শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

গণজাগরণ মঞ্চের সংবাদ বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ

সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ,
শুভ সন্ধ্যা। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও দেশবিরোধী ও স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলাম ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র শিবিরকে আইন করে নিষিদ্ধের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলেছে সারা দেশব্যাপী। ইতোমধ্যেই এ আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরের সবখানে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে। এ আন্দোলনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উদ্ধত হয়েছে বিভিন্ন মহল, নানা অপকৌশলের মাধ্যমে তারা আদতে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে। এসব মহলের পিছনে স্পষ্টতই হায়েনা দল জামায়াতে ইসলাম ও তাদের হিংস্র বর্বর বাহিনী ছাত্র শিবিরের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। তারা দেশজুড়ে নানা সহিংসতার মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।


তারপরও গণজাগরণ মঞ্চ ধ্রুব সত্যের মতো তার লক্ষ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ দৃপ্ত প্রত্যয়ের অখণ্ড অনুপ্রেরণা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী প্রতিটি মানুষ, বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিকে বুকে লালন করা বাংলার সাহসী জনগণ। তাই যখনই গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি নানা অপকৌশল চালিয়েছে, তখনই দেশব্যাপী সচেতন জনগণ তা প্রতিহত করেছেন। আগামী ছয় এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চ প্রজন্ম চত্বরে জনসভার ডাক দেয়। ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত এ কর্মসূচী ঘোষিত হয় গত ছাব্বিশে মার্চের মহান স্বাধীনতা দিবসের ‘মুক্তিযোদ্ধা-জনতা’ মহাসমাবেশ থেকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের কর্মসূচীকে লক্ষ্য করেই লং মার্চের ঘোষণা দেয় একটি মহল। আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একাত্তরে সকল বাঙালি যেমন একই শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিলো, তারই ধারাবাহিকতায়, আজও আমরা সেই যূথবদ্ধতার স্মারক দেখতে পেয়েছি। ইতোমধ্যেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সেক্টর কমান্ডারস’ ফোরামসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ২৩ টি সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আগামী পাঁচ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ছয় এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার অহিংস হরতাল ডেকেছেন। আমরা গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে তাঁদের সংহতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছি।

একই সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চ আগামীকাল, অর্থাৎ পাঁচ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ছয় এপ্রিল বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করছে।

আমরা সকল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই, আপনারা আমাদের অবরোধ কর্মসূচী সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করুন। আমরা সকল বাস মালিক-শ্রমিকগণের প্রতি, সকল রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের প্রতি, সকল লঞ্চঘাটের মালিক-শ্রমিকগণের প্রতি বিনীত আহবান জানাই, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীকে সফল করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসহযোগিতার মাধ্যমে, অহিংস থেকে আমাদের কর্মসূচী বাস্তবায়নে সহায়তা করুন। সারাদেশের সকল একাত্তরে আমরা সবাই একসাথে হয়ে যেমন পরাস্ত করেছিলাম পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীকে, আজও আমরা সকলে একসাথে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিকে সোচ্চার করার জন্য কাজ করবো। গণজাগরণ মঞ্চের মূলশক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সারা পৃথিবীর সকল বাঙালি। এই দুর্বার শক্তিই আমাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা।


আগামী ছয় এপ্রিল বিকাল চারটায় গণজাগরণ মঞ্চের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী প্রজন্ম চত্বরে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এই জনসভাকে সর্বাত্মক সফল করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান রইলো।

আমাদের সংগ্রাম যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির সংগ্রাম, আমাদের সংগ্রাম জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবির সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।



জয় বাংলা।

ডা. ইমরান এইচ সরকার
মুখপাত্র, গণজাগরণ মঞ্চ

২১ চৈত্র, ১৪১৯
৪ এপ্রিল, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন