মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স নয়

আবদুল মান্নান
বিএনপি-জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর অফিস হতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের ভয়ে গত ডিসেম্বর মাস হতে তাঁর দফতরকেই বাড়ি বানিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, গণমাধ্যম আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে তিনি দেশে যে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক খেলা শুরু করেছেন, বাংলাদেশ কেন যে কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশেই তিনি আইনের সম্মুখীন হতে বাধ্য। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে পেশাদার সাংবাদিক মহলের বৃহত্তর অংশটি হাঁফছেড়ে বাঁচলেও সরকারের ওপর ভীষণভাবে চটেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী, জামায়াত-হেফাজত আর বিভিন্ন মৌলবাদী, ধর্মান্ধ ও চরম প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী এবং একশ্রেণীর মধ্যরাতের টকশো অংশগ্রহণকারীরা। বেগম জিয়া মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারকে সরকারের বাকশালী চরিত্রের বহির্প্রকাশ আবিষ্কার করেছেন। বিএনপি’র নব্য পরামর্শদাতা কবি ফরহাদ মজহার মন্তব্য করেছেন, সরকারের ওপর পাকিস্তানী ভূত চেপেছে এবং ঘোষণা করেছেন, তিনি যুদ্ধ করে এই ভূত তাড়াবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য টকশো বিশারদ মন্তব্য করেছেন মাহমুদুরের মতো একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে সরকার চরম অন্যায় করেছে। হেফাজত পার্টি মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এটা এখন পরিষ্কার সকলের অলক্ষ্যে হেফাজত মাহমুদুর রহমানদের সহায়তায় বিদেশী অর্থে পুষ্ট হয়ে এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের সংবাদটি শুক্রবার বিভিন্ন পত্রিকায় নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন পত্রিকায় খবরটিকে শুধু খবর হিসেবে ছেপেছে। কোন কোনটিতে এক ধরনের আহাজারি ছিল। দৈনিক আমাদের সময় হেডিং করেছে ব্লগার বা মাহমুদুর রহমান কারো গ্রেফতারই জরুরী ছিল না। তবে সবচেয়ে জুৎসই হেডিংটা দিয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠ। তারা লিখেছে ‘মাহমুদুর রহমান অবশেষে গ্রেফতার।’ অর্থাৎ মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারটা প্রত্যাশিত ছিল।
মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নেই । পরিচয় গণমাধ্যমের বদৌলতে যখন তিনি বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথমে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও পরে বেগম জিয়ার জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন । বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে এই আশ্বাস দিলেন যে, বাংলাদেশ টাটাকে এদেশে ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের চেয়ে কম মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করবে। এ নিয়ে চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। পরে মাহমুদুর রহমান তার সিদ্ধান্ত হতে পিছিয়ে আসেন। সিপিডি ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে বিনিয়োগ বোর্ডের কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাতে মাহমুদুর রহমান ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ড. রেহমান সোবহান, ড. দেবপ্রিয়, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহি, ড. সাইদুজ্জামান, লায়লা কবির মতো সিপিডি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে সংবাদপত্রের শিরোনাম হন। তিনি ড. দেবপ্রিয় সম্পর্কে এমনও মন্তব্য করেন যে তার এ দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। তারপর তার দেশ কাঁপানো কীর্তি ছিল উত্তরা ষড়যন্ত্র, যখন তিনি ২০০৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে ২৪ নবেম্বর অনেক আমলা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে উত্তরাস্থ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। গণমাধ্যম পুরো বিষয়টি টের পেয়ে সেই রাতে সেই কাসিমবাজার কুঠিতে হানা দিয়ে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে এক সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ভ-ুল করে দেয় । ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মাহমুদুর রহমান আর শফিক রেহমান বিএনপি’র নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে তারা দু’জনেই যখনই টিভিতে বিএনপি’র বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন তাদের বিরক্তিকর বাচন ভঙ্গি, খোঁড়া যুক্তি আর কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য শুধু দর্শক শ্রোতাদের বিরক্তই করেনি তারা যখনই টিভি পর্দার সামনে এসেছেন বিএনপি নিশ্চিতভাবে কয়েক হাজার ভোট হারিয়েছে।
দৈনিক আমার দেশ বিএনপি’র মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হলেও শুরুতে তার এক ধরনের পেশাদার মান বজায় ছিল; কারণ বিভিন্ন সময়ে সেটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন দু’জন পেশাদার সাংবাদিকÑআতাউস সামাদ ও আমানুল্লাহ কবির। সাংবাদিকতা পেশাটিকে একটি অত্যন্ত মহত ও দায়িত্বশীল পেশা হিসেবে মনে করা হয়। জাতীয় সংসদ, বিচারালয় ও নির্বাহীর পরে স্বাধীন গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হয়। এই চারটি স্তম্ভ সঠিকভাবে কাজ করলে কোন দেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয় না। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে এই সবের কোনটিই সঠিকভাবে কাজ করে না বলে সেখানে গণতন্ত্র এখনো সোনার হরিণ।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি সোনালী অতীত ছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে আইউববিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক সাহসী ও ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। এই দেশের সংবাদপত্র জগৎকে মওলানা আকরম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), জহুর হোসেন, আবদুস সালাম, ওবায়দুল হক, আহমেদুল কবির, শামসুর রাহমান, সন্তোষ গুপ্ত, কে জি মুস্তাফা, বজলুর রহমান, ওয়াহিদুল হক প্রমুখ প্রতিথযশা সাংবাদিক-সম্পাদক আলোকিত করেছেন। তাঁদের পথ ধরেই পরবর্তীকালে আরো অনেক পেশাদার সাংবাদিক উঠে এসেছেন এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মানকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সেই সব অর্জনকে ম্লান করে দেন মাহমুদুর রহমানের মতো একজন বাইচান্স সম্পাদক বা সাংবাদিকরা যাঁরা সাংবাদিকতা পেশার ন্যূনতম নীতিমালা মানতেও নারাজ অথবা অক্ষম।
দৈনিক আমার দেশ যেহেতু বিএনপি’র মুখপত্র হিসেবেই যাত্রা শুরু করেছিল সেহেতু তার একটা সরকারবিরোধী ভূমিকা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আতাউস সামাদ বা আমানুল্লাহ কবির যতদিন এই পত্রিকাটির দায়িত্বে ছিলেন পত্রিকাটির সরকারবিরোধী ভূমিকাও একটি নীতির মধ্যে পরিচালিত হতো। যখন হতে মাহমুদুর রহমান নিজে তাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন তখন হতে সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল। বাজারে তার বিরুদ্ধে একটা জোর অভিযোগ আছে যে, তিনি পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর নির্দেশনা ও বিরাট অঙ্কের অর্থ দ্বারা পরিচালিত হন। এই কাজে তিনি একা নন, আরও ক’জন ব্যবসায়ী, সাবেক সামরিক বেসামরিক আমলা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও কিছু সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজনও আছে। তারা নিয়মিত গুলশান ও এয়ারপোর্ট রোডের কোন কোন তারকা খচিত হোটেল অথবা কারও কারও ব্যবসায়িক দফতর বা নিজস্ব বাসভবনে মিলিত হন। এটি এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে বাংলাদেশে বর্তমানে আইএসআই ওভারটাইম কাজ করছে যাতে মহাজোট সরকার পদে পদে বিপদে পড়ে, সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হয় এবং আগামী নির্বাচনে যেকোন উপায়ে হোক বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় বসানো যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে এদেশে ঘাঁটি গেঁড়ে তাদের অনেক কাজ কর্ম চালাতে অসুবিধা। সরকারের কোন কোন অদূরদর্শী কার্জকলাপও তাদের অনেক সময় সহায়তা করে।
মাহমুদুর রহমান তার প্রথম নীতিবিরোধী কাজটি শুরু করেন যখন তিনি তার পত্রিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে ব্রাসেল্সে অবস্থানরত আর একজন আইনবিদের স্কাইপে কথোপকথনের টেইপ ছাপানো শুরু করে। এর মূল্য উদ্দেশ্য পুরো বিচার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। দৈনিক আমার দেশের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ভূমিকা আরম্ভ হয় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর হতেই। বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পশিক্ষিত ধর্মভীরু মানুষের দেশে ধর্মকে পুঁজি করে ফায়দা লোটা খুবই সহজ এবং সেই কাজটিই মাহমুদুর রহমান তাঁর পত্রিকাকে ব্যবহার করে করেছেন। প্রথমে তিনি শাহবাগ চত্বরে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। তারপর সেখানে তিনি নাস্তিক আবিষ্কার করেছেন। তারপর যে ন্যক্কারজনক এবং ভয়াবহ কাজটি তিনি করেছেন তা হচ্ছে ব্লগারদের দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার মতো অনেক অসত্য বানোয়াট বক্তব্য জন্ম দিয়েছেন যা শাহবাগে চত্বরের ব্লগারদের ছিল না বলে তারা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন। তারপরও মাহমুদুর রহমান এই অসত্য ব্লগগুলো তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করেছেন। যেই কাজটি যতেœর সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র নয়া দিগন্ত ও সংগ্রামও করেছে। এই সব অপকর্মের ফলে আসল ব্লগাররা বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন এবং একজন ব্লগার কিছু উন্মাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। ব্লগ বা ইন্টারনেট সম্পর্কে যাঁরা খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা জানেন যে একজনের নামে একটি এ্যাকাউন্ট খুলে যে কেউ সেখানে ব্লগিং করতে বা মন্তব্য লিখতে পারে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও ফেসবুকে একটি এ্যাকাউন্ট ছিল। দৈনিক আমার দেশ ও বাকি দুটি পত্রিকা কী রকম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে তার দুটি উদাহরণ। তুরস্কের একটি উৎসবের ছবিকে এই পত্রিকাগুলোতে এই শিরোনামে ছাপা হলো যে গোলাম আযমের বিচারের প্রতিবাদে তুরস্কে লাখ লাখ মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। প্রতিবছর পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের সময় কাবা শরীফের ইমাম সাহেবরা গিলাফ ধরে একটা ফটো সেশন করেন। গত অক্টোবর মাসে তোলা এমন একটি ছবিকে দৈনিক আমার দেশ ও সংগ্রাম প্রকাশ করল এই বলেÑকাবা শরীফের ইমামরা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির প্রতিবাদে মিছিল করছেন। পবিত্র কাবা শরীফকে নিয়ে জালিয়াতিরও একটা সীমা আছে।
দৈনিক আমার দেশ জালিয়াতিতে তার বাকি দুই সতীর্থকে পিছনে ফেলে দিল যখন শাহবাগ চত্বর নাস্তিকে ভরে গেছে, তারা নিয়মিত আল্লাহ-রসুলকে নিয়ে ব্যঙ্গক্তি করছে ইত্যাদি অসত্য আবর্জনা নিয়মিত প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে সারাদেশের ধর্মপরায়ণ সাধরণ মানুষকে উস্কানি দেয়া শুরু করল। পুনর্জন্ম লাভ করল মৃত প্রায় হেফাজত পার্টি। অভিযোগ আছে এই সম্পূর্ণ কর্মকা-ে আইএসআই প্রায় একশত কোটি টাকা খরচ করে এবং পুরো হেফাজতি লংমার্চ পরিচালনায় মাহমুদুর রহমানসহ জামায়াতের একাধিক নেতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের নিজেদের ভিতর চালাচালি হওয়া অনেক কথোপকথনই এখন ইউটিউবে পাওয়া যায়। এই সব নাজায়েজ কর্মকা-ের ফলে সারাদেশে শুরু হলো এক ভয়াবহ অস্থিরতা, যার ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তাদের মন্দিরে হামলা, মসজিদে আগুন, পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনারে অগ্নি সংযোগ, নানা ধরনের নাশকতা মূলক কর্মকা-, সন্ত্রাস, আটজন পুলিশসহ প্রায় একশতের বেশি মানুষ হত্যা। সর্বশেষ তিনটি নারকীয় হত্যাকা- ঘটে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। এই সবের দায়িত্ব তো কিছুতেই মাহমুদুর রহমান ও তাঁর ইন্ধনদাতারা এড়াতে পারেন না । ১৯৯০ সালে ভারতের বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে দৈনিক ইনকিলাব এমন একটি ভূমিকা পালন করেছিল; যার ফলে বাংলাদেশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অদ্ভুত কা- হচ্ছে, সেই ইনকিলাব এতদিন মহাজোট সরকারের লাগামহীন পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে আর এখন সেটি আবার তার পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে । আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করল- ঐতিহাসিকভাবেই তারা শত্রু-মিত্র চিনতে সব সময় ভুল করেছে।
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের পর অনেকেই বেশ মাতম শুরু করেছেন। তাদের মতে, সরকার মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। স্বাধীনতা কখনও দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স হতে পারে না যা দৈনিক আমার দেশ আর তার সম্পাদক এতদিন ধরে করে এসেছে । এই দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সরকার যদি আরও আগে ব্যবস্থা নিত তাহলে দেশের ভিতর সংঘটিত অনেক দুঃখজনক ঘটনা ও জানমালের ক্ষতি রোধ করা যেত। কিসের আশায় সরকার এতদিন অপেক্ষা করেছে তা অনেকের কাছে এক রহস্যময় বিস্ময়। এই সব বিষয়ে কোন সরকারেরই আস্কারা দেয়া উচিত নয় তাতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। দুর্বল সরকারকে সকলে পদাঘাত করতে পছন্দ করে। সরকার শক্ত থাকলে জামায়াত বলি আর হেফাজত, কোন ভয়াবহ সন্ত্রাসী দল বা গোষ্ঠীই দেশের ভিতরে টিকে থাকতে পারত না। দেরিতে হলেও সরকার দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। দেশের মানুষ আশা করে নিজের দলের হোক বা অন্য দলের বা যে কোন পেশার, সকল দুর্বৃত্তকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে এবং রাষ্ট্রের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলবে। ফরহাদ মজহার বেগম জিয়ার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে ইন্টারনেটে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। বেগম জিয়া সিঙ্গাপুর হতে ফেরার পর তারেক জিয়া সৌদি আরব এসেছেন। ওমরাহ পালন শেষে দলীয় চানক্যদের সঙ্গে তিনি সেখানে বৈঠক করেছেন। এরপর তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল বা শ্লথ করার নানা ফন্দি ফিকির শুরু হয়েছে। আপত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রের সব চাকা দ্রুত সচল হচ্ছে। সরকার যদি চোখকান খোলা না রাখে তাহলে বিপদ অনিবার্য।
সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক। এপ্রিল ১৩, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন