে দেশ চলবে' বক্তব্য নিয়ে নানা বক্তব্য

কালের কণ্ঠ
মদিনা সনদে দেশ চলবে_প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। দেশে একটি সংবিধানও আছে। দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা এই সংবিধান অনুযায়ী। তা সত্ত্বেও দেশ কেন মদিনা সনদে চলবে_এ প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, মদিনা সনদে মুসলমানদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন। অন্যরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামকে সামলানোর জন্য তিনি এ কথা বলেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, 'দেশ অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী চলবে। মদিনা সনদে দেশ পরিচালনা করা কোনো সমাধান নয়। তবে মদিনা সনদে মুসলমানদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলা হয়েছে। আমার ধারণা, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মদিনা সনদের কথা উল্লেখ করে এটিই বোঝাতে চেয়েছেন।' গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আকবর আলি খান বলেন, 'মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে_প্রধানমন্ত্রী এ কথাটি যদি রূপক অর্থে বলে থাকেন, তাহলে এ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তিনি এ কথা বলে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। মদিনা সনদে অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে। কাজেই এই সনদ মুসলমানদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়।'
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী কি মদিনা সনদ ভালোভাবে জানেন? আমার তো মনে হয়, তিনি নিজেই জানেন না। না জেনেই একটা কথা বলে দিয়েছেন। আমরা কিংবা সাধারণ মানুষ কতজনে মদিনা সনদ সম্পর্কে জানি?'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে একটি সংবিধান আছে। সবাই জানে, দেশ চলবে আমাদের নিজস্ব সংবিধানের আওতায়। এটাই আমাদের বাস্তবতা। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের সংসদ আর সংবিধানের সঙ্গে পরস্পরবিরোধী। ধর্মের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা উচিত।'
রফিকুল হক বলেন, 'আমার মনে হয়, কেবল হেফাজতে ইসলামকে সামলানোর জন্য এটা তিনি বলেছেন। হেফাজতে ইসলামের ধর্মীয় অবস্থানকে ফেবার দেখানোর কৌশল নিয়েছেন মাত্র। কারণ দেশ পরিচালনায় আমাদের সংবিধানের ওপরে কেউ নয়। তাই দেশ চলবে সংবিধানের আওতায়। সস্তা ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট দিয়ে এখন আর মানুষকে বোঝানো যাবে না। আমি তো বলব, এটা পিওরলি পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি। প্রধানমন্ত্রীই বলুন আর বিরোধীদলীয় নেতাই বলুন, মানুষের সঙ্গে এটা করা ঠিক নয়। মানুষ কোনটা মানবে, কোনটা মানবে না, তা মানুষই ভালো বুঝবে। সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের সময়ই মানুষ ঠিক করবে তারা মদিনা সনদ চায়, না আমাদের সংবিধান চায়।'
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মদিনা সনদে বলা আছে, যার যার ধর্ম সে পালন করবে। মদিনা সনদে নারী-পুরুষের একসঙ্গে যুদ্ধ করার কথা আছে। এখানে ধর্মবিদ্বেষীদের কোনো স্থান নেই। কারণ আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী নয়, আওয়ামী লীগ শান্তির ধর্মে বিশ্বাস করে।' তিনি আরো বলেন, ইসলাম শান্তির ও মানবসেবার ধর্ম। শেখ হাসিনার এ বক্তব্যে আর কোনো কৌশল নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্য কাজি জাফর উল্যাহ বলেন, 'যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এটা মদিনা সনদেও বলা আছে, আওয়ামী লীগও সে স্পিরিটে বিশ্বাস করে। কিন্তু মৌলবাদীরা হঠাৎ করে নানা কারণে ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি করে। রাসুল (সা.) যা বলে গেছেন, আমরা সে নীতিতে বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথভাবে বলেছেন, মদিনা সনদেই এ দেশ চলবে।'
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। যেটা আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মদিনা সনদ ও বিদায় হজের ভাষণেও বলে গেছেন। ঠিক সেভাবেই এ দেশ চলবে।' তিনি আরো বলেন, 'যেকোনো ধর্ম অবমাননা বরদাস্ত করব না।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন