শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

পিছন দিকে ‘এগিয়ে’ চলা!

অরুণাভ সরকার
সময় থেমে থাকে না। দেশও। আমাদের দেশও চলছে। তবে পিছন দিকে। সে কথাই বলা হয়েছে একটি সংবাদপত্রের এক শিরোনামে ‘উল্টো পায়ে হাঁটছে দেশ’ (৭ এপ্রিল, ২০১৩)।
অন্য একটি কাগজে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে (১০ এপ্রিল, ২০১৩)। অন্যত্র অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, দেশকে অতীতে ফিরিয়ে নিতেই এ দাবি (হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা) ১০ এপ্রিল, ২০১৩।
মোটকথা দেশ যে পিছিয়ে যাচ্ছে, তা সকলেই বলছেন। বলবেন। কিন্তু কেন?
সাধারণভাবে মনে করা হয়, বিএনপি-জামায়াত আর হেফাজত এর জন্য দায়ী। কিন্তু সরকারও এই দায়ভার থেকে মুক্ত নয়।
দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায় সরকারের। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ। কঠোর হাতে নৈরাজ্য দমন করতে পারছে না। ফলে অর্থনীতির চাকা প্রায় বন্ধ। বিঘ্ণ ঘটছে শিক্ষাদীক্ষায়। মানুষের নিরাপত্তা নেই। শান্তি নেই। নেই স্বস্তি। চিরশত্রু ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের প্রতিও নমনীয়তা দেখাচ্ছেন। ফলে সরকার জনসমর্থন হারাচ্ছে। দুর্বল হচ্ছে। এতটাই দুর্বল যে, হেফাজতের মতো ছোট গোষ্ঠীর কাছেও নতিস্বীকার করতে হচ্ছে। একটি পত্রিকা জানায় (১০ এপ্রিল, ২০১৩), হেফাজতে ইসলামের কাছে সরকার একরকম নতিস্বীকার করেছে। আগামী নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ মেলাতেই সরকার এই জঙ্গী সংগঠনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই হিসাব ভুল। একেবারেই ভুল। গত নির্বাচনেও দেখা গিয়েছে জয় পরাজয় নির্ভর করে তরুণ সমাজের সমর্থনের ওপর, জঙ্গীদের সমর্থনের ওপর নয়।
এই মন্তব্য খণ্ডন করা যায় না।
আসলে সরকার এবং বিরোধী দল দুই পক্ষই চলছে দুটো ভুল ধারণার ভিত্তিতে।
বিরোধী দল ভাবছে, হরতাল দিলেই সরকারের পতন ঘটবে। দেশের কী ক্ষতি হবে, তারা তা ভাবছে না। ভাবছে না সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাও। হরতাল আসলে দুর্বলের অস্ত্র। শিশুদের যেমন কান্না। ব্যবহৃত হতে হতে এই অস্ত্র এখন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। কারণে-অকারণে হরতাল ডাকায় মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত হচ্ছে।
সরকারেরও এই ধারণা একেবারেই ভুল যে, বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার করলেই হরতাল বন্ধ হবে। এমন পদক্ষেপে কাজ হয়নি। হবারও নয়। এতে দুই পক্ষের বিদ্বেষ বাড়ে মাত্র। বাড়ে জনদুর্ভোগ।
এই দুর্ভোগ এড়াতে চাই দুই পক্ষের আলোচনা। দেশের গুণী ব্যক্তিরা এই পরামর্শ দিচ্ছেন। দিচ্ছেন বিদেশী কূটনীতিকরা।
সম্প্রতি তিক্ততা ভুলে দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দুই নেত্রীকে লেখা দুই চিঠিতে এই অনুরোধ জানান। চিঠি দুটো ৯ এপ্রিল (২০১৩) দুই নেত্রীর ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয়। আমরাও বলি, আলোচনায় বসতে হবে।
বিরোধী দলের বক্তব্য শুনতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। তাদের দাবির পেছনে যুক্তি থাকলে মেনে নিতে হবে তা। অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে দিতে হবে যুক্তি। নেব আর দেব এই মনোভাব থাকতে হবে দুই পক্ষেরই। কেউ কাউকে ছোট ভাবলে চলবে না।
সরকারকেও বললে চলবে না যে, আমরা শুধু যুক্তিই দেব, কোন দাবিই মেনে নেব না। বিরোধী দলকেও এই গোঁয়ার্তুমি ছাড়তে হবে যে, তাদের দাবি মেনে নিলেই আলোচনা। আলোচনার আগেই দাবি মেনে নেয়া! তা হলে আর আলোচনা কেন?
দেশের এই দুঃসময়ে আলোর আভাস দেখা গিয়েছে শাহবাগ চত্বরে। জাগরণ মঞ্চের তরুণরা ধর্ম নিরপেক্ষ। তাদের কেউ কেউ অবিশ্বাসীও হয়তো। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষী নয়। কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিও রাগ বা অনুরাগ নেই তাদের। তারা তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন অহিংস উপায়ে। সারাদেশ তাদেরকে সমর্থন করছে। আমরাও তাদেরকে স্বাগত জানাই। তারাই হয়ত পারবে এই দেশকে সম্মুখে এগিয়ে নিতে। তাদের জয় হোক।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক
arunsarkarbd@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন